প্রস্তুতি ম্যাচে ব্যাটিং বিপর্যয়

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডের মিডিয়া ম্যানেজার ফিলিপ স্পুনার খুবই বিব্রতবোধ করছিলেন। বারবার মুখেও বলছিলেন, ‘এটা খুবই বিব্রতকর...খুবই বিব্রতকর।’

তিন দিনের প্রস্তুতি ম্যাচ শুরু হয়ে গেছে। টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে গেছে বাংলাদেশ দল। অথচ ওয়ার্নার পার্কে নেই কোনো স্কোরার, চালু হয়নি স্কোরবোর্ডও! প্রেসবক্সে উপস্থিত থাকা স্পুনারকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হচ্ছিল, স্বগোতক্তির মতো শুধু বলেছেন, ‘খুবই বিব্রতকর...খুবই বিব্রতকর।’

স্পুনারকে অবশ্য খুব বেশি সময় বিব্রতবোধ নিয়ে থাকতে হয়নি। খেলা শুরুর এক ঘণ্টার মধ্যে চালু হয়েছে স্কোরবোর্ড। প্রেসবক্সের তিনতলায় স্কোরারও খুঁজে পাওয়া গেল। যদিও প্রথম দিনের চা বিরতির সময়ও তাঁরা ঠিকভাবে চিনে উঠতে পারছিলেন না বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের। মাহমুদউল্লাহকে বলছিলেন শুভাগত, শুভাগতকে মাহমুদউল্লাহ! তার প্রতিফলন, স্কোরবোর্ডেও একেকবার বাংলাদেশ দলের রান দেখা যাচ্ছিল একেক রকম। চা বিরতির সময় যেমন দেখাচ্ছিল ৬ উইকেটে ১৮৬। স্পুনার নিশ্চয়তা দিলেন, ‘এই রানটা ঠিক আছে।’ এর আগে ৬৭ রানে লাঞ্চ করতে যাওয়ার আগেই ব্যাটসম্যানদের খামখেয়ালিতে ৩ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। লাঞ্চের পরের সেশনে বিদায় নেন ইমরুল কায়েস, মাহমুদউল্লাহ আর শুভাগতও।

লাঞ্চের সময় বৃষ্টি নামায় লাঞ্চের পর খেলা শুরু হয়েছে নির্ধারিত সময়ের ২৫ মিনিট পর। হালকা বৃষ্টি। মাঠ, উইকেট কোথাও তার চিহ্নই থাকল না। এর মধ্যেও ভুল করে বসলেন ইমরুল। ৪৪ রান করেই কুইন্টন বোটসওয়াইনের হঠাৎ লাফিয়ে ওঠা বলে ক্যাচ তুলে দিলেন শর্ট স্কয়ার লেগের আকাশে। ৯২ রানে ইমরুলের বিদায়ের পর দলের ১৩৮ রানের সময় ড্রেসিংরুমে ফেরেন ৩৮ বলে নিজের প্রথম রান নেওয়া মাহমুদউল্লাহও। বাংলাদেশ দলের কম্পিউটার বিশ্লেষক নাসির আহমেদের হিসাবে তাঁর রান ২১ হলেও স্কোরাররা বলছিলেন ২৭। একইভাবে গোলমাল আছে শুভাগতের রানেও। নাসির আহমেদের হিসাবে সেটা ৫৭ হলেও স্কোরারদের হিসাবে ৪৮!

বিপর্যয়ের শুরু অবশ্য লাঞ্চের আগেই। দলের ২২ রানে বোটসওয়াইনের লেগ স্টাম্পের বাইরের বলে ব্যাট চালিয়ে ওপেনার শামসুর রহমান (১০) কট বিহাইন্ড। যদিও উইকেট ছাড়ার সময় শামসুর শরীরী ভাষায় বোঝাতে চাইলেন বলটা আসলে তাঁর প্যাডে লেগেছে। তামিম ইকবাল ৬৯ মিনিট উইকেটে থেকে ২০ রানের ইনিংসে বাউন্ডারি মারলেন তিনটা। ধৈর্যচ্যুতিও হয়ে গেল দ্রুতই। দলের রান যখন ৪৫, জেরিমা লুইসের আউটসুইংয়ে কাট করতে গিয়ে কট বিহাইন্ড। দলের ৬০ রানের সময় একই বোলারের বলে খোঁচা মারতে গিয়ে সেকেন্ড স্লিপে ক্যাচ দিয়েছেন মুমিনুল।

প্রস্তুতি ম্যাচ বলে দুদলেই খেলছেন ১৩ জন করে খেলোয়াড়। বাংলাদেশের ১৪ জনের দল থেকে বাইরে শুধু পেসার আল-আমিন। পেস বোলিং কোচ হিথ স্ট্রিক জানালেন, ‘টানা অনেক ম্যাচ খেলেছে আল-আমিন। সে জন্যই তাকে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে।’

সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস দলে শিবনারায়ণ চন্দরপল ছাড়াও অতিথি খেলোয়াড় আছেন মন্টসেরাট দ্বীপের বোটসওয়াইন। অবশ্য দলটা যে শেষ পর্যন্ত এক হয়ে খেলতে নেমেছে, সেটাই অনেক। প্রস্তুতি ম্যাচের জন্য সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস ১৩ জনের দল ঘোষণা করলেও আগের দিন বিকেলের অনুশীলনে চন্দরপল আর বোটসওয়াইনসহ এলেন মাত্র নয়জন! তাও একেকজন একেক পোশাকে। কারও গায়ে ছাইরঙা টি-শার্ট তো, কারও পরনে লাল গেঞ্জি। প্রায় একই দৃশ্য দেখা গেল কাল ম্যাচেও। সবার পরনেই সাদা পোশাক থাকলেও একেকজনেরটা একেক ডিজাইনের!

সে তুলনায় বাংলাদেশ দলের নতুন সাদা পোশাকটা দারুণ! তবে পোশাকেই যে পরিচয় নয়, তা তো দেখিয়ে দিল সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস দলই!