বহিষ্কারের পর মামলা!

পাঁচ খেলোয়াড়কে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দেওয়ার পর আরও কঠিন পথে হাঁটছে হকি ফেডারেশন। ওই পাঁচ খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে ফেডারেশন পল্টন থানায় গত রাতে মামলা করেছে।
এই মামলার কথা শুনে ফেডারেশনের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা করার হুমকি ছুড়েছে মোহামেডান। ক্লাবের ডাইরেক্টর ইনচার্জ লোকমান হোসেন ভূঁইয়ার কথায় পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হওয়ারই আভাস, ‘বহিষ্কারের মাধ্যমে খেলোয়াড়দের সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। মোহামেডানকে জড়িয়ে ফেডারেশন কর্মকর্তারা অনেক কথা বলেছেন। অবৈধ এই কমিটি কাউকে শাস্তি দেয় কীভাবে?’
মোহামেডানের সঙ্গে তাদের মিত্রদেরও একই প্রশ্ন। প্রশ্নটার অবতারণা গত সোমবার। সেদিন এশিয়া কাপের প্রস্তুতি নিতে থাকা খেলোয়াড়দের অনুশীলনে যেতে বাধা দেওয়া এবং পরে কোচ নাভিদ আলমকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ স্বীকার করেন খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতির সভাপতি রাসেল খান বাপ্পি। পরদিন মঙ্গলবার জাতীয় দলের সাবেক এই গোলরক্ষককে আজীবন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। খেলোয়াড়দের উসকানি দেওয়ার অভিযোগে খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আরিফুল হক প্রিন্স ১০ বছর, বর্তমান খেলোয়াড় আসাদুজ্জামান চন্দন, শামসুদ্দিন তুহিন ও আশিকুজ্জামান পাঁচ বছর নিষিদ্ধ হয়েছেন।
ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সভায় বসে ফেডারেশনের নির্বাহী কমিটি এসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে (ওই সভায় ফেডারেশন সভাপতি এয়ার মার্শাল ইনামুল বারী ছিলেন না)। জাতীয় দলের কোচকে লাঞ্ছিত করা অবশ্যই শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তবে এই শাস্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদও এসেছে। লিগ চ্যাম্পিয়ন মোহামেডানের পাশাপাশি বিবৃতি দিয়েছে মোহামেডানের নেতৃত্বে ১২টি দল—মোহামেডান, মেরিনার্স, বাংলাদেশ স্পোর্টিং, ওয়ান্ডারার্স, অ্যাজাক্স, ওয়ারী, ভিক্টোরিয়া, কম্বাইন্ড, উত্তরা ক্লাব, রক্তিম সংঘ, মুক্ত বিহঙ্গ ও দিলকুশা।
মোহামেডানের দেওয়া বিবৃতির ভাষ্য, ‘হকি অঙ্গন থেকে কৌশলে মোহামেডানকে দূরে ঠেলে দেওয়ার জন্যই অবৈধ এই কমিটি ন্যক্কারজনক এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’ দুটি বিবৃতিতেই সই করেন লোকমান হোসেন ভূঁইয়া।
খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতির পক্ষে গতকাল সংগঠনের কোষাধ্যক্ষ শহিদুল্লাহ টিটু স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে পাঁচ খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যাপারে বিস্ময় প্রকাশ করে তাঁদের শাস্তি প্রত্যাহারের দাবি তোলা হয়।
অবস্থা যা, তাতে হকির পরিস্থিতি ভালো হওয়ার লক্ষণ কম। বরং আরও জটিল অবস্থায় চলে গেছে গোটা পরিস্থিতি। খেলোয়াড়দের অভিযোগ, তাঁদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়নি। এ ব্যাপারে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক খাজা রহমতউল্লাহ বক্তব্য, ‘জিবির সভায় (নির্বাহী কমিটি) তেমন সিদ্ধান্ত হয়নি।’ থানা পুলিশ করার মতো অপরাধ খেলোয়াড়েরা করেছেন কি না জানতে চাইলে খাজা রহমতউল্লাহ বলেন, ‘ওই দিন খেলোয়াড়েরা মাঠে ঢুকলে পা ভেঙে দেওয়া হবে বলে হুমকি দিয়েছে অভিযুক্তরা। ক্যাম্প বর্জন করে খেলোয়াড়দের বাড়ি যাওয়ার জন্য পাঁচ হাজার টাকা করে দেওয়া। তাই আইনি ব্যবস্থায় যেতে বাধ্য হয়েছে ফেডরেশন।’
মামলার ব্যাপারে ফেডারেশনের সহসভাপতি আবদুর রশিদ ব্যাখ্যা, ‘যা ঘটেছে সেটাই বলা হয়েছে মামলার এজাহারে। কোনো কিছু বাড়িয়ে বলা হয়নি। নিরাপত্তার জন্য মামলা করাটা দায়িত্ব মনে করেছে ফেডারেশন।’
তবে স্ট্রাইকার রাসেল মাহমুদ জিমিকে খুদে বার্তায় হুমকি দেওয়া আবাহনীর কর্মকর্তা শহিদুল্লাহ দোলনের বিরুদ্ধে গতকাল পর্যন্ত মামলা করেনি ফেডারেশন। জানা গেছে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করবে না ফেডারেশন। শহীদুল্লাহ পাঁচ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছেন, তবে মামলা না হওয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন খেলোয়াড়েরা।
মোহামেডানসহ ছয়টি ক্লাব ফেডারেশনের নির্বাচন বর্জন করার পর থেকেই হকিতে চলছে বিশৃঙ্খলা। মোহামেডান এখন ফেডারেশনের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা করলে পরিস্থিতি আরও জটিলই হবে। যেটির শুরু বেশ কিছুদিন আগেই। সময়মতো দলবদল না হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিলেন খেলোয়াড়েরা। তবে আশার কথা, এক দিন বন্ধ থাকার পরই খেলোয়াড়েরা যোগ দিয়েছেন এশিয়া কাপের অনুশীলনে।