জয় দেখছে বাংলাদেশ

হেলসকে ফিরিয়ে বাংলাদেশের উল্লাস। ছবি: শামসুল হক
হেলসকে ফিরিয়ে বাংলাদেশের উল্লাস। ছবি: শামসুল হক

শুরুটা ছিল ঘোর অমানিশার। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ইতিহাস সৃষ্টির ম্যাচের শুরুটা এর চেয়ে আর খারাপ আর হতে পারত না। জেমস অ্যান্ডারসনের প্রথম দুই ওভারেই পরপর উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এলেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার—তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস। স্কোরবোর্ডে মাত্র ৮ রান উঠতেই দুই ওপেনারকে হারানোর ধাক্কা সামলানো তো আর চাট্টিখানি কথা নয়। সেই ধাক্কা সামলে মাহমুদউল্লাহ তৈরি করলেন নতুন ইতিহাস। বিশ্বকাপে ৩০তম ম্যাচে দেশকে উপহার দিলেন সেঞ্চুরির গৌরব। মুশফিকুর রহিম খেললেন ৮৯ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস। সঙ্গে সৌম্য সরকারের ৪০। এই তিন ব্যাটসম্যানের মিলিত প্রয়াসে অ্যাডিলেড ওভালে ইংল্যান্ডকে ২৭৬ রানের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। 

জবাবে ভীষণ চাপের মধ্যে ইংল্যান্ড। মাত্র ৩৫ রানের ব্যবধানে তারা হারিয়েছে চারটি উইকেট। ৩০ ওভার শেষে ইংল্যান্ডের সংগ্রহ ৫ উইকেটে ১৩৩। রানআউটের খাঁড়ায় ব্যক্তিগত ১৯ রানে ফিরে যান মঈন আলী। তার পরেও অ্যালেক্স হেলসকে নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন ইয়ান বেল। ৫৪ রানের জুটিও গড়ে ফেলেছিলেন। তখনই মাশরাফির আঘাত। হেলসকে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন। তবে ইংল্যান্ডের আসল সর্বনাশ করেছেন রুবেল হোসেন। ইনিংসের ২৭ তম ওভারে তাঁর জোড়া আঘাত। প্রথমে ফিরিয়েছেন ৬৩ রান করা ইয়ান বেলকে। তিন বল পরেই রানের খাতা খোলার আগেই ফিরিয়েছেন অধিনায়ক এউইন মরগানকেও। প্রতিরোধ গড়বেন কি, মাত্র এক রান করে তাসকিনের শিকার হন জেমস টেলর। ১ উইকেটে ৯৭ থেকে হুট করে ৫ উইকেটে ১৩২!
এখনও ২০ রানে বাংলাদেশের গলার কাঁটা হয়ে উইকেটে আছেন জো রুট। তাঁকে সঙ্গ দিচ্ছেন জস বাটলার। তবে কোয়ার্টার ফাইনালে এক পা দিয়ে রেখেছে বাংলাদেশ।
পুরো ৫০ ওভার খেলে ৭ উইকেটে বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৭৫। শুরুর সঙ্গে কী দারুণ বৈপরীত্য! রানটা আরও বড় হতে পারত। তবে ইনিংসের শেষ দিকে ইংলিশ বোলারদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে সেটা সম্ভব হয়নি। শেষ ৫ ওভারে রান এসেছে মাত্র ৩৮! অথচ হাতে ছিল আরও ৫ উইকেট। এর চেয়ে বড় কথা, ক্রিজে তখন জমিয়ে ব্যাট করছিলেন মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ। অবশ্য তার পরও এটি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। বাংলাদেশ কি পারবে এই রানে ইংলিশ দর্প চূর্ণ করতে? এই প্রশ্ন আপাতত তোলা থাক সময়ের হাতেই। তবে অ্যাডিলেডে এর চেয়ে বেশি রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড আছে মাত্র দুটি।
ইমরুল কায়েস ফেরেন অ্যান্ডারসনের বলে স্লিপে ক্রিস জর্ডানকে ক্যাচ দিয়ে। এনামুল হকের চোটের কারণে হঠাৎই সুযোগ পাওয়া ইমরুল বুঝতে পারেননি বলের লাইনই। কিন্তু তামিম ইকবাল যেভাবে অ্যান্ডারসনের অফ স্টাম্পের বাইরের একটি বলকে খোঁচা দিলেন, সেটা ছিল যথেষ্টই হতাশাজনক। তাঁর ক্যাচটি যখন জো রুট ধরলেন, তখন ইংল্যান্ডকে চ্যালেঞ্জ-ট্যালেঞ্জ জানানো দূরে থাক বাংলাদেশের তখন ‘আগে ঘর সামলাই’ অবস্থা।
সেই ঘর সামলানোর দায়িত্ব দারুণভাবে ঘাড়ে তুলে নেন সৌম্য সরকার ও মাহমুদউল্লাহ। নিজেদের মধ্যে ৮৬ রানের দারুণ এক জুটি গড়ে সামাল দেন শুরুর বিপর্যয়। সৌম্য সরকারের ৪০ রানের ইনিংসটি থামান ক্রিস জর্ডান। তাঁর শর্ট বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে সৌম্য যখন ফিরলেন, তখন স্কোরবোর্ডে ৯৪ রান তুলে ফেলেছে বাংলাদেশ। তাঁর ইনিংসটি ছিল পাঁচটি চার ও একটি ছয়ে সাজানো।
৩ উইকেটে ৯৪ রান হঠাৎই ৪ উইকেটে ৯৯ হয়ে গেল সাকিব আল হাসানকে হারিয়ে। মঈন আলীর বলে সাকিব ৪ রান করে স্লিপে ক্যাচ দেন রুটকে। বাংলাদেশের সামনে তখন আবারও বিপর্যয়ের শঙ্কা।
মাহমুদউল্লাহ কিন্তু উইকেটে ছিলেন। এবার বিপদ সামাল দেওয়ার জন্য তাঁর সঙ্গে ছিলেন তাঁর ‘ভায়রা’ মুশফিকুর রহিম। দুই ভায়রা পঞ্চম উইকেটে ১৪১ রান তুলে এবার স্বপ্ন দেখালেন বড় সংগ্রহের। পঞ্চম উইকেটে এটি বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ রানের জুটি। মাহমুদউল্লাহ ১৩৮ বলে খেললেন ১০৩ রানের ইনিংস। মুশফিকুর রহিমের ব্যাট থেকে এল ৮৯ রান।
মাহমুদউল্লাহর ১০৩ রানের ইনিংসে ছিল ৭ চার ও ২টি ছয়ের মার। মুশফিকুর রহিমের ৮৯ রানে আছে ৮ চার ও একটি ছয়ের মার।
ইংল্যান্ডের পক্ষে দুটি করে উইকেট জেমস অ্যান্ডারসন ও ক্রিস জর্ডানের। একটি করে উইকেট স্টুয়ার্ট ব্রড ও মঈন আলীর

আরও পড়ুন: