ভারতের জন্য বিপদ হতে পারেন যাঁরা

ভারতের বিপক্ষে তিন জয়ের দুটোতেই ম্যাচ সেরা মাশরাফি। ফাইল ছবি
ভারতের বিপক্ষে তিন জয়ের দুটোতেই ম্যাচ সেরা মাশরাফি। ফাইল ছবি

বাংলাদেশ-ভারত সিরিজ নিয়ে দারুণ এক বিজ্ঞাপন তৈরি করেছে খেলার চ্যানেল স্টার স্পোর্টস। বিজ্ঞাপনে বেশ ভালোভাবেই তুলে ধরা হয়েছে বাংলাদেশকে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম প্রায় প্রতিদিনই বাংলাদেশ-সংক্রান্ত খবর প্রকাশ করছে। বোঝাই যাচ্ছে, এবার বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজ নিয়ে ভারত বেশ ‘সিরিয়াস’। এর আগে কখনো ভারতীয় মাধ্যমগুলো এতটা গুরুত্ব দেয়নি বাংলাদেশকে।

ভারতীয় দলের জন্য বিপদের কারণ হতে হতে পারেন—বাংলাদেশের এমন পাঁচ বোলার-ব্যাটসম্যানের তালিকা প্রকাশ করেছে ভারতের শীর্ষ সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি। সে তালিকায় সৌম্য সরকার, তাইজুল ইসলামের মতো তরুণ তুর্কিরা যেমন রয়েছেন, রয়েছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা, সাকিব আল হাসানের মতো পরীক্ষিত সেনানীরাও।
তালিকায় এক নম্বরে থাকা তামিম ইকবাল সম্পর্কে এনডিটিভি লিখেছে, ‘দুই ওয়ানডে সেঞ্চুরি ও টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি নিয়ে দারুণ ফর্মে রয়েছেন তামিম। ভারতের বিপক্ষে তাঁকে নজরেই রাখতে হবে।’ ভারতের বিপক্ষে তামিমের পারফরম্যান্স যথেষ্ট উজ্জ্বল। ২ টেস্টে করেছেন ২৩৪ রান। এর মধ্যে আছে ২০১০ সালে জানুয়ারিতে ঢাকা টেস্টে সেই ১৫১ রানের ইনিংসটি। ওয়ানডেতেও ভারতের বিপক্ষে হেসেছে তামিমের ব্যাট। ১৪ ম্যাচে করেছেন ৪২৬ রান। সেঞ্চুরি না থাকলেও আছে ৫টি ফিফটি।
ব্যাটসম্যানদের তালিকায় দুইয়ে আছেন সর্বশেষ বিশ্বকাপে দুর্দান্ত খেলা মাহমুদউল্লাহ। ভারতের বিপক্ষে দুই টেস্টে মাহমুদউল্লাহর রান ১৮৫, ১১ ওয়ানডেতে করেছেন ২৬৯ রান। তিনে থাকা মুশফিকুর রহিমকে বলা হয়েছে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন-আপের ‘মেরুদণ্ড’! দারুণ ছন্দে থাকা মুশফিক গত ফেব্রুয়ারির পর এ পর্যন্ত ওয়ানডেতে পেয়েছেন ৪ ফিফটি ও এক সেঞ্চুরি। ওয়ানডেতেও সবচেয়ে সফল ব্যাটসম্যান মুশফিক। ১৫ ম্যাচে ৪৪৮ রান করে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবার ওপরে এ ডানহাতি। টেস্টেও মুশফিকের পারফরম্যান্স দারুণ। দুই টেস্টে রান ১৮৫। ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে-টেস্ট দুই সংস্করণে একমাত্র বাংলাদেশি সেঞ্চুরিয়ান মুশফিক।
ক্যারিয়ারের শুরুতেই আলো ছড়ানো সৌম্যকে আছে এ তালিকায়। এপ্রিলে পাকিস্তানের বিপক্ষে পেয়েছেন ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি। কদিন আগে বিসিএলের শেষ পর্বেও পেয়েছেন সেঞ্চুরি, যা ভারতের জন্য সতর্কবার্তা। ওয়ানডেতে পারফরম্যান্স বলার মতো না হলেও সাম্প্রতিক সময়ে টেস্টে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা ইমরুলকে তালিকায় না রেখে উপায় কী! সর্বশেষ পাঁচ টেস্টে তিন সেঞ্চুরি পেয়েছেন এ বাঁহাতি। ১০ জুন শুরু হতে যাওয়ার ফতুল্লা টেস্টে এ বাঁহাতির ব্যাট জ্বলে উঠলে বড় দুর্ভোগই অপেক্ষা করছে ভারতের জন্য।

