আরেকটি স্মরণীয় অভিষেকের অপেক্ষায় মুস্তাফিজ!

কাঁধে ব্যাগ, অনুশীলনের জন্য তৈরি মুস্তাফিজ। বাংলাদেশের নতুন পেস সেনসেশন কি তৈরি টেস্টের জন্যও? ছবি: শামসুল হক
কাঁধে ব্যাগ, অনুশীলনের জন্য তৈরি মুস্তাফিজ। বাংলাদেশের নতুন পেস সেনসেশন কি তৈরি টেস্টের জন্যও? ছবি: শামসুল হক

‘মুস্তাফিজকে হতে হবে লম্বা রেসের ঘোড়া। তাকে প্রস্তুত করতে হবে টেস্টের জন্যও’—কদিন আগে কলকাতা থেকে প্রথম আলোকে বলছিলেন মুস্তাফিজের সাবেক গুরু রণদেব বসু। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এসেই চমকে দেওয়া মুস্তাফিজুর রহমানের সামনে আরেকটি স্বপ্নের হাতছানি। আগামীকাল থেকে শুরু হওয়া দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম টেস্টে খেলার জোর সম্ভাবনা এ বাঁহাতি পেসারের।

যদিও এখনো একাদশ নির্বাচন হয়নি। তবে কোচ ও অধিনায়কের কথা ইঙ্গিত রয়েছে মুস্তাফিজের মাথায় টেস্ট অভিষেকের সবুজ টুপিটা ওঠার। টি-টোয়েন্টি অভিষেকটা স্মরণীয় করে রেখেছিলেন। ওয়ানডে অভিষেক তো হয়েছে আরও উজ্জ্বল। মুস্তাফিজ কি পারবেন ক্রিকেটের আসল পরীক্ষার মঞ্চ টেস্টেও নিজেকে মেলে ধরতে?
এই প্রশ্নের আগে উঠছে অন্য প্রশ্ন। মুস্তাফিজকে আরও সময় দেওয়া উচিত ছিল কিনা। পাঁচ দিনের ক্রিকেটের জন্য মুস্তাফিজ মানসিক ও শারীরিকভাবে যথেষ্ট ফিট তো? এত আগেই তাঁকে টেস্টের মহাসমুদ্রে নামিয়ে দেওয়ার ফল না শেষে হিতে বিপরীত হয়ে যায়!
প্রশ্নটা আজ সংবাদ সম্মেলনেও উঠল। একজন প্রশ্ন করলেন, মুস্তাফিজকে আরও ‘কেয়ারফুলি’ ব্যবহার করা উচিত কি না। কোচ চণ্ডিকা হাথুরুসিংহে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়লেন, ‘হোয়াট ডু ইউ মিন বাই কেয়ারফুলি? সে টেস্ট ক্রিকেট খেলতে যথেষ্ট প্রস্তুত।’
এমন প্রশ্নের যথেষ্ট কারণও রয়েছে। ওয়ানডে অভিষেকে আলো ছড়ানো পেসার তাসকিন আহমেদকেও এখনো টেস্টের জন্য প্রস্তুত মনে করা হয় না। তা ছাড়া উদাহরণ হিসেবে মাশরাফি বিন মুর্তজা তো রয়েছেনই। মাশরাফির চোট-জর্জর ক্যারিয়ারের পেছনে শুরুর দিকে তাঁকে ঠিকমতো ব্যবহার না-করাটাও তো একটা কারণ।
কোচের মতো টেস্ট অধিনায়কও অবশ্য আশাবাদী। বিশেষ করে বৃষ্টিস্নাত কন্ডিশন কোচ-অধিনায়ককে আরও বেশি উৎ​সাহিত করছে মুস্তাফিজকে একাদশে নামিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে। মুশফিক আজ বলেছেন, ‘এই কন্ডিশনে সে আদর্শ তো অবশ্যই। কোচ তো বললেনই, শুধু এ সংস্করণেই নয়, যেকোনো ধরনের ক্রিকেটেই সে ভালো করতে পারবে।’
এপ্রিলে পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পা দেওয়া মুস্তাফিজের ক্রিকেট ক্যারিয়ারটা খুব বেশি দিনের নয়। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেও অভিষেক গত বছর এপ্রিলে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে খুলনার হয়ে আট ম্যাচ খেলে পেয়েছেন ২৩ উইকেট। আর বিসিএলে দক্ষিণাঞ্চলের হয়ে পেয়েছেন ৫ উইকেট। মোট ১০টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ২১.১৭ গড়ে উইকেট ২৮টি। ছোট্ট ক্যারিয়ারের উজ্জ্বল পরিসংখ্যান।
মুশফিকও সেটিই বললেন, ‘ঘরোয়া ক্রিকেটে সে ভালো করেছে। বড় দৈর্ঘ্যর ম্যাচেও ভালো করেছে। তা ছাড়া, ওদের ব্যাটিং লাইনআপের নতুন যে চার-পাঁচ জন এসেছে, কেউ মুস্তাফিজকে দেখেনি বা খেলেনি। যদি ওকে খেলাই, অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। আর সেটা ওর প্রাপ্যই হবে। তবে আমরা এখনো ঠিক করিনি কোন সমন্বয় নিয়ে খেলব কাল। সবাই তৈরি খেলার জন্য। যদি খেলে তবে ওর জন্য শুভ কামনা।’
দুদিন আগে টেস্ট অভিষেক নিয়ে কথা হয়েছিল মুস্তাফিজের সঙ্গে। স্বল্পভাষী মুস্তাফিজ তেমন কিছু বলতে চাননি। কেবল জানিয়েছিলেন, ‘টেস্ট তো সব সময়ই চ্যালেঞ্জিং। দেখা যাক কী হয়।’
‘দেখা যাক কী হয়’—এই কৌতূহল নিয়ে তাকিয়ে থাকবে বাংলাদেশের সমর্থকেরাও। লাল বল আর সাদা পোশাকে মুস্তাফিজের আরও একটি স্মরণীয় অভিষেক হয় কি না, সেটাই দেখার।