ভারত সিরিজে নিষিদ্ধ আপত্তিকর প্ল্যাকার্ড-ফেস্টুন

এই ধরনের ব্যানার-প্ল্যাকার্ড ভারত সিরিজে চলবে না। ফাইল ছবি
এই ধরনের ব্যানার-প্ল্যাকার্ড ভারত সিরিজে চলবে না। ফাইল ছবি

বরাবরই মাঠের প্রাণ দর্শক। যতই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হোক না কেন, দর্শক ছাড়া খেলা জমে? দর্শকেরা গ্যালারি রাঙিয়ে তোলে হরেকরকম প্লাকার্ড-ফেস্টুন, মজার সব স্লোগানে। বাংলাদেশের দর্শকেরা ভারতের সিরিজেও নিশ্চয় বাহারি প্লাকার্ড-ফেস্টুন-স্লোগানে মাতিয়ে তুলবেন গ্যালারি। কিন্তু এবার এ ব্যাপারে সতর্কই থাকতে হবে। কেননা, আপত্তিকর প্ল্যাকার্ড-ফেস্টুন, স্লোগান-মন্তব্য নিষিদ্ধ করছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
গত মার্চে মেলবোর্নে কোয়ার্টার ফাইনালের পর এক ধরনের ভারত-বিরোধী আবেগ তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেট-সমর্থকদের মধ্যে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, আসন্ন সিরিজেও তার প্রভাব দেখা যেতে পারে। এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, অনলাইন মিডিয়া, টিভি বিজ্ঞাপনে সেটির প্রমাণও মিলছে। ভারতের বিপক্ষে কোনো সিরিজের আগে এমনটা আগে দেখা যায়নি। স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টি নিয়ে খুব সতর্ক বিসিবি।
বিসিবির নিরাপত্তাবিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান মনজুর কাদের বিষয়টির ব্যাখ্যা দিয়ে প্রথম আলোকে বললেন, ‘আপত্তিকর প্ল্যাকার্ড-ফেস্টুন, এমনকি আপত্তিকর স্লোগানও নিষিদ্ধ। কেউ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে নিরাপত্তাকর্মীরা ব্যবস্থা নেবে। মনে রাখতে হবে এটা খেলা, কোনো যুদ্ধ নয়। আমরা মাঠের খেলায় বিশ্বাসী। এমনিতে ভারত-পাকিস্তান খুব স্পর্শকাতর বিষয়। তাই আমাদের কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, মাঠে আপত্তিকর কোনো কর্মকাণ্ড গ্রহণযোগ্য হবে না।’
এখানে ‘আপত্তিকর’ বলতে কী বোঝানো হচ্ছে, জানতে চাইলে মনজুর কাদের বললেন, ‘বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক খুবই মধুর। এ সম্পর্কটা ক্ষুণ্ন করে এমন কোনো মন্তব্য-বক্তব্য সংবলিত প্ল্যাকার্ড-ফেস্টুন গ্রহণযোগ্য হবে না। সুন্দর পরিবেশ বজায় রাখতে হবে গ্যালারিতে। ক্রিকেট উপভোগ করতেই মাঠে আসবে মানুষ। এখানে কেউ যদি যুদ্ধ বাধিয়ে দিতে চায়, সেটা নিশ্চয় গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।’

শোনা যাচ্ছে, ভারতীয় দলকে বিশেষ নিরাপত্তা দেওয়া হবে। এটি কি কোনো শঙ্কা থেকে? মনজুর কাদের জানালেন, বিষয়টি তা নয়। অন্য দলকে যেভাবে নিরাপত্তা দেওয়া হয় ভারত সেটিই পাবে, ‘বাংলাদেশের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা যেকোনো দলকেই আমরা দিয়ে থাকি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে যে বাহিনী নিরাপত্তা দিয়ে থাকে, একই বাহিনী গত ২০১১ বিশ্বকাপেও নিরাপত্তা দিয়েছিল। তারা এবার ভারতীয় দলকেও দেবে। এ নিরাপত্তা প্রতিটি দলের ক্ষেত্রেই দেওয়া হয়। কদিন আগে পাকিস্তান দলকেও একই নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছিল। এমন নিরাপত্তা নিয়মিতই দেওয়া হয়ে থাকে।’
এমনিতে বাংলাদেশের সমর্থকদের ক্রিকেটপ্রেম বরাবরই প্রশংসিত হয়েছে। মাইক আথারটন, যিনি একসময় বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাস নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন, সেই তিনিই ২০১১ বিশ্বকাপ চলার সময় টাইমস-এ বাংলাদেশ সমর্থকদের ক্রিকেট নিয়ে উন্মাদনা দেখার পর লিখেছিলেন, ‘এই দেশ গরিব হতে পারে; ক্রিকেটের চেতনায় দেশটি অনেক অনেক ধনী!’ বাংলাদেশের সমর্থকেরা বরাবরই বিদেশি দলগুলোকে দারুণ আতিথেয়তা দিয়ে এসেছে। তবে এক-দুজনের বাড়াবাড়ি পুরো বিশ্বে ভিন্ন বার্তা দিতে পারে, যেমনটা দিয়েছিল ২০১১ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাসে ঢিল পড়ায়।
এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্যই ক্ষতির। তাই সুনাম রক্ষার দায়িত্ব শুধু বিসিবির নয়, সমর্থকদেরও।