ফর্মে থাকা তামিমও হতে পারেন ভারতের জন্য বিপদ। ফাইল ছবি
ফর্মে থাকা তামিমও হতে পারেন ভারতের জন্য বিপদ। ফাইল ছবি

বোলারদের মধ্যে প্রথমেই রয়েছেন মাশরাফি। ভারতকে পেলেই জ্বলে ওঠেন ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’। ভারতের বিপক্ষে যে তিনটি জয় পেয়েছে বাংলাদেশ তার দুটির মূল নায়ক তিনি। মাশরাফিকে তাই বলা হচ্ছে ‘ওয়ানডেতে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের সবচেয়ে ভয়ংকর অস্ত্র’! ১৩ ওয়ানডেতে ১৬ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশি বোলারদের মধ্যে তাঁর অবস্থান দুইয়ে। ব্যাটসম্যানের তালিকায় না রাখলেও বোলারদের তালিকায় রয়েছেন সাকিব। ভারতের বিপক্ষে ৪ টেস্টে এ বাঁহাতি অলরাউন্ডার নিয়েছেন ৯ উইকেট, ব্যাট হাতে করেছেন ১৪৭ রান। ওয়ানডেতে সাকিব আরও উজ্জ্বল। ১২ ম্যাচে ব্যাট হাতে করেছেন ৩৭০ রান, বল হাতে নিয়েছেন ১৪ উইকেট। ২০১২ সালে এশিয়া কাপে সেই ঐতিহাসিক জয়ের ম্যাচসেরা ছিলেন সাকিব।
বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচে দুটো দৃশ্য ‘আইকনিক’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিরাট কোহলিকে ফিরিয়ে রুবেল হোসেনের এবং অজিঙ্কা রাহানাকে ফিরিয়ে তাসকিন আহমেদ-মাশরাফির উড়ন্ত উদ্‌যাপন! কোহলির মতো আক্রমণাত্মক মেজাজি ব্যাটসম্যানকে আটকাতে চাই রুবেলের মতো আক্রমণাত্মক বোলার। আবারও দুজনের দুর্দান্ত লড়াই দেখার অপেক্ষায় দর্শক।
ভারতকে নিয়ে তরুণ পেসার তাসকিনের একটা দুঃখ আছে। গতবার এই ভারতের বিপক্ষে হিরণ্ময় অভিষেক হয়েছিল। অভিষেকেই নিয়েছিলেন ২৮ রানে ৫ উইকেট। সে ম্যাচ ৫৮ রানে অলআউট হয়ে দল ৪৭ রানে হারায় অভিষেকটা হলো ভুলে যাওয়ার মতোই। ওই সিরিজে সর্বোচ্চ ৭ উইকেট ছিল তাসকিনেরই। এবার সেই দুঃখ ঘোচানোর পালা। পারবেন তাসকিন? পারবেন আবারও অধিনায়ক মাশরাফির সঙ্গে বুকে বুক মেলাতে?
তালিকায় আছেন তাইজুলও। সাদা পোশাকে এ স্পিনারের ঘূর্ণি বিষে এরই মধ্যে নীল হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, জিম্বাবুয়ে ও পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানরা। এবার কি তবে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের পালা?