টেস্টেও জয়ে চোখ বাংলাদেশের

সাকিব আল হাসান তাকিয়ে নিজের ব্যাটের দিকে। তাঁর দিকে তা​কিয়ে বাংলাদেশ l প্রথম আলো
সাকিব আল হাসান তাকিয়ে নিজের ব্যাটের দিকে। তাঁর দিকে তা​কিয়ে বাংলাদেশ l প্রথম আলো

র‌্যাঙ্কিং?
—সে তো ক্যালেন্ডারের পাতার চেয়েও দ্রুত উল্টে যায়।
বড় দল-ছোট দলের পার্থক্য?
—সেটাও যে কখনো কখনো কতটা কাগুজে, তা ওয়ানডে সিরিজ আর টি-টোয়েন্টিতেই দেখেছে বিশ্ব।
এবার বলুন, আর কী আছে পাকিস্তানের?
আছে মিসবাহ-উল-হকের মতো একজন ধীরস্থির অধিনায়ক, আছে ৯৬ টেস্টে আট হাজারের ওপরে রান করা ইউনিস খানের মতো অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। কিংবা বলতে পারেন, বাংলাদেশ দল আজ যেখানে মাত্র ৮৯তম টেস্ট ম্যাচটি খেলতে নামছে, পাকিস্তানের আছে ৩৮৭টি টেস্ট খেলে ফেলার গৌরবময় অভিজ্ঞতা। কিন্তু সেসবও যে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিচ্ছেন মুশফিকুর রহিম আর চন্ডিকা হাথুরুসিংহে! কাল খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে অনুশীলন-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ দলের কোচ-অধিনায়ক বুঝিয়ে দিলেন, পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজেও তাঁদের লক্ষ্য শুধুই জয়।
চন্ডিকা হাথুরুসিংহে: আমরা চাই প্রতিটি সিরিজই জিততে। তাই বলে আমরা অতি আত্মবিশ্বাসী নই বা প্রতিপক্ষকে সহজও ধরে নিচ্ছি না। আমরা আমাদের সেরা খেলাটা খেলার চেষ্টা করব এবং আমার বিশ্বাস তা করতে পারলে যেকোনো দলকেই হারানো সম্ভব।
মুশফিকুর রহিম: ড্র বা হারের জন্য কেউ টেস্ট খেলে না...আমরা অবশ্যই জয় চাই। আমাদের যে বোলিং আক্রমণ; আমাদের ২০ উইকেট নেওয়ার মতো বোলার আছে। আমাদের ব্যাটসম্যানরা ৬০০-এর বেশি রান করার সামর্থ্য রাখে। সঙ্গে ফিল্ডাররাও যদি সব সুযোগ নিতে পারি, তাহলে ফলাফল আমাদের পক্ষেই আসবে।
টেস্ট সিরিজের লক্ষ্য নিয়ে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে একাধিক প্রশ্ন হয়েছে। জয় ছাড়া অন্য কিছুর কথা কখনোই বলেননি কোচ-অধিনায়ক। মুশফিক যেমন আরেকবার বলছিলেন, ‘আমার মনে হয় জয় ছাড়া অন্য কিছু চিন্তা করার নেই। আমাদের দলে ম্যাচ জেতানোর মতো অনেক খেলোয়াড় আছে। আর এটা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ; নতুন এই চ্যালেঞ্জ নেওয়ার জন্য আমরা কেন প্রস্তুত হব না? জয়ের চিন্তা করাটাই সঠিক হবে।’ একই কথা ঘুরেছে হাথুরুসিংহের মুখেও, ‘আমরা সিরিজ জিততে চাই। এটা আমাদের জন্য চাপ নয়। আমরা এর জন্যই প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
পাকিস্তানের একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবাদিক সোহেল ইমরান। ক্রিকেট কাভার করতে এর আগে বহুবার বাংলাদেশে এলেও অন্যান্যবারের অভিজ্ঞতার সঙ্গে তাঁর এবারের অভিজ্ঞতা মিলছে না। ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টির বাংলাদেশ দল চমক হয়ে ধরা দিয়েছে তাঁর কাছেও। তবে কাল ‘টেস্টে কী হবে’ জিজ্ঞেস করতেই একটুও না ভেবে বলে দিলেন, ‘দুটি সম্ভাবনা আছে। ড্র অথবা পাকিস্তানের জয়।’
