ছিটকে গেলেন মাহমুদউল্লাহ

আঙুলে বাঁধা স্প্লিন্টার তো বটেই, মাহমুদউল্লাহর বিষণ্ন চেহারাও বলছে সিরিজ থেকে তাঁর ছিটকে যাওয়ার দুঃসংবাদ। কাল মিরপুরে l প্রথম আলো
আঙুলে বাঁধা স্প্লিন্টার তো বটেই, মাহমুদউল্লাহর বিষণ্ন চেহারাও বলছে সিরিজ থেকে তাঁর ছিটকে যাওয়ার দুঃসংবাদ। কাল মিরপুরে l প্রথম আলো

‘বিরাট কোহলি পারেননি, শিখর ধাওয়ান পারেননি, রোহিত শর্মা পারেননি। আইসিসি বিশ্বকাপ ২০১৫-তে টানা দুই সেঞ্চুরি করলেন মাহমুদউল্লাহ...ছোটরা আর ছোট নেই।’
কয়েক দিন ধরে স্টার স্পোর্টসে এই কথাগুলোই হিন্দিতে শুনছেন। বাংলাদেশ-ভারত সিরিজের প্রোমো, যার শেষ দৃশ্যে মাহমুদউল্লাহর বিখ্যাত হয়ে যাওয়া সেই উড়ন্ত চুম্বন। বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরির পর সেটি বাতাসে ভাসিয়ে দিয়েছিলেন স্ত্রী-সন্তানের উদ্দেশে।
বাংলাদেশের বিপক্ষে আসন্ন সিরিজটাকে বাজারজাত করতেই ভারতীয় চ্যানেলের অমন বিজ্ঞাপন। তবে এখন যেকোনো সময় এটি উধাও হয়ে যাবে টিভি পর্দা থেকে। স্টার স্পোর্টস হয়তো বানাবে নতুন কিছু। ১০ জুন থেকে শুরু হতে যাওয়া সিরিজে যে থাকছেন না মাহমুদউল্লাহই!
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে কাল সকালে স্লিপ ক্যাচ অনুশীলন করতে গিয়ে মাহমুদউল্লাহ চোট পান বাঁ হাতের তর্জনীতে। অনুশীলন থেকে উঠে যান সঙ্গে সঙ্গেই। এক্স-রে রিপোর্টে চিড় ধরা পড়ে আঙুলের হাড়ে। জাতীয় দলের ফিজিও বায়েজিদুল ইসলাম খান জানালেন, ‘এ ধরনের ফ্র্যাকচার (চিড়) সারতে তিন থেকে চার সপ্তাহ লাগে। এক্স-রেতে ইনকমপ্লিট ফ্র্যাকচার দেখাচ্ছে। সেটা হলে খুব তাড়াতাড়ি ফেরার সম্ভাবনা থাকে। তবু অন্তত তিন সপ্তাহ লাগবে।’
দুপুরে বিসিবির চিকিৎসক দেবাশিস চৌধুরীর সঙ্গে অ্যাপোলো হাসপাতালে গিয়ে হাতে ব্যান্ডেজ করে আসেন মাহমুদউল্লাহ। চিড়ের ব্যাপারটি নিশ্চিত করেছেন অ্যাপোলোর চিকিৎসকেরাও। দেবাশিস চৌধুরীর মতে, সুস্থ হয়ে মাঠে ফেরার পর পুনর্বাসন এবং অনুশীলন মিলিয়ে মাহমুদউল্লাহর খেলায় ফিরতে লেগে যাবে আরও বেশ কিছুদিন। তার মানে ভারত সিরিজটাই শেষ তাঁর জন্য। বিসিবি কাল প্রথম টেস্টের দলে বিকল্পও নিয়ে নিয়েছে। মাহমুদউল্লাহর দুর্ভাগ্য টেস্ট দলে ফিরিয়েছে নাসির হোসেনকে।
চোটের যা ধরন, ১৮ জুন থেকে শুরু হতে যাওয়া তিন ওয়ানডের সিরিজেও খেলার সম্ভাবনা নেই মাহমুদউল্লাহর। তবে মাহমুদউল্লাহ আশাবাদী। কাল রাতে মুঠোফোনে বলছিলেন, ‘কেন জানি মনে হচ্ছে আমি নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সুস্থ হয়ে উঠব। আমি এখনো আশায় আছি ওয়ানডেতে খেলব। আজ (কাল) এক্স-রে করানোর সময়ও মনে মনে হিসাব করছিলাম ওয়ানডে সিরিজ শুরু হতে আর কয় দিন বাকি।’ বিশ্বকাপে দুর্দান্ত খেললেও পাকিস্তান সিরিজটা ভালো যায়নি। ভারত সিরিজে ভালো খেলার সংকল্প ছিল। কিন্তু চোটের কারণে এখন সিরিজের একমাত্র টেস্টে খেলাই হচ্ছে না। এ জন্য হতাশা থাকলেও মেনে নিচ্ছেন নিয়তিকে। তবে মাহমুদউল্লাহর আশা, ‘আমার বিশ্বাস, দল এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। টেস্টে আমার জায়গায় যে খেলবে সে নিশ্চয়ই ভালো খেলবে। আমাদের দলের সাম্প্রতিক যা ফর্ম তাতে সবারই ভালো খেলার আত্মবিশ্বাস আছে।’ আপাতত ৩-৪ দিন পরিপূর্ণ বিশ্রামে থেকে সাইক্লিং দিয়ে শুরু হবে মাহমুদউল্লাহর মাঠে ফেরার লড়াই।
কাল মাহমুদউল্লাহর চোট পাওয়ার আগে শুনতে হয়েছে আরেকটা দুঃসংবাদও। অনুশীলন করতে মাঠে আসার পথে মিরপুর এলাকাতেই বাসের ধাক্কায় রিকশা থেকে ছিটকে পড়ে আহত হন ওয়ানডে দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। দুই হাতের ওপরের অংশ ও হাঁটুর চামড়া ছিলে গেছে, জখম হয়েছে ডান হাতের তালুতেও। ফিজিও বায়েজিদ অবশ্য আশা দেখালেন, মাশরাফি খুব তাড়াতাড়ি ঠিক হয়ে যাবেন। ফিটনেস ট্রেনিং ও জিম শুরু করবেন কাল-পরশুর মধ্যেই। আর বোলিংয়ে ফেরা নির্ভর করছে তালুর জখম শুকানোর ওপর। সাত-আট দিনের আগে সেটা হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

