বাংলাদেশের চেয়ে শ্রীলঙ্কার ওপরই বেশি চাপ

গাজী আশরাফ হোসেন
গাজী আশরাফ হোসেন

আফগানদের বিপক্ষে বাংলাদেশ যেমন চাপ নিয়ে ম্যাচ শুরু করেছিল তার চেয়ে অনেক বেশি চাপ নিয়ে আজ শ্রীলঙ্কা আমাদের মুখোমুখি হবে। তবে অভিজ্ঞ এ দলটি জানে কীভাবে নিজেদের চাপ বিপক্ষ দলের ওপর চাপিয়ে দিতে হয়। বিশ্বকাপে ধারাবাহিকভাবে তাদের কোনো ব্যাটসম্যানই রান করেনি। কোনো ম্যাচেই ব্যাটিংয়ে ভালো সূচনা হয়নি। বোলিংয়ে তাদের অন্যতম উইকেট–শিকারি লাসিথ মালিঙ্গা প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের মনে ত্রাস সৃষ্টির চেয়ে নিজের বোলিংকে স্বরূপে ফেরাতেই ব্যস্ত এখনো। এই নড়বড়ে অবস্থান থেকে বের হয়ে আসার জন্য আজ শ্রীলঙ্কানদের যে তীব্র আকাঙ্ক্ষা থাকবে, তা আমাকে কিছুটা বিচলিত করছে।
মেলবোর্নের এত বড় আউটফিল্ড আমাদের বোলিংয়ে তেমন উপকারে আসবে বলে মনে হয় না। বরং ফিল্ড প্লেসমেন্ট, সুষ্ঠুভাবে বাউন্ডারি লাইন পাহারা দেওয়া ও ২-৩ রান বাঁচানোর সমন্বয় সাধন করতে গিয়ে আমাদের ফিল্ডারদের ওপর বাড়তি চাপ পড়তে পারে। তবে আমি নিশ্চিত, বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এই মাঠে পারফর্ম করার জন্য সবাই উন্মুখ হয়ে আছে।
উইনিং কম্বিনেশন অনেক দলই বদলাতে চায় না। তবে এ ধরনের টুর্নামেন্টে ভিন্ন প্রতিপক্ষকে মাথায় রেখে আগের ম্যাচে ৯ নম্বরে নামানো মুমিনুলের জায়গায় একজন বাঁহাতি স্পিনার খেলালে ভালো হবে। সে ক্ষেত্রে আমি আরাফাত সানিকে দলে দেখলেই বেশি খুশি হব। টিম ম্যানেজমেন্ট সাব্বির রহমানের ওপর যে আস্থা দেখিয়েছে, আশা করব সে তার সাহসী ব্যাট ও নজরকাড়া ফিল্ডিং দিয়ে তার প্রতিদান দেবে।
আফগানদের বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট করে ২৬৭ করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু প্রায় প্রতিটি দলই যেখানে প্রথমে ব্যাট করে তিন শর ওপরে রান করছে, সেখানে এই রান যথেষ্ট ভালো নয়। আজ জেতার জন্য ব্যাটিংয়ে আমাদের বড় জুটি ও ভালো স্ট্রাইক রেটের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। ব্যাটিংয়ে নতুন বলের সামনে কোনো দলের শুরুটাই ভালো হচ্ছে না। তাই টস জিতলে রান তাড়া করার চেয়ে আগে ব্যাটিং করাটাই ভালো হবে। মেলবোর্নের ড্রপ ইন পিচে স্বাভাবিক বাউন্স থাকলেও বলের গতি আমাদের জন্য সহনীয়।
অবশ্য শ্রীলঙ্কাও যে টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত খুব ভালো কিছু দেখাতে পেরেছে, তা-ও নয়। তাদের বাঁহাতি ব্যাটসম্যানদের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে বা শুরুতেই উইকেট নিয়ে শ্রীলঙ্কাকে চাপে ফেলতে এই ম্যাচে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার অন্যতম অস্ত্র হতে পারত আল আমিন হোসেন। তার দুর্ভাগ্যজনক প্রত্যাবর্তন সবাইকে ব্যথিত করেছে। একটি দলের খেলোয়াড়েরা একসঙ্গে থাকলে একটা পরিবারের মতো হয়ে ওঠে এবং তাদের একজন সঙ্গীর বিয়োজন কমবেশি সবাইকে নাড়া দেয়। টিম ম্যানেজমেন্ট নিশ্চয়ই প্রকৃত অপরাধের আলোকে অনেক চিন্তাভাবনা করেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে এই সুপারিশ করেছিল। আমি মনে করি, সবার আগে শৃঙ্খলাকে অবশ্যই গুরুত্ব দেওয়া উচিত। আবার এটাও মাথায় রাখতে হবে, শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের শাস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে যেন কোনো ধরনের আবেগ কাজ না করে।
সাকিব আল হাসানকে শাস্তি দেওয়ার পরও পক্ষে-বিপক্ষে অনেক কথা হয়েছে। এ ধরনের ঝামেলা এড়ানোর জন্য আইসিসির আদলে বিসিবিও একটি দিকনির্দেশনা তৈরি করে দিলে টিম ম্যানেজমেন্ট খেলোয়াড়দের সঙ্গে বোঝাপড়া ঠিক রেখেই সিদ্ধান্ত নিতে পারত। রাতে দেরি করে হোটেলে ফেরার অপরাধের শাস্তি হিসেবে যখন দলের সিনিয়র খেলোয়াড়েরা আল আমিনকে বড় ধরনের জরিমানা করার সুপারিশ করে, স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, টিম রুলস ভাঙার শাস্তির বিধান সম্পর্কে খেলোয়াড়েরা আদৌ অবহিত ছিলেন কি না।
যা-ই হোক, আশা করব এসব বিতর্কিত বিষয় বাদ দিয়ে দলের খেলোয়াড়-কর্মকর্তা সবাই আপাতত খেলার দিকেই মনোযোগী থাকবে।