ক্যাচ ফেলেই ম্যাচ শেষ

সাকিব যতক্ষণ উইকেটে ছিলেন লড়াইয়ের স্বপ্ন কিছুটা হলেও বাঁচিয়ে রেখেছিল বাংলাদেশ। ৪৬ রানের ইনিংস খেলার পথে রঙ্গনা হেরাথকে আছড়ে ফেললেন সীমানার ওপারে। কাল শ্রীলঙ্কার সঙ্গে মেলবোর্নে l শামসুল হক
সাকিব যতক্ষণ উইকেটে ছিলেন লড়াইয়ের স্বপ্ন কিছুটা হলেও বাঁচিয়ে রেখেছিল বাংলাদেশ। ৪৬ রানের ইনিংস খেলার পথে রঙ্গনা হেরাথকে আছড়ে ফেললেন সীমানার ওপারে। কাল শ্রীলঙ্কার সঙ্গে মেলবোর্নে l শামসুল হক

শ্রীলঙ্কান ইনিংসে একটি মাত্র ছক্কা। বাংলাদেশের ইনিংসে ৩টি! বাংলাদেশই তো জিতল!
রসিকতা থাক। ৯২ রানে হারার পর আর যা-ই হোক, রসিকতা ভালো লাগার কথা নয়।
ম্যাচ যখন চলছে, তখনো তাদের দেখা মিলেছে। শেষ হওয়ার পর তো এমসিজির দখলই নিয়ে নিল গাঙচিলের দল। সবুজ মখমলের মতো মাঠে সাদা সাদা ছোপ। সাদার ডানা ঝাপটানো। তবে এই দৃশ্যে কোনো অস্বাভাবিকত্ব নেই। অস্ট্রেলিয়াতে এমনই হয়।
কিন্তু যে রসিকতা দিয়ে লেখাটার শুরু, সেটি একটা অস্বাভাবিক তথ্যই জানাচ্ছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় মাঠে শ্রীলঙ্কার চেয়ে ৯২ রান কম করেও কি না বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ২টি বেশি ছক্কা!
কতটা অস্বাভাবিক, তা বুঝতে তিলকরত্নে দিলশানের ইনিংসটি দেখলেই চলছে। ১৪৬ বলে ১৬১ রান বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার পক্ষে সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ডটি অরবিন্দ ডি সিলভার কাছ থেকে কেড়ে নিল। বিশ্বকাপে এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি (২২) চারের রেকর্ডটিও এখন দিলশানের। তবে সবচেয়ে আশ্চর্যের রেকর্ড এর কোনোটাই নয়। সেটি হলো একটিও ছক্কা না মেরে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ইনিংস খেলার।
টেস্টে সাঙ্গাকারা-জয়াবর্ধনে আরও বেশি ভুগিয়েছেন। তবে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের বোলারদের এখন দিলশানকে নিয়ে দুঃস্বপ্ন দেখার মতো অবস্থা। সর্বশেষ ৯ ইনিংসে এটি তাঁর চতুর্থ সেঞ্চুরি। দিলশানকে তা মনে করিয়ে দেওয়ায় উল্টো মনে করিয়ে দিলেন, শুধু বাংলাদেশ নয়, সব দলের বিপক্ষেই তাঁর ব্যাট গত কিছুদিন খাপখোলা তলোয়ার। আসলেই তা-ই। গত ১০ ইনিংসে চতুর্থ সেঞ্চুরি, ৭৫.৮৮ গড়ে রান করেছেন ৬৮৩। বছরের এখনো দুই মাসও যায়নি। ওয়ানডেতে ৫০০ রান হয়ে গেছে।
ম্যাচ রিপোর্টের শুরুতেই দিলশানকে এতটা জায়গা দিয়ে দেওয়াটা যদি আপনাকে অবাক করে থাকে, তাহলে বুঝতে হবে খেলাটা আপনি দেখেননি। অথবা অনেক আশা নিয়ে ম্যাচ দেখতে বসার পর আশাভঙ্গের বেদনা চোখের সামনে বারবার ভাসিয়ে তুলছে ম্যাচের চতুর্থ বলেই স্লিপে এনামুলের অবিশ্বাস্য ওই ক্যাচ মিস। স্লিপে এমন সহজ ক্যাচ এক শ বারের মধ্যে একবার আসে। মনঃসংযোগের অভাব ছাড়া যেটি হাতে জমাতে না পারার আর কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া কঠিন।
ম্যাচের আগেই জানা ছিল, শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে নড়বড়ে জায়গা এখন টপ অর্ডার। সেটিকে আরও নাড়িয়ে দিয়ে শুরুতেই উইকেট নিতে পারলে বিষম চাপে পড়ে যাবেন পরের ব্যাটসম্যানরা। চাপ সবার জন্যই চাপ, এমনকি কুমার সাঙ্গাকারার জন্যও। অথচ শূন্য রানেই নামার বদলে সাঙ্গাকারা নামলেন কি না স্কোরবোর্ডে ১২২ রান উঠে যাওয়ার পর।
এনামুল ক্যাচ ফেলার পর স্টাম্পিং মিস করলেন মুশফিক। আর একবার থিরিমান্নের ক্যাচের জন্য ঝাঁপাতে গিয়েও কেন যেন থেমে গেলেন। থিরিমান্নের ফিফটি যেন ব্যাটের কানা দিয়ে খেলেই। কিন্তু থিরিমান্নে দু-তিনটি সুযোগ পেয়েও ফিফটিতেই থেমে যেতে পারেন, সাঙ্গাকারা তো সেই পাত্র নন। ২৩ রানে তাসকিন ফিরতি ক্যাচটা ধরতে পারলেন না। ৬০ রানে পয়েন্টে মুমিনুল যে ক্যাচটি ফেললেন, সেটি তর্ক তুলে দিল—এনামুলের হাত ফসকে পড়ে যাওয়া ক্যাচটির চেয়েও সেটি সহজ ছিল কি না!

