তুলনা

অলংকরণ: তুলি
অলংকরণ: তুলি

বাসায় যাব বলে অফিস থেকে বের হলাম বেলা একটার দিকে। কাছেপিঠে বাসা বলে দুপুরের খাবার বাসায় গিয়েই খাই। বাজার মোড় পেরিয়ে নাক বরাবর রাস্তার মাথায় কলোনি। এখানেই আমার বাসা। দুপুরের তীব্র রোদে রাস্তাটা কেমন চিকচিক করছে। পুরো রাস্তায় শুধু একজন রিকশাওয়ালাকে দেখা যাচ্ছে। রোদ মাথায় দাঁড়িয়ে আছেন। আমি হাঁটছি। রিকশাওয়ালার প্রায় কাছাকাছি আসতে খেয়াল করলাম, এক ব্যক্তি তাঁর সঙ্গে ভাড়া নিয়ে দর-কষাকষি করছেন। সেটাকে তর্ক বলা যায়। লোকটি তীক্ষ্ণ গলায় চেঁচিয়ে বলছে, ‘ভাড়া এত বেশি চাও ক্যান? কদিন ধরে রিকশা চালাও...।’ তর্কের একপর্যায়ে লোকটা হঠাৎ রিকশাওয়ালার শার্টের কলার ধরে ঝাঁকি দিল। আমার চোখে চোখ পড়তেই মধ্যবয়স্ক রিকশাচালক অসহায় ভঙ্গিতে খুব লজ্জা পেলেন। আমি বিষয়টি খেয়াল করিনি ভাব ধরে হাঁটার গতি একটু বাড়ালাম। প্রায় আমার বাসার কাছে চলে এসেছি। গেটের কাছে আসতেই শুনতে পেলাম কা কা শোরগোল। পুরো কলোনি মাথায় তুলেছে শত শত কাক। বিষয়টি কী? নিরাপত্তাকর্মী বলেন, কিছুক্ষণ আগে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একটা কাক মারা গেছে। সে কারণেই এই কাকের মিছিল। মুহূর্তের মধ্যে মনটা খারাপ হয়ে গেল—মানুষের আর কাকের মধ্যে অনেক ফারাক। তবুও স্বজাতির প্রতি সহমর্মিতা ওদের আছে। অন্যের কষ্ট অনুভব করার মতো ক্ষমতাও সম্ভবত আছে। ওরা একজনের মৃত্যুতে মর্মাহত হয়, প্রতিবাদ করে, চিৎকার করে। আর আমরা? দুই টাকা ভাড়া বাড়িয়ে চাইলে শার্টের কলার ধরে ঝাঁকি দিই, দর্শক হই, কেউ আবার মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে ফেসবুকে আপলোড করি।
এসব ভাবতে ভাবতে দুপুরের খাবার শেষ করি। যেতে হবে অফিসে।
এস এম নূরনবী
নলছিটি, ঝালকাঠি