মেয়েদের কাবাডিতে উৎসবের রেণু

দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়ুন ইয়ু-রিকে ধরে ফেললেন বাংলাদেশের মেয়েরা। কাল ইনচনে স্বাগতিকদের বিপক্ষে পুরো ম্যাচেই দাপটে খেলে ৩০-১৮ পয়েন্টে জিতেছে বাংলাদেশ  l এএফপি
দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়ুন ইয়ু-রিকে ধরে ফেললেন বাংলাদেশের মেয়েরা। কাল ইনচনে স্বাগতিকদের বিপক্ষে পুরো ম্যাচেই দাপটে খেলে ৩০-১৮ পয়েন্টে জিতেছে বাংলাদেশ l এএফপি

হাতে একটা কাগজ। তাতে চার-পাঁচটা পয়েন্ট লেখা। বাংলাদেশি সাংবাদিক পরিচয় পেয়েই স্টুয়ার্ট স্কট করতে লাগলেন একের পর এক প্রশ্ন—
কাবাডিতে যদি একটা দলের খেলোয়াড়েরা পর পর তিনবার প্রতিপক্ষের কোর্টে গিয়ে কোনো পয়েন্ট না নিয়েই ফিরে আসে, তাহলে কি প্রতিপক্ষ পয়েন্ট পাবে?
প্রতিপক্ষ কাউকে জাপটে ধরে রাখলে সে যদি কোনোমতে দুই কোর্টের বিভাজনরেখা স্পর্শ করে, তাহলে কী হবে?
প্রতিপক্ষের কোর্টে গিয়ে যদি কেউ দুজন খেলোয়াড়কে স্পর্শ করে ফিরে আসে, তার মানে কি তার দল দুই পয়েন্ট পাবে?
সংদো গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির জিমনেসিয়ামে একটু আগেই বাংলাদেশের মহিলা দল ৩০-১৮ পয়েন্টে হারিয়ে দিয়েছে স্বাগতিক দক্ষিণ কোরিয়ার মেয়েদের। এই জয় এশিয়ান গেমসে তাদের সেমিফাইনাল খেলার সম্ভাবনাটাকেই শুধু বাস্তবের কাছাকাছি নিয়ে যায়নি, সেমিফাইনালে পরাজিত দুই দলই ব্রোঞ্জ পাবে বলে অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে গেছে একটা পদকপ্রাপ্তিও। ভারতের মেয়েদের হারিয়ে আজ দক্ষিণ কোরিয়া কোনো অঘটন ঘটালেই কেবল ওই সম্ভাবনা শঙ্কায় পড়তে পারে।
গ্যালারিতে ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা, সাকিব আল হাসান, এনামুল হক (বিজয়) আর শামসুর রহমানের উপস্থিতি কাল মেয়েদের জয়ের মুহূর্তটিকে আরও রঙিন করে তুলল। বাতাসে উড়ে বেড়াল আনন্দের রেণু। ও রকম একটা সময়ে এশিয়া প্যাসিফিক ব্রডকাস্টিং ইউনিয়নের ধারাভাষ্যকার স্টুয়ার্ট স্কটের সঙ্গে কাবাডি নিয়ে কথা বলতে ভালোই লাগছিল।
নিউজিল্যান্ডের এই ভদ্রলোক এর আগে বাস্কেটবল, হ্যান্ডবল, আর্চারি, ফেন্সিংসহ এ রকম আরও অনেক খেলায় ধারাভাষ্য দিলেও কাবাডিতে ধারাভাষ্য দিচ্ছেন এই প্রথম। কিন্তু হোমওয়ার্ক করতে গিয়ে পড়ে গেলেন দ্বিধায়। এশিয়ান গেমস কাবাডির নিয়মকানুনের সঙ্গে ভারতের প্রো-কাবাডির নিয়ম কানুনে বেশ পার্থক্য নাকি তিনি খুঁজে পেয়েছেন। হাতের কাছে বাংলাদেশের সাংবাদিক পেয়ে সে কারণেই মিটিয়ে নিলেন কৌতূহলগুলো। বাংলাদেশের জাতীয় খেলাই যে কাবাডি! কিন্তু সেই জাতীয় খেলাতেই বাংলাদেশকে যোজন যোজন দূরে ফেলে এগিয়ে গেছে ভারত। স্টুয়ার্ট স্কটও বুঝে উঠতে পারেন না, জাতীয় খেলাতেও বাংলাদেশ কেন ভারতের সঙ্গে পারে না! কেন দিনে দিনে পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশের কাবাডি?
ভারত তো অনেক এগিয়ে যাওয়া দল। দক্ষিণ কোরিয়ার খেলোয়াড়েরাও এখন যে রকম সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে তাতে শারীরিক শক্তির কোনো খেলাতে তাদের বিপক্ষেও জেতার কথা নয় বাংলাদেশের কোনো দলের। এদিক দিয়ে প্রবল ব্যতিক্রম মহিলা কাবাডি দল। গত এশিয়াডের মতো এবারও দক্ষিণ কোরিয়াকে হারিয়ে তারা নিশ্চিত করে ফেলল পদক!

ইনচনের কাবাডি মাঠে বাংলাদেশের মেয়েদের উৎসাহ জোগাতে গ্যালারিতে হাজির মাশরাফি-সাকিবরা l প্রথম আলো
ইনচনের কাবাডি মাঠে বাংলাদেশের মেয়েদের উৎসাহ জোগাতে গ্যালারিতে হাজির মাশরাফি-সাকিবরা l প্রথম আলো

বাংলাদেশের মেয়েদের চেয়ে ম্যাচে কোরিয়ানরা শুধু বোনাস পয়েন্টের দিক দিয়েই এগিয়ে ছিল। দুই অর্ধে পেয়েছে মোট ১২টি বোনাস পয়েন্ট। বাংলাদেশ পায়নি একটিও। অন্য সব ক্ষেত্রেই ব্যাপারটা উল্টো—২টি ও ৪টি করে দুই অর্ধে বাংলাদেশের লোনা মোট ৬টি, দক্ষিণ কোরিয়ার একটিও নয়। আউট পয়েন্ট বাংলাদেশ পেয়েছে ২৩, দক্ষিণ কোরিয়া ৬। টেকনিক্যাল পয়েন্ট বাংলাদেশের ১টি, একটিও নয় স্বাগতিকদের। ম্যাচের প্রথমার্ধে বাংলাদেশ এগিয়ে ছিল ১৪-১১ পয়েন্টে। দ্বিতীয়ার্ধ শেষে সেই ব্যবধানই বেড়ে দাঁড়াল ৩০-১৮।
বৃষ্টির কারণে কাল অনুশীলন হয়নি ক্রিকেট দলের। এ সুযোগে গেমস ভিলেজে জিম করে বাংলাদেশ দলের চার ক্রিকেটার চলে এলেন মেয়েদের কাবাডি দেখতে। ম্যাচে বাংলাদেশের মেয়েদের পারফরম্যান্সে অভিভূত ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মাশরাফি, ‘কাবাডি খেলা আগেও দেখেছি, খেলেছিও। কিন্তু এই প্রথম স্টেডিয়ামে বসে দেখলাম। বাংলাদেশ জেতায় খুব ভালো লাগছে। তাদের অভিনন্দন জানাই। আশা করছি, ভবিষ্যতে সব ডিসিপ্লিনেই আমরা আরও বেশি ভালো করব।’ মাশরাফি পরে শারমিন-সোমাদের সঙ্গে গিয়েও কথা বলেছেন।
মহিলা কাবাডি দলের অধিনায়ক শাহনাজ পারভীন অবশ্য দাবি করলেন পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা পেলে কালকের ফলাফলটা হতে পারত আরও ভালো। বোনাস পয়েন্টেও পেছনে ফেলা যেত দক্ষিণ কোরিয়াকে, ‘মহিলা কমপ্লেক্সে কোনো জিমনেসিয়াম নেই। পাঁচ মাস অনুশীলন করে আমরা এক দিনও জিম করতে পারিনি। বোনাস পয়েন্টটা মূলত পায়ের শক্তির ওপর নির্ভর করে। আর পায়ের শক্তি বাড়ানোর জন্য সবার আগে প্রয়োজন জিম করা। এ জন্য যে খুব বড় জিম লাগবে, তা নয়। ছোটখাটো একটা জিম হলেও চলে।’
শাহনাজ পারভীনের কথাটা শুনলে স্টুয়ার্ট স্কটও নিশ্চয়ই বুঝতেন, কেন পিছিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের কাবাডি।