উৎপল শুভ্র
উৎপল শুভ্র

সাঙ্গাকারা খেলতে নেমেছিলেন ৪০০তম ম্যাচ। সঙ্গে কি একটা শঙ্কা নিয়েও? এর আগে এই মাইলফলক ছুঁয়েছেন তিনজন। তিনজনই ৪০০তম ম্যাচে হেরেছেন। ব্যক্তিগত কীর্তিতেও কেউ স্মরণীয় করে রাখতে পারেননি উপলক্ষটা। জয়াসুরিয়া করেছিলেন ১০ রান, টেন্ডুলকার ৪৭, জয়াবর্ধনে ২২। সাঙ্গাকারা শুধু জয়ের স্বাদই পেলেন না, অপরাজিত সেঞ্চুরিতে বড় অবদানও রাখলেন সেই জয়ে। সেই সেঞ্চুরিও মাত্র ৭৩ বলে, আগের ২১টি ওয়ানডে সেঞ্চুরির কোনোটিই এত কম বলে নয়। এই বিশ্বকাপে হাতে উইকেট রেখে শেষ ১০ ওভারে ঝড় তোলার কৌশল খুব কাজে দিচ্ছে। শ্রীলঙ্কাও সেই পথ অনুসরণ করে শেষ ১০ ওভারে তুলে ফেলল ১১৫ রান।
স্কোরকার্ডে অনেক কিছু লেখা থাকে না। শুধু স্কোরকার্ডকে এই ম্যাচ দেখার আয়না বানালে যেমন কেউ বুঝতেই পারবেন না, শুরুতে মাশরাফি কী অসাধারণ একটা স্পেলই করেছেন! ৬ ওভারে ২০ রান, প্রথম ৪ ওভারে মাত্র ৮। প্রথম স্পেলের ৩৬টি বলের ২৬টিই ‘ডট’! কিন্তু দুই প্রান্ত থেকেই তো আর তাঁর বোলিং করার সুযোগ নেই। রান তাই হতেই থাকল।
শেষ পর্যন্ত সেটি এমনই পাহাড়প্রমাণ যে, ম্যাচে আগ্রহ বলতে অবশিষ্ট থাকল বাংলাদেশ কত রানে হারে! তিন শ রান তাড়া করাটা এখন ওয়ানডেতে ডালভাত হয়ে গেছে। কিন্তু এমসিজিতে তা এখনো করতে পারেনি কোনো দল। এই মাঠে ৩৩২ মানে তো মিরপুরে ৩৭০-৮০। এই হিসাবে বাংলাদেশের ২৪০ রানের সঙ্গেও তাই আরও ৩০-৪০ যোগ করে দিতে পারেন।
লাসিথ মালিঙ্গা এই বিশ্বকাপে নিজেকে হারিয়ে খুঁজছিলেন। ক্রমশ খুঁজেও পাচ্ছেন। পরপর দুই বলে দুই উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের ইনিংস ও ম্যাচের শেষ তাঁর হাতেই। প্রথম ঝটকাটাও তাঁরই দেওয়া। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই তামিম ইকবালকে যেভাবে বোল্ড করলেন, সেটি মনে করিয়ে দিল পুরোনো মালিঙ্গাকে।
উইকেটে নেমেই সৌম্য সরকার যেমন মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন ২০০৭ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে তামিমকে। প্রথম ৯ বলেই ৫টি চার। কিন্তু এই জিনিস বেশিক্ষণ চালিয়ে যাওয়া কঠিন। সৌম্যও পারলেন না। ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন পাওয়া মুমিনুল পারবেন বলে আশাই জাগাতে পারলেন না। ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে এক্সপেরিমেন্টে দলের সেরা দুই ব্যাটসম্যান সাকিব ও মুশফিক নামলেন ৬ ও ৭ নম্বরে। ইনিংসের সর্বোচ্চ জুটিটিও গড়লেন তাঁরাই। কিন্তু সেটি মাত্র ৬৪। অসমাপ্ত দ্বিতীয় উইকেটে দিলশান ও সাঙ্গাকারার শ্রীলঙ্কান রেকর্ড ২১০ রানের জুটির পাশে এটিকে যেমন বিবর্ণ দেখাচ্ছে, ম্যাচেও শ্রীলঙ্কার পাশে একই রকম বিবর্ণ বাংলাদেশ!


আজকের খেলা
দক্ষিণ আফ্রিকা-ওয়েস্ট ইন্ডিজ
(সকাল ৯-৩০ মি., সিডনি)

আগামীকালের খেলা
অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড
(সকাল ৭টা, অকল্যান্ড)

ভারত-আরব আমিরাত
(দুপুর ১২-৩০ মি., পার্থ)

গতকালের ফল
স্কটল্যান্ড: ৫০ ওভারে ২১০
আফগানিস্তান: ৪৯.৩ ওভারে ২১১/৯
ফল: আফগানিস্তান ১ উইকেটে জয়ী

শ্রীলঙ্কা: ৫০ ওভারে ৩৩২/১
বাংলাদেশ: ৪৭ ওভারে ২৪০
ফল: শ্রীলঙ্কা ৯২ রানে জয়ী