চলে গেলেন জুম্মন লুসাই

সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন জুম্মন লুসাই।
সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন জুম্মন লুসাই।

জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ছিলেন তিনি। চিকিৎসকেরা বলছিলেন অবস্থা অতটা ভালো নয়। মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণে আক্রান্ত সাবেক জাতীয় হকি তারকা জুম্মন লুসাই চিকিৎসকদের শেষ চেষ্টাটুকুও করার সুযোগ দিলেন না। চলে গেলেন অনেকটা সন্তর্পণেই। অবসান হলো এ দেশের হকির এক ঝলমলে কিংবদন্তির। এ দেশের ক্রীড়াঙ্গনের এক উজ্জ্বল অধ্যায়ের। ৬০ বছর বয়সেই।
হকি-অন্তপ্রাণ জুম্মন লুসাই এ দেশের হকির অন্যতম বড় বিজ্ঞাপনই। বিশ্ব একাদশের হয়ে খেলে তিনি আশির দশকে গৌরবান্বিত করেছিলেন বাংলাদেশের হকিকে। জুম্মন লুসাই খেলোয়াড়ি জীবনের প্রায় পুরোটা সময়ই কাটিয়েছেন দেশের শীর্ষ ক্লাব আবাহনীতে।
আবাহনীর প্রতি ভালোবাসা অটুট ছিল জীবনের শেষ পর্যন্ত। পরিবার-পরিজন ছেড়ে অবাহনী ক্লাবেই থাকতেন তিনি। হকি নিয়ে ভাবতেন। হকি নিয়ে কাজ করতেন। প্রতি মৌসুমে আবাহনীর দল গঠনে রাখতেন নেপথ্য-অবদান। আবাহনী ক্লাব প্রাঙ্গণেই শুক্রবার বিকেলে মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণে আক্রান্ত হন তিনি। প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় বাংলাদেশ মেডিকেল হাসপাতালে। অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে স্থানান্তর করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ)। কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছিল তাঁকে। আজ সবকিছু তুচ্ছ করে যাত্রা করলেন অন্য এক জগতের দিকে।
১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ পুলিশ দলের হয়ে প্রথম বিভাগে খেলা শুরু করেছিলেন জুম্মন লুসাই। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তিনি নিজেকে চিনিয়ে জায়গা করে নেন জাতীয় হকি দলে। ১৯৮২ সালে দিল্লি এশিয়ান গেমসে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চড়ান। এশিয়ান গেমস খেলেছেন আরও একটি, ১৯৮৬ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে। এর আগে ১৯৮৫ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপ হকিতে তিনি ইরানের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেছিলেন। তিনি একমাত্র বাংলাদেশি হকি খেলোয়াড় যিনি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে হ্যাটট্রিকের গৌরব অর্জন করেছিলেন। ১৯৮৯ সালে তিনি দিল্লিতে আরও একটি এশিয়া কাপে অংশগ্রহণ করে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি টানেন।
জাতীয় পুরস্কারপ্রান্ত হকি তারকা জুম্মন লুসাই এসেছিলেন একটি ক্রীড়া পরিবার থেকে। তাঁর বড় ভাই রামা লুসাই সত্তর ও আশির দশকে ঢাকার ফুটবলের জনপ্রিয় তারকা ছিলেন। খেলেছেন মোহামেডান ও জাতীয় ফুটবল দলে। বাবা হারেঙ্গা লুসাইও হকি খেলতেন। ছোট ভাই জুবেল লুসাইও আবাহনী, অ্যাজাক্স, মোহামেডান ও সাধারণ বীমার হয়ে হকি খেলেছেন সর্বোচ্চ পর্যায়েই।