সাকিবের ঘূর্ণি-জাদু

সাকিব আল হাসান
সাকিব আল হাসান

অভাবনীয় কিছুর পরও তাহলে কখনো কখনো আক্ষেপ থাকে! সাকিব আল হাসানকে ৬ উইকেট নিতে দেখেও যেমন মনে হচ্ছে, আরও দু-একটি উইকেট তো পেতেই পারতেন। ব্যাটসম্যান যে অল্পের জন্য বেঁচে গেলেন কয়েকবার! মাত্র ৬ রান দিয়েছেন, তার পরও যেমন মনে হচ্ছে যদি আর দু-একটি রান কম হতো! চোটের কাছে হার মেনে মাত্রই কদিন আগে অবসর নিয়েছেন আরুল সুপিয়াহ। আর একটি উইকেট নিলে বা দুটি রান কম দিলে সুপিয়াহর রেকর্ডটিকেও ‘অবসরে’ পাঠিয়ে দিতে পারতেন সাকিব আল হাসান!
হয়তো পরিসংখ্যানপ্রেমীর ক্লিশে ভাবনা হয়ে গেল। এমন বোলিংয়ের পর কি আর আক্ষেপ নিয়ে পড়ে থাকলে হয়! সাকিব নিজেই তো ওসব ভাবছেন না। এমনিতেই আক্ষেপ ব্যাপারটি তাঁর দর্শনে নেই, এমন দিনে তো সেটির আরও পাত্তা পাওয়ার কথা নয়। ৬ রানে ৬ উইকেট, টি-টোয়েন্টির দ্বিতীয় সেরা বোলিং। প্র্রাপ্তির আনন্দেই উচ্ছ্বসিত সাকিব, ম্যাচসেরা পুরস্কার নিতে এসে বললেন, ‘নিজেও জানি না, কীভাবে হয়ে গেল! আমি স্রেফ জায়গায় বল করে গেছি। উইকেটে স্পিনারদের জন্য সহায়তা ছিল, বল অনেক স্পিন করেছে। নিজেকে ভাগ্যবানও বলতে হবে, অনেক ভালো বোলিং করলেও টি-টোয়েন্টিতে ৬ উইকেটের দেখা সহজে মেলে না।’ এমন ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের দিনে ম্লান হয়ে যায় বাকি সবকিছু। তবে ম্যাচটিও কিন্তু ভালোই উত্তেজনা ছড়াল। ‘টোয়েন্টি-টোয়েন্টি’ হলেও হলো আসলে ‘টোয়েন্টি’ ম্যাচ, ২০.৫ ওভারেই শেষ খেলা। এর মাঝেই হয়ে গেল বেশ নাটক। ৫২ রানে গুটিয়েও হাল ছাড়েনি ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো রেড স্টিলস। সাকিবের ঘূর্ণির জবাব হয়ে এল ফিদেল এডওয়ার্ডসের তোপ। বারবাডিয়ান পেসার ৫ উইকেট নিয়ে (৫/২২) কাঁপিয়ে দিলেন বারবাডোজ ট্রাইডেন্টকে। ৩৯ রানেই পড়ে গিয়েছিল ৬ উইকেট। ওভার থ্রো থেকে পাওয়া ৫ আর অ্যাশলি নার্সের বাউন্ডারিতে শেষ পর্যন্ত ৪ উইকেটেই জেতে বারবাডোজ। বাবা হওয়ার খবর জেনে মাঠে নামা কাইরন পোলার্ড টানা তৃতীয় জয় উৎসর্গ করলেন সদ্যোজাত কন্যাকে। আগের ম্যাচের সেরা হয়েছিলেন সাকিব মাত্র ১ উইকেট পেয়েই। সেদিন পেয়েছিলেন কিপটে বোলিংয়ের পুরস্কার। পরশু (বাংলাদেশ সময় কাল সকাল) দর্শকে পরিপূর্ণ কেনসিংটন ওভালে উইকেট নিলেন যেন রান গুনে গুনে। বল হাতে নেওয়ার আগেই অবশ্য দুটি উইকেট এনে দিয়েছেন দলকে, নিয়েছেন প্রতিপক্ষের দুই ওপেনারের ক্যাচ। ষষ্ঠ ওভারে বোলিংয়ে এসে প্রথম বলেই উইকেট, ফুল লেংথ বলে এলবিডব্লু রস টেলর। বাকি ৫ উইকেট শেষ দুই ওভারে। তৃতীয় ওভার ‘ট্রিপল উইকেট মেডেন’—দারুণ এক আর্ম বলে বোকা বনেছেন ডোয়াইন ব্রাভো, বিশাল টার্নে শর্ট লেগে ক্যাচ নিকোলাস পুরান, সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড কেভন কুপার। দুই স্লিপ, সিলি পয়েন্ট ও সিলি মিড অনের ছাতায় ম্যাচে তখন টেস্টের আবহ! শেষ ওভারের প্রথম বলে স্যামুয়েল বদ্রিকে বোল্ড করে ৫ উইকেট, শেষ বলে কেভিন ও’ব্রায়েনকে ফিরিয়ে ৬। সিলি পয়েন্টে দুর্দান্ত রিফ্লেক্স ক্যাচ নিয়ে পোলার্ড কুর্নিশ জানালেন সাকিবকে! ব্যাট হাতে আবারও ফিরেছেন ১ রানে, এডওয়ার্ডসকে কাট করতে গিয়ে বল টেনে এনেছেন স্টাম্পে। তবে এমন বোলিংয়ের পর ওটা কজনই বা মনে রাখে! ম্যাচ শেষে জানালেন ভালো লাগার কথা, ‘এখানে যে তিনটি ম্যাচ খেললাম, আবহ ছিল দুর্দান্ত। খুব উপভোগ করছি এখানে। আশা করি অন্য দ্বীপগুলোতেও এমন আবহ থাকবে।’ উইকেট পাওয়ার পর উদ্যাপন, মাঠে শরীরী ভাষা—সবকিছুই বলছে, ক্যারিবিয়ান অভিযান সত্যিই উপভোগ করছেন সাকিব! তথ্যসূত্র: সনি সিক্স।
টি-টোয়েন্টিতে সেরা বোলিং
আরুল সুপিয়াহ ৩.৪-০-৫-৬ সমারসেট-গ্ল্যামরগন কার্ডিফ ২০১১
সাকিব আল হাসান ৪-১-৬-৬ বারবাডোজ-টিঅ্যান্ডটি ব্রিজটাউন ২০১৩
লাসিথ মালিঙ্গা ৪-১-৭-৬ মেলবোর্ন স্টার্স-পার্থ পার্থ ২০১২
অজন্তা মেন্ডিস ৪-২-৮-৬ শ্রীলঙ্কা-জিম্বাবুয়ে হাম্বানটোটা ২০১২
সোহেল তানভির ৪-০-১৪-৬ রাজস্থান-চেন্নাই জয়পুর ২০০৮