হাতে ব্যান্ডেজ নিয়েই কাল মাঠ ছাড়লেন দুর্ঘটনায় আহত মাশরাফি l প্রথম আলো
হাতে ব্যান্ডেজ নিয়েই কাল মাঠ ছাড়লেন দুর্ঘটনায় আহত মাশরাফি l প্রথম আলো

নিজের চোট নিয়ে মাশরাফি খুব একটা দুর্ভাবনায় আছেন বলে মনে হলো না। বরাবরের রসিক বরং রসিকতায় মাতলেন তাঁর দুর্ঘটনা নিয়েও। প্রতিদিন এক বন্ধুর মোটরসাইকেল নিয়ে মাঠে এলেও কাল আসছিলেন রিকশায় চড়ে। সে কারণেই নাকি এই দুর্ঘটনা! মোটরসাইকেলে এলে এটা হতো না বলেই মাশরাফির বিশ্বাস। কিন্তু প্র্যাকটিসে আসার জন্য না একটা পুরোনো গাড়ি আছে তাঁর! সেটা কোথায়? মাশরাফির রসিকতা, ‘ওটার ব্রেক লুজ। ওই গাড়ি নিয়ে এলে দেখা যেত আমিই কারও ওপরে তুলে দিয়েছি!’
দুর্ঘটনাকবলিত ক্রিকেটারকে এমন হালকা মেজাজে পেয়ে এক সাংবাদিকের পাল্টা রসিকতা, ‘আপনার রিকশায় ধাক্কা মেরে বাসচালকের প্রতিক্রিয়া কী? আপনাকে চেনেনি?’ হাসতে হাসতে মাশরাফির উত্তর, ‘চেনার সুযোগই দিইনি। পুলিশ চলে এসেছিল। ওনাদের বলেছি, ভাই আমি ঠিক আছি। আপনারা রিকশাওয়ালার জন্য কিছু জরিমানা নিয়ে বাসটাকে ছেড়ে দেন। পরে পুলিশ বাস ছেড়ে দিয়ে আমাকে মাঠে পৌঁছে দিয়েছে।’
ভাবছেন এমন দুর্ঘটনার পর কীভাবে এত হালকা মেজাজে থাকতে পারে একটা মানুষ? মাশরাফির চরিত্রই যে এমন! নিজের চেয়ে অন্যের চিন্তাটাই আগে আসে মাথায়। যেমন এল মাহমুদউল্লাহর জন্য দুঃখবোধটাও। বিসিবির মেডিকেল রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আফসোস করে বলছিলেন, ‘রিয়াদের (মাহমুদউল্লাহ) জন্যই বেশি খারাপ লাগছে। দলটাও ভেঙে গেল...।’
বিশ্বকাপ ও পাকিস্তান সিরিজে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পর ভারতের বিপক্ষেও যখন ভালো কিছুর আশায় সবাই, তখনই একের পর এক চোটাঘাতের হানা। কাল মাহমুদউল্লাহ ছিটকে গেলেন, মাশরাফি আহত হলেন। মুশফিকুর রহিমের আঙুলে তো সূক্ষ্ম চিড় আগে থেকেই। ওদিকে ব্যাটিংয়ের সময় হাঁটুতে ব্যথা অনুভব করছেন তামিম ইকবালও। একসঙ্গে এত খেলোয়াড়ের চোট ভারত সিরিজের আগে যেন অশনিসংকেতই দিচ্ছে।