পাঁচ শর চারকাহন

খুলনার পর সাকিব আল হাসানের ব্যাট হাসল চট্টগ্রামেও। যদিও বাংলাদেশ অলরাউন্ডারকে কাল থেমে যেতে হয়েছে সেঞ্চুরি থেকে ২৯ রান দূরে l শামসুল হক
খুলনার পর সাকিব আল হাসানের ব্যাট হাসল চট্টগ্রামেও। যদিও বাংলাদেশ অলরাউন্ডারকে কাল থেমে যেতে হয়েছে সেঞ্চুরি থেকে ২৯ রান দূরে l শামসুল হক

রুবেল হোসেনের ব্যাটে তখন জিম্বাবুয়ের ৯ নম্বর বিপৎসংকেত। আর সাগরিকার গ্যালারিতে সাগরের গর্জন। দর্শক মাত্র তিন হাজার, আওয়াজ তিরিশ হাজারের। রুবেলের মাঝে সত্যি ভর করেছিল যেন অন্যকিছু। আগেই তিনটি ছক্কা মেরেছিলেন। তিনাশে পানিয়াঙ্গারাকে আরেকবার ওড়ালেন ডিপ মিড উইকেট দিয়ে। ছক্কানন্দে উন্মাতাল গ্যালারির অনেকেই খেয়াল করল না, স্কোর কার্ডে ভেসে উঠেছে ৫০০!
অথচ একটা সময় এটি ছিল একটি ম্যাজিক নম্বর। বহু আরাধ্য একটি জাদুর সংখ্যা। যে জাদুর ছোঁয়া পেতে বাংলাদেশের লেগে গিয়েছিল এক যুগ! ঠিক দুই বছর আগে, এমনই এক নভেম্বরে মিরপুরে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। রবি রামপলকে মিড অনে ঠেলে সিঙ্গেল নিলেন নাসির হোসেন। ওই একটি রানেই তখন গর্জে উঠেছিল গ্যালারি। স্কোরবোর্ড প্রথমবার দেখাল—বাংলাদেশ: ৫০০!
সেবার পাঁচ শ রানই ছিল উদ্যাপনের উপলক্ষ। কাল সেটি ছাপিয়ে গেল রুবেলের ছক্কা। যেন সময়ের প্রতীকী। এক যুগে যার দেখা পাওয়া যায়নি, দুই বছরের মধ্যে সেটি ধরা দিল চারবার! রুবেলের ব্যাটে অপ্রত্যাশিত ঝড়ে তাই আড়াল হয়ে যায় পাঁচ শ।
রুবেলের ওই ছক্কার সঙ্গে অবশ্য পাঁচ শর দারুণ একটা সংযোগ আছে। ছক্কা মেরে বাংলাদেশের পাঁচ শ হলো এই প্রথম। বাংলাদেশের পাঁচ শ আর রুবেল, দুজনের সম্পর্কের শুরু কিন্তু আজই নয়। সর্বশেষ বাংলাদেশ পাঁচ শ ছুঁয়েছিল এই রুবেলের ছোঁয়াতেই। গত বছরের অক্টোবরে, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এই জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামেই। সেবারও রুবেল শেষ উইকেট জুটির অংশীদার, লেগ স্পিনার ইশ সোধিকে মিড অন দিয়ে চার মেরে দলকে এনে দিলেন সেই কাঙ্ক্ষিত স্বাদ।
বাকি আর যে একবার পাঁচ শর সঙ্গে দেখা হয়েছে বাংলাদেশের, দল থেমে থাকেনি ওখানেই। বরং ছুঁয়েছে নতুন উচ্চতা। গত বছরের মার্চে, গলের ব্যাটিং-স্বর্গে বাংলাদেশ তুলেছিল ৬৩৮। টেস্টে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোর তো বটেই, একমাত্র ছয় শ রানের ইনিংসও।
প্রথমবার ছয় শ ছোঁয়া ওই ইনিংসে বাংলাদেশ পেয়েছিল টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিয়ানও। যে ‘প্রথম’ হওয়ার কাছে গিয়েও পারেননি মোহাম্মদ আশরাফুল (১৯০), পরে ইতিহাস গড়েছেন মুশফিকুর রহিম (২০০)। ইনিংসে ছিল আরেকজন সেঞ্চুরিয়ান, নাসির হোসেন (১০০) পেয়েছিলেন প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির দেখা। এক ইনিংসে বাংলাদেশ তিন সেঞ্চুরিয়ানও পেয়েছে এই একবারই।
বাকি তিনবারের দুবারই ছিল ইনিংসে দুটি সেঞ্চুরি। নিউজিল্যন্ডের বিপক্ষে ওই টেস্টে বাংলাদেশের শুরুটা ছিল বাজে, ৮ রানেই হারাতে হয়েছিল দুই ওপেনারকে। পরে মুমিনুল হকের অসাধারণ ১৮১ আর সোহাগ গাজীর অভাবনীয় সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশ ছাড়িয়েছিল পাঁচ শ। ওই ম্যাচেই পরে হ্যাটট্রিক করে অনন্য এক ইতিহাস গড়েন সোহাগ। দুই সেঞ্চুরিয়ানে পাঁচ শ হলো এবারও, সেঞ্চুরি করলেন দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস। শুধু প্রথম পাঁচ শতেই ছিল একটি সেঞ্চুরি, করেছিলেন নাঈম ইসলাম (১০৮)। তবে ছিল দুটি ‘প্রায়’ সেঞ্চুরি, নাসির করেছিলেন ৯৬, সাকিব আল হাসান ৮৯। সঙ্গে আরও দুটি ফিফটি, তামিম ৭২, মাহমুদউল্লাহ ৬২।
কাল ছক্কার ছোঁয়া পাওয়া প্রথম পাঁচ শর সঙ্গে জুড়ে গেছে আরও কিছু প্রথম। একই মাঠে দুবার পাঁচ শ হলো প্রথম। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেও এটি প্রথম পাঁচ শ। আগের সর্বোচ্চ ৪৮৮ ছিল এই শহরেই, তবে অন্য মাঠে। ২০০৫ সালে এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে যে ইনিংসটি গড়ে দিয়েছিল বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয়ের ভিত্তি। আর প্রথমে ব্যাট করেও বাংলাদেশ পাঁচ শ করল এই প্রথমবার। আগের তিনবারই ছিল ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে।
হাতছানি আছে আরেকটি প্রথমের। আগের তিনবার ৫০০ ছুঁয়ে একবারও জিততে পারেনি বাংলাদেশ। প্রথমবার পাঁচ শ তুলেও হেরেছিল বাংলাদেশ, চতুর্থ ইনিংসে ২৪৫ রানের লক্ষ্যে ছুটে টিনো বেস্টের বোলিং তোপে বাংলাদেশ গুটিয়ে গিয়েছিল ১৬৭ রানে। বাকি দুবারই ড্র। এবার কি পাঁচ শ এনে দেবে জয়ের আনন্দ?
অনেক প্রথমের পাঁচ শতে এই প্রথমটাই সবচেয়ে বেশি করে চাইবেন মুশফিকরা।

বলটা চলে যাচ্ছিল কাভারের ওপর দিয়েই। কিন্তু উড়ে গিয়ে দুর্দান্ত এক ক্যাচে সাকিবকে ৭১ রানেই থামিয়ে দিলেন ক্রেগ আরভিন l প্রথম আলো
বলটা চলে যাচ্ছিল কাভারের ওপর দিয়েই। কিন্তু উড়ে গিয়ে দুর্দান্ত এক ক্যাচে সাকিবকে ৭১ রানেই থামিয়ে দিলেন ক্রেগ আরভিন l প্রথম আলো


টেস্টে বাংলাদেশের ৫০০
বিপক্ষ ভেন্যু সাল
৬৩৮ শ্রীলঙ্কা গল ২০১৩
৫৫৬ ও.ইন্ডিজ ঢাকা ২০১২
৫০৩ জিম্বাবুয়ে চট্টগ্রাম ২০১৪
৫০১ নিউজিল্যান্ড চট্টগ্রাম ২০১৩
পাঁচ শ বা এর চেয়ে বেশি রান করে একবারও জিততে পারেনি বাংলাদেশ। এবার পারবে?
ছক্কা মেরে এই প্রথম পাঁচ শ ছুঁল বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের পাঁচ শ রানের ৪টি স্কোরের দুটিই জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে।