সৌম্য শান্ত বিস্ময়

এই কি সেই সৌম্য সরকার? খানিক আগেই না মরনে মরকেলকে অবলীলায় আছড়ে ফেললেন সীমানার ওপারে! কাইল অ্যাবটের বাউন্সারটাকে না হেলায় উইকেটকিপারের মাথার ওপর দিয়ে বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে দিলেন! খানিক আগের সেই বিস্ফোরক সৌম্যকে সংবাদ সম্মেলনে মেলানোটা কষ্ট হয়ে যাচ্ছিল! ব্যাটিংয়ে যতটা আগ্রাসনের ছাপ, কথায় ততটাই নম্রতা।
খানিকটা মিলও অবশ্য আছে। ব্যাটে যেভাবে আত্মবিশ্বাস ঠিকরে বেরোয়, সৌম্যের কথায়ও তো সেই ‘এলাম, দেখলাম, জয় করলামের’ দুর্দান্ত বিচ্ছুরণ। নিজেকে যেভাবে চেনাচ্ছেন, বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের কাছে সেটা ছিল একসময় আকাশ ছোঁয়ার স্পর্ধা। ক্যারিয়ারের প্রথম ১৬ ম্যাচে ৪৯.৪২ গড়ে ৬৯২ রান আসলে সৌম্যকে পুরোটা বোঝাতে পারছে না। কিছুটা বোঝাতে পারছে মরকেলকে মারা ওই ছয়, বা অ্যাবটের বলে ওই পেরিস্কোপ শটে চার। সৌম্যর ভাষায়, ছয়টি তিনি আদায় করে নিয়েছেন!
এই সিরিজে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন সৌম্যর ভয়ডরহীন ব্যাটিংয়ের ছটা। তিন ম্যাচে ২০৫ রান করে সিরিজসেরার পুরস্কারটা তাঁর হাতেই সবচেয়ে মানায়। যেভাবে শুরু করেছেন, সৌম্যর সামনে এখন শিখর ছোঁয়ার হাতছানি। হাসিমুখে যেভাবে বলেন, তাতে মনে হয় এমন ব্যাটিংটা খুবই সহজ, ‘আজ যেটা করছি, কাল যেন এটা ছাপিয়ে যেতে পারি—এটা সব সময় চিন্তা করি।’
ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরির একদম কাছে এসে ফিরে গেছেন। এত সব প্রাপ্তির মধ্যেও সেটা খানিকটা খচখচ করারই কথা। অথচ সৌম্যর কাছে দশ উইকেটে জিততে না পারার আক্ষেপটাই বেজেছে বড় হয়ে, ‘সেঞ্চুরি পাইনি এ জন্য বেশি কষ্ট নেই, দশ উইকেটে জিততে পারিনি বলেই খারাপ লাগছে। সেটা করতে পারলে অনেক বড় একটা ব্যাপার হয়ে থাকত।’
অথচ পাঁচ মাস আগে কে ভেবেছিল সৌম্যর জগৎটা এভাবে বদলে যাবে? বিশ্বকাপে দিয়েছিলেন কুঁড়ি থেকে ফুল হয়ে ফোটার প্রতিশ্রুতি। সেই ফুল এত শিগগিরই তার সুতীব্র সৌরভ ছড়াবে, সেটি আসলেই ভাবা যায়নি। চারপাশের জগৎটা অনেক বদলে গেছে বুঝতে পারছেন। কিন্তু বদলে যাওয়া জগতেও তিনি মাঠের মতোই স্বচ্ছন্দ, ‘পরিবর্তন তো অনেক আসছে। আগে বন্ধুবান্ধব সবার সঙ্গে সহজেই ঘুরতে পারতাম। কোথাও বসতে পারতাম। কিন্তু এখন ওটা সহজেই করতে পারছি না। এখন বাইরে গেলে যেটা হয়, সেটা অনেক উপভোগ করি।’
সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে এমন একটা ইনিংস খেলার স্বপ্ন কি দেখেছিলেন? সেই স্বপ্ন না দেখুন, খেলতে চেয়েছিলেন নিজের স্বাভাবিক খেলাটাই, ‘আমি সব সময় যেটা খেলি, সেটাই এবার খেলার চেষ্টা করেছি।’ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একই পরিকল্পনা ছিল? যে উইকেটে দক্ষিণ আফ্রিকা এত খাবি খেল, সেখানে এমন স্বচ্ছন্দে ব্যাট করার রহস্য কী? বাঁহাতি ওপেনার মেনে নিলেন বাইরে থেকে যা-ই মনে হোক, কাজটা আসলেই সহজ ছিল না, ‘আসলে উইকেট পড়েনি বলে বাইরে থেকে সেটা বোঝা যায়নি। লিটন মাঠে যাওয়ার পর বল কিন্তু অনেক ঘুরছিল। কিন্তু আমরা উইকেটে থিতু হয়ে গিয়েছিলাম বলে বাইরে থেকে কিছু মনে হয়নি।’
কঠিনকে এমন সহজ মনে করাবেন, এই তো সৌম্য! যেটা কেউ ভাবেনি, সেটা সদম্ভে করে দেখাবেন, এই তো সৌম্য!