অথচ তাঁদের কেউ চেনে না!

মেন্দেজ ও জিজিনহো। ফাইল ছবি
মেন্দেজ ও জিজিনহো। ফাইল ছবি

১১ জুন থেকে শুরু হচ্ছে কোপা আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবল শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে নামবে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার মতো দেশগুলো। এ নিয়ে শুরু হলো আমাদের নতুন ধারাবাহিক। তৃতীয় পর্বে আজ পড়ুন কোপার ইতিহাসের সর্বোচ্চ দুই গোলদাতাকে নিয়ে লেখা বিশেষ প্রতিবেদন—
নরবের্তো মেন্দেজ এবং জিজিনহো। নাম শুনে প্রশ্ন করতেই পারেন—এঁরা কারা?
লাতিন আমেরিকা জন্ম দিয়েছে অজস্র ফুটবল-শিল্পীর। আর সেটা যদি হয় ব্রাজিল কিংবা আর্জেন্টিনার মতো দেশ, তাহলে তো শিল্পীর তালিকাটা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হবে। পেলে-ম্যারাডোনার হাত ধরে (নাকি পা?) ফুটবল পেয়েছে তার আসল সৌন্দর্য। যা রোনালদো দ্য ফেনোমেনন হয়ে লিওনেল মেসি হয়ে পৌঁছেছে আরেক উচ্চতায়। নেইমার সেটিকে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন আরও সামনে।
অথচ ভাবলে অবাক হতে হয়, নামকরা কোনো কিংবদন্তি বা সাবেক তারকা নয়, কোপা আমেরিকার সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা দুজন ব্রাজিল-আর্জেন্টিনায় জন্ম নিয়েও যেন অচেনা। ফুটবল ইতিহাসের গ্রন্থকীটেরা হয়তো চিনবেন। কিন্তু আর্জেন্টিনার মেন্দেজ এবং ব্রাজিলের জিজিনহো এবং কোপায় দুজনের করা ১৭টি করে গোল ইতিহাসের ধুলোতেই আড়ালে চলে গেছে।

১৯২৩ সালে আর্জেন্টিনার বুয়েনস এইরেসে জন্ম নেওয়া মেন্দেজ ক্লাব আর্জেন্টিনার হয়ে ১৯৪৫-১৯৫৬ সাল পর্যন্ত খেলেছেন। আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে ৩১ ম্যাচে ১৯ গোল করা এই ফরোয়ার্ড কোপা আমেরিকাতেই করেছেন ১৭ গোল। আর্জেন্টিনার হ্যাটট্রিক কোপা আমেরিকা জয়ের নায়কও ছিলেন। ১৯৪৫, ১৯৪৬ এবং ১৯৪৭—টানা তিন বছর কোপা জেতে আর্জেন্টিনা।
প্রথমবার ৬ গোল করেছিলেন। এর মধ্যে আছে গ্রুপ পর্বে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক। পরের বছর ৫ গোল করে টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা হলেও গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে গোল করে ম্যাচ জেতাতে বেশ পটু ছিলেন এই স্ট্রাইকার। গ্রুপ পর্বে ব্রাজিলের বিপক্ষে এবার হ্যাটট্রিক না পেলেও জোড়া গোল করে দলকে আনিয়ে দেন কোপার শিরোপা।
ব্রাজিল না-খেলায় এবং ভেনেজুয়েলা তখনো অংশ না নেওয়ায় আট দল নিয়ে আয়োজিত হয় ১৯৪৭ কোপা আমেরিকা। এবারও ৬ গোল করে আলফ্রেডো ডি স্টেফানো এবং মারিয়ানোর সঙ্গে টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা হন মেন্দেজ। তিনটি টুর্নামেন্ট খেলেই ১৭ গোল করে হয়ে যান কোপার ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা।
মেন্দেজের তুলনায় জিজিনহো মোটামুটি পরিচিত। অন্তত ফুটবল পাগলদের কাছে। ১৯৫০ বিশ্বকাপে আলো ছড়িয়েছিলেন। যদিও সেই বিশ্বকাপটা ব্রাজিলের ইতিহাসে এক ট্র্যাজেডি হয়ে আছে। ছয়টি কোপা খেলা জিজিনহো ব্রাজিলের হয়ে কেবলমাত্র একবারই জিতেছিলেন এ শিরোপা। ব্রাজিলের হয়ে আর কিছু কখনো জেতা হয়নি। তবে তার পরও পেলের চোখে জিজিনহো ছিলেন তাঁর দেখা সেরা খেলোয়াড়। পেলে বলেছিলেন, ‘তিনি ছিলেন পরিপূর্ণ এক খেলোয়াড়। মাঝমাঠে খেলতে পারতেন, আক্রমণভাগে। গোল যেমন করতে পারতেন, আবার প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়দের আটকেও রাখতে জানতেন। হেড করতেন, ক্রসও।’
বিশ্বকাপ খেলার কারণে নয়, না-খেলার কারণেই ইতিহাস মনে রেখেছে তাঁকে। ১৯৫৪ আর ১৯৫৮ বিশ্বকাপে মূল দলে না থাকলেও দুবারই শেষ মুহূর্তে তাঁকে দলে নেয় ব্রাজিল ফুটবল কনফেডারেশন (সিবিএফ)। দুবারই বিশ্বকাপ খেলার এমন শেষ মুহূর্তে পাওয়া সুযোগ সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করেন জিজিনহো। কেন বিশ্বকাপে সুযোগ পেয়েও খেলেননি, পরে এর ব্যাখ্যায় বলেছিলেন, ‘আমি খেললে আগে ডাক পেয়েছে এমন দুজনকে বাদ পড়তে হতো। শেষ মুহূর্তে তাদের সঙ্গে এমনটা করা হতো অন্যায়।’
খেলোয়াড় তিনি কোন মাপের ছিলেন সেটা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। তবে মানুষ হিসেবে জিজিনহো নিশ্চয়ই ছিলেন অসাধারণ!

আগামীকাল পড়ুন: যে কোপা আমেরিকায় ব্রাজিল-আর্জেন্টিনাই ছিল না