বরফ গলবে ফিফা-উয়েফার?

মনে হচ্ছে দুজনের দুটি পথ দুটি দিকে বেঁকে গেছে, আবার এক পথে মেলার সম্ভাবনা আপাতত নেই। কিন্তু এ তো প্রেমিক-প্রেমিকার বিরহকাতর উপাখ্যান নয়, এ হচ্ছে নিরেট অর্থের খেলা। এখানে মান-অভিমানের কোনো সুযোগ নেই। উয়েফা তাই যতই বলুক বিশ্বকাপ বর্জন করবে, সেপ ব্ল্যাটার যতই উয়েফার বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করুন, নিজেদের স্বার্থেই দুই পক্ষকে আবার এক হতে হবে।
গত কয়েক দিনে বিশ্ব ফুটবলে যা হয়েছে, তাতে ফিফা-উয়েফা এখন যেন সম্মুখসমরের প্রতিপক্ষ। কুরুক্ষেত্রের মতো এখানেও আছে নানা শক্তি। ফিফা সভাপতি ব্ল্যাটারের পক্ষে যেমন রাশিয়া আর প্রায় পুরো এশিয়া-আফ্রিকা, উয়েফা পাশে পাচ্ছে পুরো ইউরোপের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মতো বিশ্বশক্তি। সভাপতি নির্বাচনের আগে প্লাতিনি হুমকি দিয়েছিলেন, ব্ল্যাটার পুনর্নির্বাচিত হলে উয়েফা এমনকি বিশ্বকাপ বর্জন করতে পারে। ইংলিশ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডেভিড গিলও ব্ল্যাটারের অধীনে ফিফার সহসভাপতি পদে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। কাল ইংল্যান্ড ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি প্রিন্স উইলিয়ামও ফিফাকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর পর আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু এখন প্লাতিনি বলছেন, ফিফার সঙ্গে সম্পর্কছেদের কোনো সম্ভাবনাই নেই উয়েফার। ব্ল্যাটার তো আরও স্পষ্ট করে দিলেন, ‘ফিফার উয়েফাকে দরকার, উয়েফার ফিফাকে।’
তারপরও দুই পক্ষের মধ্যে অনেকটা বরফ এখনো গলতে বাকি। সেই কাজটা করতে এগিয়ে এসেছেন ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার। সাবেক উয়েফা সভাপতি বলছেন, ‘আমার মনে হয় ফিফা-উয়েফা এখন দুই মেরুতে। এখন দুই পক্ষের মধ্যে যোগাযোগ হতেই হবে। খুব শিগগির কথা বলতে হবে। যেটা হচ্ছে, তা শুধু দুই সংগঠনের জন্যই নয়, ফুটবলের জন্যও ক্ষতিকর।’
১৯৯৮ সালে ব্ল্যাটার দায়িত্ব নেওয়ার পরের ১৭ বছরে ফিফাকে অনেক বেশি বৈশ্বিক, অনেক বেশি শক্তিশালী করেছেন। ব্যবসায়িকভাবে করেছেন লাভজনক। উয়েফার দায়িত্বে প্লাতিনির ভূমিকাও এমনই গুরুত্বপূর্ণ। ২০১০ ও ২০১৪ বিশ্বকাপ থেকে ফিফা প্রায় ৫৭০ কোটি ডলার আয় করেছে। ওদিকে সামনের বছর ইউরো থেকে উয়েফাও প্রায় ৫০০ কোটি ডলার মুনাফার আশা করছে। আর ক্রমেই জনপ্রিয় হতে থাকা চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে উয়েফার আয় তো বাড়ছেই।
ব্ল্যাটারকে ক্ষমতা থেকে হটাতে পারল না বটে উয়েফা, কিন্তু ফিফায় প্রভাব বাড়াতে ব্ল্যাটারের ওপর চাপ তারা দিয়েই যাবে। ফিফাও জানে, ইউরোপ ছাড়া বিশ্বকাপ জৌলুশ হারাবে, আয়ে ধস নামবে।
ফিফা-উয়েফার হাতে সাদা পতাকাই আসলে দেখতে চায় এখন ফুটবল-বিশ্ব। এএফপি, রয়টার্স।