পৃথিবীর সবচেয়ে গর্বিত শ্বশুর-শাশুড়ি

মেলবোর্নে মাহমুদউল্লাহ-মুশফিক পরিবার। ছবি: শামসুল হক
মেলবোর্নে মাহমুদউল্লাহ-মুশফিক পরিবার। ছবি: শামসুল হক

পাঁচটি বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ থাকলেও একটি জায়গায় অপূর্ণতা ছিল বাংলাদেশের। বিশ্বকাপে কোনো বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরি নেই। সেই অপূর্ণতা আজ পূরণ করলেন মাহমুদউল্লাহ। অ্যাডিলেডে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে মাহমুদউল্লাহ তুলে নিলেন অসাধারণ এক শতক। মাহমুদউল্লাহর দিনে হেসে উঠল মুশফিকুর রহিমের ব্যাটও। মাহমুদউল্লাহ-মুশফিকের দারুণ পারফরম্যান্সে যারপরনাই খুশি দুজনের শ্বশুর-শাশুড়ি ফজলুর রহমান ভুঁইয়া ও নাজনিন আক্তার! মাহমুদউল্লাহ-মুশফিকের দুর্দান্ত সেই জুটির সময় পৃথিবীর সবচেয়ে গর্বিত শ্বশুর-শাশুড়ি ছিলেন বোধ হয় এ দুজনই!

২০১১ সালের জুনে মাহমুদুউল্লাহ জুটি বেঁধেছেন জান্নাতুল কাউসার মিষ্টির সঙ্গে। গত বছর আগস্টে মুশফিক আনুষ্ঠানিকভাবে জুটি বেঁধেছেন মিষ্টির ছোট বোন জান্নাতুল কিফায়াত মন্ডির সঙ্গে। মিষ্টি-মাহমুদউল্লাহ, মন্ডি-মুশফিক—চার ‘ম’য়ের কী দুর্দান্ত দুটো জুটি!
সে যা-ই হোক, দুই জামাইয়ের এমন পারফরম্যান্সে খুশির ঝিলিক শাশুড়ি নাজনিন আক্তারের চোখেমুখে। প্রথম আলোকে বললেন, ‘দুই জামাইয়ের খেলা সব সময়ই ভালো লাগে। তারা ভালো খেললেও রত্ন, না খেললেও তা-ই!’ তবে মাহমুদউল্লাহর সেঞ্চুরিতে একটু বেশি খুশি শ্বশুর ফজলুর রহমান। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম বলে নয়, মাহমুদউল্লাহরও এটি প্রথম সেঞ্চুরি। বললেন, ‘রিয়াদের এ অসাধারণ মুহূর্তটার জন্য অপেক্ষা করছিলাম অনেকদিন ধরেই। একটা বিশ্বাস ছিল, ওর ভালো সময় আসবেই। সে বিশ্বকাপের আগে অনেক পরিশ্রম করেছে। বিশ্বকাপের আগে আমাদের এখানে এলে কিছুই খেত না। অনেক শুকিয়ে গিয়েছিল। কেবল বলত, “বিশ্বকাপে যদি ভালো করতে পারি, টানা সাত দিন আপনাদের এখানে ইচ্ছেমতো খাব।”’
এক জামাই সেঞ্চুরি পেয়েছেন, আরেকজন পাননি—এ নিয়ে আক্ষেপ নেই? নাজনিন আক্তার বললেন, ‘মুশফিক সেঞ্চুরি পায়নি, তা নিয়ে আক্ষেপ নেই। দুজনই ভালো খেলেছে, দলে অবদান রেখেছে, এতেই খুশি। মুশফিক ধারাবাহিক ভালো খেলে। কিন্তু রিয়াদকে নিয়ে মাঝে একটু উদ্বিগ্ন ছিলাম। ও নিজেও চিন্তিত ছিল। তবে এখন সে খারাপ সময় পেরিয়ে এসেছে।’ ফজলুর রহমানেরও একই জবাব, ‘মুশফিক দলের জন্য অবদান রাখতে পেরেছে তাতেই খুশি। সবাই তো সব সময় সেঞ্চুরি পায় না। সে এবার পায়নি, পরে পাবে ইনশা আল্লাহ।’
দুজনের সঙ্গে প্রতি ম্যাচের আগেই নিয়মিত কথা হয় তাঁদের। দুজনই নিয়মিত অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড থেকে ফোন দেন শ্বশুর-শাশুড়িকে। অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকতা ফজলুর রহমান বললেন, ‘আমাদের তো ছেলে নেই। এ দুজনই আমাদের ছেলে। প্রতি ম্যাচের আগের রাতে নিয়মিত ফোন দিয়ে দুজন বলবে, দলের জন্য দোয়া করবেন। তারা কিন্তু নিজেদের জন্য নয়, দোয়া চাইবে দলের জন্য। আজ রিয়াদের (মাহমুদউল্লাহ) সেঞ্চুরির পর তো আমার চোখে পানি এসে গিয়েছিল।’
এখন ফজলুর রহমান-নাজনিন আক্তারের চাওয়া—বাংলাদেশ খেলবে শেষ আটে। গোটা বাংলাদেশেরও চাওয়া তো একই।

আরও পড়ুন: