অস্ট্রেলিয়া প্রমাণ করল তারা অপ্রতিরোধ্য

মাশরাফি বিন মুর্তজা
মাশরাফি বিন মুর্তজা

অস্ট্রেলিয়া থেকে ফিরেই প্রশ্নটার মুখোমুখি হয়েছিলাম, কে জিতবে এবারের বিশ্বকাপ? বিমানবন্দরের সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলাম, চ্যাম্পিয়ন হবে অস্ট্রেলিয়া। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ফাইনালে তাদের দাপুটে জয়, মাইকেল ক্লার্ক আর তাঁর সতীর্থদের ট্রফি উঁচিয়ে ধরা—সবই অনুমিত ছিল।
বিশ্বকাপের আগে এবং বিশ্বকাপ শুরুর পরও অনেকে দক্ষিণ আফ্রিকার সম্ভাবনার কথাও বলেছে। কিন্তু আমার কখনোই মনে হয়নি এই দলটা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হতে পারবে। অন্তত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ফাইনাল খেলতে হলে তো প্রশ্নই ওঠে না। শেষ পর্যন্ত অবশ্য দক্ষিণ আফ্রিকার বিদায় হলো সেমিফাইনালে। ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার সামনে দাঁড়াল নিউজিল্যান্ড।
ফাইনালটা বাদ দিলে পুরো বিশ্বকাপেই অসাধারণ খেলেছে নিউজিল্যান্ড। গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশ আর সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকা ছাড়া কেউই তাদের চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেনি। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে কষ্ট করে জিতলেও নিজেদের জয়টা নিজেরাই কঠিন করে তুলেছিল কিউইরা। তবে ফাইনালে নিউজিল্যান্ড দেখল অন্য অস্ট্রেলিয়াকে। পঞ্চম শিরোপা জিতে অস্ট্রেলিয়া আবারও জানাল বড় মঞ্চে তারা আসলেই অপ্রতিরোধ্য। ফাইনালে প্রতিপক্ষকে কোনো সুযোগই দেয় না দলটা।
আমার ধারণা, ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের সামনে সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল মেলবোর্নের মাঠ। নিজেদের দেশে এর আগের ম্যাচগুলো তারা খেলেছে ছোট মাঠে। মিস হিটগুলোও সেসব মাঠে বেশির ভাগই ছক্কা হয়ে যায়। এমসিজিতে সেগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ক্যাচ। তা ছাড়া এমসিজিতে ছয় বছর আগে খেলা একটা মানসিক বাধাও ছিল নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটারদের কাছে। বিশ্বকাপ ফাইনালের আগে এই মাঠে তারা সর্বশেষ ওয়ানডে খেলেছে ২০০৯ সালে। সর্বশেষ টেস্ট খেলেছে ১৯৮৭-এর ডিসেম্বরে।
অস্ট্রেলিয়ায় এক মাঠের সঙ্গে আরেক মাঠের উইকেটের মিল নেই। অ্যাডিলেডে খেলার পর আমাদের মনে হয়েছিল সিডনিতেও ও রকম উইকেট পেলে ভালো হবে। কিন্তু সিডনিতে গিয়ে পেলাম ঘাস। সে জন্যই বলছি, এমসিজিতে খেলার অনভ্যস্ততা একটা বড় সমস্যা হয়ে থাকতে পারে নিউজিল্যান্ডের জন্য। তা ছাড়া অস্ট্রেলিয়া দলের সঙ্গে ছিল ৯০ হাজারেরও বেশি দর্শকের সমর্থন। পরিস্থিতি যখন এত দিক দিয়ে একটা দলের বিপক্ষে চলে যায়, তখন ভালো কিছু করা আসলেই কঠিন।
সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ান খেলোয়াড়দের দুর্দান্ত ফর্ম তো ছিলই। নিউজিল্যান্ড দল হিসেবে যত ভালোই খেলুক, ম্যাককালাম, অ্যান্ডারসন আর এলিয়ট ছাড়া কার ফর্মটা ভালো ছিল? তুলনায় অস্ট্রেলিয়া দলেই ফর্মে থাকা খেলোয়াড় বেশি। বিশেষ করে তাদের ব্যাটিংটা ছিল দুর্দান্ত। অস্ট্রেলিয়ার উইকেটে ভালো ফল পেতে হলে এটাই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। তবে ফাইনালের আগে একটা দিক দিয়ে এগিয়ে ছিল ব্ল্যাক ক্যাপরা—বোলিং আক্রমণ। পেস বোলিংয়ে দুই দলই সমান থাকলেও নিউজিল্যান্ডকে এগিয়ে দিয়েছিল স্পিন। ড্যানিয়েল ভেট্টোরির মতো একজন বোলার যে দলে থাকবে, তাদের পিছিয়ে থাকার কারণও নেই।
বিশ্বকাপের ফাইনাল দিয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায় নিল ভেট্টোরি। তবে ক্রিকেট থেকে কখনো হারিয়ে যাবে না তার উজ্জ্বল কীর্তি। চোটের কারণে প্রায় দেড় বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে দূরে থাকার পর বিশ্বকাপের ঠিক আগেই আবার দলে ফেরে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হোম সিরিজ খেলল, ক্যারিয়ার শেষ করল বিশ্বকাপ দিয়ে। আমি বলব বিশ্বকাপের মতো বড় টুর্নামেন্টের আগে ভেট্টোরির মতো অভিজ্ঞ একজনকে দলে ফেরানোর সিদ্ধান্তটা পক্ষে গেছে নিউজিল্যান্ডের। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হতে না পারলেও প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠা তো হলো।