বাবার যে কথা 'টেন্ডুলকার' বানিয়েছে

আকাশের দিতে তাকিয়ে সেঞ্চুরি উদযাপন। বাবার মৃত্যুর পর থেকেই সব অর্জন তাঁকে উৎসর্গ করেন টেন্ডুলকার। ফাইল ছবি
আকাশের দিতে তাকিয়ে সেঞ্চুরি উদযাপন। বাবার মৃত্যুর পর থেকেই সব অর্জন তাঁকে উৎসর্গ করেন টেন্ডুলকার। ফাইল ছবি

বাবা তাঁর নাম রেখেছিলেন ‘শচীন’। প্রিয় সুরকার শচীন দেববর্মণের সঙ্গে মিলিয়ে। বাবা কি স্বপ্ন দেখেছিলেন, টেন্ডুলকারও বড় হয়ে একজন সুরকার হবেন!
সব সন্তানকে নিয়েই বাবার অনেক উচ্চাশা থাকে। টেন্ডুলকারের সাহিত্যিক বাবাও নিশ্চয়ই তেমন কোনো স্বপ্ন মনের সিন্দুকে জমিয়ে রেখেছিলেন। টেন্ডুলকার বাবার স্বপ্ন ঠিকই পূরণ করেছেন। হয়তো এস্রাজ-সেতার কিংবা পিয়ানোতে নয়। কিন্তু সুর তো ঠিকই তুলেছেন। ব্যাট নামের বীণায়। কিন্তু টেন্ডুলকার ব্যাটসম্যান হিসেবে যত বড় মাপের, মানুষ হিসেবে যেন তার চেয়েও উঁচুতে বাঁধা তাঁর স্থান। আর এখানেই রমেশ টেন্ডুলকারের সার্থকতা।
আদর্শ মধ্যবিত্ত বাবা সন্তানের মনে সেই ছোট বেলাতেই আদর্শের, সৎ আর ন্যায়ের বীজ বুনে দিয়েছিলেন। যে কথা টেন্ডুলকার সারা জীবনে ভোলেননি। যে কথাগুলো ছিল তাঁর জীবনে চলার পাথেয়। নিজের আত্মজীবনীতেও সেই কথাগুলো তুলে ধরতে ভোলেননি টেন্ডুলকার। যে কথাগুলো হতে পারে যে কারও জীবনের জন্যই পথ নির্দেশ:
‘বাবা, জীবনটা একটা বইয়ের মতো। এখানে অনেকগুলো অধ্যায় থাকে। থাকে অনেক শিক্ষা। এতে থাকে অনেক বিচিত্র অভিজ্ঞতার সমাহার। অনেকটা পেন্ডুলামের মতো। যেখানে সাফল্য যেমন আছে, ব্যর্থতাও আছে; আনন্দ আছে, দুঃখও আছে। এটাই বাস্তবতা। সাফল্য থেকে যেমন, একইভাবে ব্যর্থতা থেকে শেখাও সমান গুরুত্বের। কখনো কখনো তো সাফল্য আর আনন্দের চেয়ে ব্যর্থতা আর কষ্টই বড় শিক্ষক হয়ে ওঠে। তুমি একজন ক্রিকেটার, একজন ক্রীড়াবিদ। তোমার সৌভাগ্য, নিজের দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারছ। যেটা অনেক সম্মানের। কিন্তু কখনোই ভুলে যাবে না, এটাও সেই বইয়ের একটা অধ্যায় মাত্র।
‘একটা মানুষ কত দিন বাঁচে? ধরো সত্তর-আশি বছরের মতো। কিন্তু তুমি খেলবে কত দিন? ২০ বছর, খুব ভালো হলে হয়তো ২৫ বছর। এর থেকেই বোঝা যায়, জীবনের একটা বড় অংশই তোমাকে খেলার বাইরে কাটাতে হবে। এর মানে একটাই। জীবনটা ক্রিকেটের চেয়ে অনেক বড়। আমি তাই তোমাকে বলব, বাবা, সব সময় শান্ত থাকবে, পা হড়কাবে না। সাফল্যকে কখনোই তোমার মধ্যে উদ্ধত আচরণের জন্ম দিতে দেবে না। যদি তুমি বিনয়ী হও, মানুষ তোমাকে সব সময় ভালোবাসবে, এমনকি খেলা ছাড়ার পরও। বাবা হিসেবে আমি তখনই বেশি খুশি হব, “শচীন দুর্দান্ত একজন ক্রিকেটার” বলার চেয়েও মানুষ যেন বেশি করে বলে, “শচীন মানুষ হিসেবে খুব ভালো”।’
(টেন্ডুলকারের সদ্য প্রকাশিত আত্মজীবনী প্লেয়িং ইট মাই ওয়ে থেকে)