পাঁচ দিন মাঠে থাকার সামর্থ্য যে পাকিস্তানের খেলোয়াড়দের চেয়ে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের একটু কমই, সেটা ক্রিকেট সমঝদার বলতেই মেনে নেওয়ার কথা। বড় কোনো চমক না ঘটলে দুই টেস্টের সিরিজে সম্ভাবনার নিক্তি পাকিস্তানের দিকে বেশি ঝুঁকে থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ওয়ানডেতে পাকিস্তানকে ‘বাংলাওয়াশ’ এবং একমাত্র টি-টোয়েন্টি ম্যাচটিও অনায়াসে জিতে বাংলাদেশ দলের আত্মবিশ্বাস আকাশ ছুঁয়েছে। সঙ্গে মানুষের প্রত্যাশাও যে বেড়েছে, তার প্রমাণ কাঠফাটা রোদে দাঁড়িয়েও টেস্টের টিকিটের জন্য খুলনাবাসীর দীর্ঘ সারি। তা দর্শকদের এমন প্রত্যাশা আবার চাপ হয়ে বসবে না তো? মুশফিক অন্তত সে রকম মনে করছেন না, ‘চাপের কিছু নেই। তবে চ্যালেঞ্জ বলতে পারেন। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি যেমন গেছে টেস্ট সিরিজটাও যাতে সে রকম যায়, সেই চেষ্টা করব। আর প্রত্যাশা বেশি থাকলে খেলোয়াড়দের জন্যও ভালো হয়; তখন তাদের সেরাটা বেরিয়ে আসে।’
পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে বাংলাদেশের সবচেয়ে সুখের স্মৃতিটাও প্রায় এক যুগ পুরোনো। ২০০৩ সালের মুলতান টেস্টের স্মৃতি এখনো মনে আছে মুশফিকের। সেই থেকে আছে টেস্টে পাকিস্তানকে কখনোই হারাতে না পারার আফসোসও। তবে সীমিত ওভারের ক্রিকেটের সাফল্যের কারণে এবারের প্রেক্ষাপটটা ভিন্ন মনে হচ্ছে অধিনায়কের কাছে, ‘এর আগে পাকিস্তানের বিপক্ষে যতগুলো টেস্ট খেলেছি, এতটা ভালো মানসিক অবস্থা নিয়ে কখনোই মাঠে নামেনি বাংলাদেশ। এবার পাঁচ দিন ভালো ক্রিকেট খেলতে পারার আত্মবিশ্বাস আমাদের আছে।’ হাথুরুসিংহের কথায়ও একই সুর। এর পরও কোচ মনে করিয়ে দিলেন, ‘সবকিছু নির্ভর করছে আমরা টেস্টটা কীভাবে শুরু’ করলাম তার ওপর। কালকের (আজ) প্রথম সেশনের দিকেই তাকিয়ে আছি এখন।’
বাংলাদেশ দলের রণকৌশলে সর্বাধিক গুরুত্ব পাচ্ছে পাকিস্তানের দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান ইউনিস খান ও মিসবাহ-উল-হক। মুশফিকের কথায়ও তা পরিষ্কার, ‘আমাদের বোলারদের মূল লক্ষ্য থাকবে এই দুজন ব্যাটসম্যানকে চাপে রাখা। যেন দ্রুত তাদের আউট করতে পারি।’ অবশ্য ইউনিস-মিসবাহকে প্রাপ্য সম্মানটুকু দিলেও নিজেদের পিছিয়ে রাখতে রাজি নন বাংলাদেশ অধিনায়ক, ‘টেস্ট ক্রিকেটে তারা দারুণ ব্যাটসম্যান। তবে তাদের মাথায়ও কিন্তু থাকবে ৪-০ (ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে)। তারা মানসিকভাবে একটু হলেও পিছিয়ে থাকবে।’
হয়তো তাই। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটটা যে শুধু মনের খেলাই নয়! বল-ব্যাটের সামর্থ্য আর পাঁচ দিন মাঠে দাপট দেখানোর লড়াইও!