ধোনির কাণ্ড!

ধোনির ধাক্কায় এভাবেই ছিটকে পড়েছিলেন মুস্তাফিজুর
ধোনির ধাক্কায় এভাবেই ছিটকে পড়েছিলেন মুস্তাফিজুর

সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নটা হতেই মহেন্দ্র সিং ধোনি হাসলেন। যেন জানতেন প্রসঙ্গটা উঠবেই। মুখে সেই হাসিটা রেখেই বললেন, ‘আসলে হয়েছে কী, সংঘর্ষটা এড়াতে হলে হয় আমাকে ডান দিকে যেতে হতো, নয়তো ওকে বাঁ দিকে সরতে হতো। আমরা দুজনেই ভেবেছিলাম হয়তো অন্যজন সরবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্যাপারটা পথ চলতে চলতে কারও সঙ্গে ধাক্কা খাওয়ার মতো হয়ে গেল।’ যাঁর সঙ্গে সেই ধাক্কা নিয়ে এত কথা, সেই মুস্তাফিজুর রহমানও পরে সংবাদ সম্মেলনে বললেন, আসলে ভুলটা তাঁরই হয়েছিল। বল করার পর তিনিই ভুল জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আর সে কারণেই ঘটনাটার জন্য ধোনিকে দুষছেন না বাংলাদেশের তরুণ পেসার।
সংবাদ সম্মেলনে যে ঘটনাটার প্রসঙ্গ বারবার এল, সেটা ভারতীয় ইনিংসের ২৫তম ওভারে। তখন নিজের সপ্তম ওভারটা করছিলেন মুস্তাফিজ। আগের দুই ওভারেই দুই ভারতীয় ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়েছেন, যার মধ্যে আছে ওয়ানডের সর্বোচ্চ ইনিংসের মালিক রোহিত শর্মার উইকেটটাও। ওই ওভারের দ্বিতীয় বলে রানের জন্য ছুটেছিলেন ধোনি। কিন্তু বলটা করে কিছুটা বেখেয়ালে ধোনির পথে এসে দাঁড়ান মুস্তাফিজ। কনুই মেরে তাঁকে সরিয়ে দেন ভারত অধিনায়ক। সেই কনুইয়ের ধাক্কা এতটাই জোরে লাগে যে, ব্যথা পেয়ে মাঠ ছাড়তে হয় মুস্তাফিজকে। পরে অবশ্য আবার মাঠে ফিরেছেন মুস্তাফিজ। শুধু ফেরেনইনি, বল হাতে আরও তিন উইকেট নিয়ে হয়ে গেছেন ম্যাচসেরা!
তাৎক্ষণিকভাবে টিভি রিপ্লেতে দেখে অবশ্য মনে হয়েছে ধোনি চাইলে মুস্তাফিজের সঙ্গে ধাক্কাটা এড়িয়েও যেতে পারতেন। তা না করে ধাক্কা দেওয়ার কারণ? ভারতের ‘ক্যাপ্টেন কুল’ ব্যাখ্যা করলেন এভাবে, ‘আমি চেয়েছিলাম সবচেয়ে কম দূরত্বের পথটা নিতে। বেশির ভাগ সময় দেখা যায় এসব ক্ষেত্রে ঘুরে যেতে গিয়ে ব্যাটসম্যানই আউট হয়। সেই ঝুঁকিটা তো নিতে পারি না।’ ব্যাপারটা যে খুব বড় করে দেখার কিছু নেই, সেটা বোঝালেন আরও একটা তথ্য দিয়ে। ম্যাচের পরই মুস্তাফিজের সঙ্গে কথা বলেই ভুল-বোঝাবুঝিটা মিটমাট করে নিয়েছেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনেই অভিষেক ম্যাচে মুস্তাফিজের পারফরম্যান্সের উচ্ছ্বসিত প্রশংসাও করলেন।
দায়টা যে নিজেরই বেশি, সেটা ধোনির পরে সংবাদ সম্মেলনে এসে মুস্তাফিজও বলেছেন, ‘আমি ভুল পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম।’ ঘটনাটাকে খুব বড় কিছু মনে করছেন না বাংলাদেশের অধিনায়ক মাশরাফিও, ‘ম্যাচে আসলে এ রকম অনেক কিছু হতেই পারে। মুস্তাফিজ তো বলেছেই সে এটাকে স্বাভাবিকভাবে নিয়েছে। এটা খুব বড় কিছু নয়। আমরা এগুলো মনে রাখি না। সব ভুলেই ম্যাচের পর প্রতিপক্ষের সঙ্গে হাত মেলাই। ও রকম বড় কিছু হলে তো মাঠে আম্পায়াররা আছেনই।’
‘আমরা এগুলো মনে রাখি না’—বলে মাশরাফি পরিচয় দিলেন ঔদার্যের। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যাঁর ১১ বছর কাটছে, যিনি অধিনায়ক হিসেবে ভারতকে জিতিয়েছেন দুটি বিশ্বকাপ (টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপসহ), সেই মহেন্দ্র সিং ধোনি কিন্তু মাঠে ১৯ বছর বয়সী একজন অভিষিক্ত ক্রিকেটারের সামনে প্রথম সুযোগেই ঔদার্যের পরিচয় দিতে পারেননি। এসব মানুষের মন থেকে সহজেই মুছে যায় না!