'মাঠের যুদ্ধটা আসল যুদ্ধ নয়'

কোচের সঙ্গে অধিনায়কের ছক কষা। আজ মিরপুরে। ছবি: বিসিবি
কোচের সঙ্গে অধিনায়কের ছক কষা। আজ মিরপুরে। ছবি: বিসিবি

সংবাদ সম্মেলনের কিছু পরই প্র্যাকটিস-উইকেটে হালকা ব্যাটিং অনুশীলন করলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। একেকটা শটে বল উড়িয়ে মারছেন বাউন্ডারির দিকে। কাল ভারতের বিপক্ষে ব্যাট হাতে নামলে এভাবেই উড়িয়ে মারবেন কি না, সময়ই বলে দেবে। তবে বাংলাদেশের জন্য বড় স্বস্তি, চোট কাটিয়ে মাঠে ফিরছেন বাংলাদেশ ওয়ানডে অধিনায়ক।

ভারতীয় অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির সংবাদ সম্মেলনে প্রসঙ্গটা উঠেছিল। উঠল মাশরাফির সংবাদ সম্মেলনেও। ধরতে পেরেছেন নিশ্চয়—মেলবোর্নের সেই কোয়ার্টার ফাইনাল। বহু আলোচিত-সমালোচিত সেই ম্যাচ। সেই ম্যাচের স্মৃতিতে ধুলো জমার আগেই আবার ভারতের মুখোমুখি বাংলাদেশ। স্বাভাবিকভাবেই সেই প্রসঙ্গ আসছেই। তবে মাশরাফি মনে করিয়ে দিলেন, ক্রিকেট শেষ পর্যন্ত একটা খেলাই। আর এখানে অতীত নিয়ে পড়ে থাকারও কিছু নেই। এগোতে হবে সামনে, ‘আমরা মাঠে যুদ্ধ করি ঠিকই। তবে সেটা তো আর আসল যুদ্ধ নয়। লড়াইটা মাঠেই সীমাবদ্ধ থাকে। চার-পাঁচ মাস আগে যা হয়েছে, সেটা অতীত। সেদিন হয়তো অনেক কিছুই ঘটতে পারত। তবে খেলোয়াড়েরা মনে হয় না সেটা মনে পুষে রেখেছে। নতুন একটা সিরিজের সামনে দাঁড়িয়ে। কাজেই পুরোনো বিষয় নিয়ে ভাবা ঠিক নয়।’
ওই ম্যাচের পর সাধারণ মানুষের মধ্যে যে প্রতিক্রিয়া হয়েছে, সেটিও উড়িয়ে দিচ্ছেন না। মাশরাফি প্রত্যাশা করছেন, সে সব নিয়ে দর্শকেরা যাতে অনাকাঙ্ক্ষিত প্রতিক্রিয়া না দেখান, ‘ওই সময় যা হয়েছে, তাতে সাধারণ মানুষ অনেক কিছু বলতে পারে, সেটাই স্বাভাবিক। তবে খেলোয়াড়েরা কখনো এসব মনে রাখে না। মনে রাখা ঠিকও নয়। তবে মানুষের আবেগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। তারা বলতেই পারেন। কিন্তু খেলাকে খেলা হিসেবেই নেওয়া উচিত। সেখানে হার-জিত থাকবে। জিতলে ভালো লাগবে, হারলে খারাপ লাগবে। অবশ্যই আমরা জেতার জন্যই খেলব। তবে ওই ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া না দেখানোই ভালো।’
মেলবোর্নে বিরাট কোহলিকে দ্রুত ফিরিয়ে দারুণ এক উদ্‌যাপন করেছিলেন রুবেল হোসেন। ওই ম্যাচের পর থেকেই রুবেল-কোহলির দ্বৈরথও আলোচনায়। মাশরাফি চান রুবেল এমন উদ্‌যাপন আবারও করুন, কিন্তু চান না সেটা আক্রমণাত্মক কিছু হোক, ‘রুবেল যদি পাগলামি করে ভালো কিছু দিতে পারে, সেটা আমার ও দলের জন্যই ভালো। তবে খেলোয়াড়দের মধ্যে ব্যক্তিগত আক্রমণ হোক, সেটা চাই না। তা ছাড়া কোহলি-রুবেলের মধ্যে তেমন কিছু দেখিনি। কোহলিকে এক ম্যাচে আউট করেছে, তাতে এমন কিছু হয়নি। মাঠে যেকোনো কিছুই ঘটতে পারে। তবে দিন শেষে আমরা একে অপরের সঙ্গে হাত মেলাই। কোহলিকে একই পেসার ছয়-সাতবার আউট করেছে। তখন তো এসব প্রশ্ন ওঠেনি। আগামীকালও রুবেল-কোহলি দুজনই সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করবে। দিন শেষে একজন সফল হবে।’
দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়ে পরিসংখ্যানটা ভারতের দিকেই হেলে আছে। ২৯ লড়াইয়ে বাংলাদেশ জিতেছে তিনটিতে। তবে বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স এবং সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে দারুণ খেলার পর ওই পরিসংখ্যানটা আপাতত সরিয়েই রাখতে হবে। এখন যদি বলা হয় এ সিরিজে কে ফেবারিট? প্রশ্ন শুনে খানিকটা হাসলেন। বললেন, ‘২০০৭-এর পর থেকে আমরা বিশ্বাস করতে শুরু করেছি, যেকোনো দলকেই হারাতে পারি। এ সময়ে আমরা অনেক ম্যাচ হেরেছিও। তবে যেকোনো দিন যে কাউকে হারাতে পারি—এই আত্মবিশ্বাস আমাদের আছে। তারা হয়তো ফেবারিট। তবে ভারতকেব হারাতে পারব না—সেটা মনে করি না।’
ভারতের বিপক্ষে ভালো খেলতে বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা বেশ মুখিয়েই থাকেন। ব্যাখ্যা হিসেবে মাশরাফি জানালেন, ‘এটা হয়েছে কারণ, ভারতের খেলার দিকে সবার নজর থাকে। বড় দল, যেমন—দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও ভালো পারফর্ম করতে পারলে নিজেদের একটা অবস্থান তৈরি করা যায়। নিজেদেরও আত্মবিশ্বাস বাড়ে। ভারতের মতো বড় দলের বিপক্ষে খেললে সংবাদমাধ্যমের আলাদা আগ্রহ তৈরি হয়।’
সর্বশেষ ১৪ ওয়ানডের ১১টি জিতেছে বাংলাদেশ। এ বছর ৯ ম্যাচ খেলে ছয়টিতেই জয়। ইংল্যান্ড, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টপকে বাংলাদেশের অবস্থান পাঁচে। এ সাফল্যের বিচারেই কি না ওয়ানডেতে নিজেদের অন্যতম সেরা দল বলেই দাবি মাশরাফির, ‘এখন বিশ্বে যতগুলো দল ওয়ানডে ক্রিকেট ভালো খেলছে, তার মধ্যে বাংলাদেশও আছে। পরিসংখ্যান দেখুন, সাম্প্রতিক সময়ে আমরা অনেক ওপরে আছি। দলও দারুণ আত্মবিশ্বাসী। ভালো খেলছি বলেই সবাই আমাদের ভালো দল বলছে। এটা আমাদের জন্য কোনো চাপ নয়। ভালো খেললে বরং আত্মবিশ্বাস বাড়ে।’