সর্বকালের সেরা জুটিতে তামিম-ইমরুল

অনেক অনেক রেকর্ডের পাশে নাম লেখানো এক জুটি। ছবি: শামসুল হক
অনেক অনেক রেকর্ডের পাশে নাম লেখানো এক জুটি। ছবি: শামসুল হক

ইশ্‌, আর মাত্র কটা দিন। আর কটা দিন বেঁচে থাকলে, আজকের দিনটা দেখে হয়তো খুশিই হতেন জিওফ পুলার। আফসোস, গত বছর বড়দিনের ঠিক পর দিন, ৭৯ বছর বয়সে মারা গেছেন এই ইংলিশ ব্যাটসম্যান।

ক্রিকেটের গ্রন্থকীটেরা ছাড়া পুলারকে কেউ মনে রেখেছে কিনা সন্দেহ। ২৮ টেস্টের ক্যারিয়ারে দুই হাজার রানও করেনি এমন ব্যাটসম্যানকে মনে রাখার দায় ইতিহাসেরও নেই। যেকোনো পরিস্থিতিতে ঘুমিয়ে পড়ার ‘আশ্চর্য’ ক্ষমতার কারণে সতীর্থদের কাছ থেকে ‘নডি’ ডাকনামা পেয়ে যাওয়া এই প্রয়াত ইংলিশ ব্যাটসম্যানের যদিও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আছে ২১ হাজার রান।
কিন্তু সে জন্য নয়, পুলার টেস্ট ইতিহাসে ছোট্ট একটা জায়গায় নিজের নাম আলাদা করে রেখে দিয়েছিলেন। সেই জায়গাটিতে তাঁর নামের পাশে আছেন যিনি, তিনি অবশ্য সন্দেহাতীতভাবেই কিংবদন্তি—কলিন কাউড্রে। ১৯৬০ সালে ওভাল টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পুলারকে সঙ্গে নিয়ে কাউড্রে ২৯০ রানের জুটি গড়েছিলেন। ম্যাচের তৃতীয় ইনিংসে উদ্বোধনী জুটিতে সেটাই ছিল সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। একটুর জন্য তিন শ ছুঁতে পারেনি সেই জুটি।
স্বর্গ থেকে হয়তো পুলারের পাশে বসে কাউড্রে দেখলেন, ৫৫ বছর আগে তাঁরা যা পারেননি, সেটাই করে দেখালেন বাংলাদেশের দুই ব্যাটসম্যান। এই প্রথম টেস্টের তৃতীয় ইনিংসে উদ্বোধনী জুটিতে এল ৩০০ রান। দলের দ্বিতীয় ইনিংসেও উদ্বোধনী জুটিতে ৩০০ রান এল এই প্রথম।
তামিম-ইমরুল মিলে যা খেলেছেন, তাতে আক্ষেপের সুযোগ নেই। তবে আজ ম্যাচ শেষে রেকর্ড বইটই ঘাঁটলে দুজনের একটু হলেও কষ্ট লাগবে এই ভেবে—আর মাত্র ১৭টি রানই তো দরকার ছিল। ইশ্‌, মাত্র ১৭ রান। কী হতো? টেস্ট ক্রিকেটের ১৩৮ বছরের ইতিহাস। খুলনা টেস্টটা যেমন ২ হাজার ১৫৯তম টেস্ট। উদ্বোধনী জুটি হয়েছে ৭ হাজার ৮৯৯ বার। পরিসংখ্যানের এত এত গিজগিজে ভিড়ে তামিম-ইমরুল সর্বকালের সেরা দশ ওপেনিং জুটির তালিকায় নাম লেখাতে পারতেন। মাত্র ১৭ রানের জন্য হলো না।
অবশ্য যা হয়েছে, সেটাও বা কম কীসে? উদ্বোধনী জুটির ইতিহাসে এই জুটির ঠাঁই এখন ১২ নম্বরে। পেছনে ফেলেছেন এমন একটা জুটিকে, যাঁদের ইতিহাসেরই সর্বকালের সেরা জুটি মানা হয়। গর্ডন গ্রিনিজ আর ডেসমন্ড হেইন্স। ১৯৯০ সালের অ্যান্টিগা টেস্টে ২৯৮ করেছিলেন এই দুজন। ২৯৮ রানের আরেকটি উদ্বোধনী জুটির রেকর্ডের অংশীদার ছিলেন এমন একজন তো প্রেসবক্সে বসেই তামিম-ইমরুলকে প্রশংসার বৃষ্টিতে ভেজালেন—আমির সোহেল।
একটি রেকর্ডে অবশ্য সর্বকালের সেরা দশ জুটির তালিকায় ঠিকই নাম উঠে গেল দুজনের। দলের দ্বিতীয় ইনিংসে যেকোনো উইকেট জুটিতে রান করার তালিকায় ঠিক দশ নম্বরে আছে ৩১২ রানের এই জুটি। ১৯৯১ ওয়েলিংটন টেস্টে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচের তৃতীয় আর দলের দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৬৭ রানের জুটি গড়েছিলেন মার্টিন ক্রো আর অ্যান্ড্রু জোন্স। সেটি ​অবশ্য ছিল তৃতীয় উইকেটে।
আরেকটি তালিকায় এই জুটি উঠে এসেছেন সেরা পাঁচে! সাধারণত এই উপমহাদেশের উইকেটগুলো হয় রানপ্রসবা। ব্যাটসম্যানদের বন্ধু। ক্রিকেটের বড় বড় জুটিগুলোর ভেন্যুর দিকে তাকালেই তাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই উঠে আসে উপমহাদেশেরই কোনো মাঠের নাম। সেই এশিয়ায় খেলা টেস্টে উদ্বোধনী জুটিতে ঠিক পাঁচে আছেন তামিম-ইমরুল। এশিয়ায় ৪০০ রানের উদ্বোধনী জুটিই আছে তিনটি। ৪১৫ রান নিয়ে সবার ওপরে নিল ম্যাকেঞ্জি আর গ্রায়েম স্মিথ। কোন দলের বিপক্ষে? বাংলাদেশ!
২০০৮ সালের সেই চট্টগ্রাম টেস্ট দেখার অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের যে সমর্থকদের আছে, তাঁরাই খুব ভালো করে জানেন, কী এক অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করে দেখতে হয়েছিল ম্যাচটি। টস জিতে ব্যাট করতে নেমেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথম দিনের দৃশ্যটা যেন ছিল লুপে আটকে পড়া ছোট্ট একটা ভিডিও। একপ্রান্ত থেকে বাংলাদেশের বোলাররা বল করে যাচ্ছেন, স্মিথ নয়তো ম্যাকেঞ্জি মেরেই চলেছেন। রানের পর রান, উইকেটের দেখা নেই। সারাটা দিন!
তামিম-ইমরুলরা সেই অভিজ্ঞতাটা ফিরিয়ে দিলেন। বুঝিয়ে দিলেন, সাদা পোশাকেও রঙিন স্বপ্ন দেখার দিন চলে এসেছে। আসছে দিন সমূহ উজ্জ্বল!
প্লিজ ইমরুল, প্রতি ম্যাচে না হোক, মাঝে মধ্যেই তামিমকে বলবেন, ‘চল, রেকর্ড ভাঙি!’