মেসি-রোনালদো আছেন, নেইমার কেন নেই?

ইউরোপ-সেরার লড়াইয়ের দৌড়ে নেই নেইমার। ছবি: এএফপি
ইউরোপ-সেরার লড়াইয়ের দৌড়ে নেই নেইমার। ছবি: এএফপি

ইউরোপের সেরা খেলোয়াড়টিকেই আগে দেওয়া হতো ব্যালন ডি’অর। সেই পুরস্কার ফিফা বর্ষসেরার সঙ্গে একীভূত হওয়ায় উয়েফার পক্ষ থেকে এখন দেওয়া হয় আলাদা বর্ষসেরা পুরস্কার। গত মৌসুমের ইউরোপের সেরা খেলোয়াড়ের সংক্ষিপ্ত তালিকা দেওয়া হয়েছে। সেরা তিনে বার্সেলোনার দুই তারকা লিওনেল মেসি ও লুইস সুয়ারেজের পাশাপাশি আছেন রিয়াল মাদ্রিদের ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোও।
সর্বশেষ মৌসুমটায় মেসি ছিলেন অবিশ্বাস্য। বার্সার হয়ে ৫৭ ম্যাচে গোল করেছেন ৫৮টি। নেইমার-সুয়ারেজদের গোলগুলোর মূল কারিগরও ছিলেন। বার্সাকে আরও একবার জিতিয়েছেন লিগ-কাপ-চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপাত্রয়ী। রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে গত মৌসুমে মূল শিরোপাগুলোর কিছুই জেতেননি রোনালদো। কিন্তু ব্যক্তিগত ক্যারিয়ারের সেরা সময় গেছে। ৫৪ ম্যাচে করেছেন ৬১ গোল। এই তালিকায় দুজন যে থাকবেন, সেটা জানাই ছিল।
কৌতূহল ছিল সেরা তিনের তৃতীয় জায়গাটি নিয়ে। এবং সেখানে নেইমারের নাম না-থাকায় বিস্ময় জেগেছে। দুর্দান্ত একটা মৌসুম গেছে তাঁরও। ৫১ ম্যাচে ৩৯ গোল করেছেন। একটা সময় এক মৌসুমে ৩৯ গোল সঙ্গে তিনটি শিরোপা জিতলে বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারই নিশ্চিত ছিল। অথচ নেইমার সেরা তিনেই জায়গা পেলেন না!
বার্সার সাফল্যে বড় ভূমিকা ছিল তাঁরও। পঞ্চম চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার পথে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছেন মেসি-রোনালদোর সঙ্গে যৌথভাবে। চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনাল, ফাইনাল—এই তিন ধাপেই গোল করেছেন। কোপা ডেল রেতেও শেষ আট, সেমি ফাইনাল ও ফাইনালে গোল আছে তাঁর। নেইমারের অবদান বোঝা যাবে এই তথ্যেও। চ্যাম্পিয়নস লিগে তাঁর ১০ গোলের সাতটিই এসেছে টুর্নামেন্টের শেষ তিনটি ধাপে। কোপা ডেল রেতেও শেষ তিন ধাপে করেছেন পাঁচটি গোল। বড় ম্যাচগুলোতেই বার্সাকে গোল এনে দিয়েছেন নেইমার।
কামড়-কাণ্ডের নিষেধাজ্ঞা পেরিয়ে বার্সায় দেরিতে যাত্রা শুরু করা সুয়ারেজ শুরুতে খেলার ধরনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে ধুঁকছিলেন। কিছুতেই বার্সার ছন্দ ধরা দিচ্ছিল না তাঁর পায়ে। কিন্তু দ্রুতই জ্বলে ওঠেন উরুগুইয়ান এই স্ট্রাইকার। স্প্যানিশ ক্লাবটিতে ক্যারিয়ারের প্রথম মৌসুমে ৪৩ ম্যাচে করেছেন ২৫ গোল।
দলের সাফল্য-যাত্রায় তাঁরও অনেক অবদান। চ্যাম্পিয়নস লিগে করেছেন সাত গোল। এর মধ্যে শেষ ষোলোতে ম্যান সিটির বিপক্ষে জোড়া গোল করেছেন। গোল করেছেন কোয়ার্টার ফাইনাল আর ফাইনালেও। কোপার সেমিতেও গোল করেছেন ভিয়ারিয়ালের বিপক্ষে। রিয়ালের বিপক্ষে ফিরতি এল ক্লাসিকোতে জয়সূচক গোলটাও তাঁর, যে জয় বার্সার লিগ শিরোপা পুনরুদ্ধারে বড় ভূমিকা রেখেছে।
কিন্তু সামগ্রিক বিবেচনায় সুয়ারেজের চেয়ে নেইমারই এগিয়ে ছিলেন। উয়েফার বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের সংক্ষিপ্ত তালিকায় থাকলেও নেইমার শেষ পর্যন্ত ক্লাব সতীর্থের কাছেই হেরে গেলেন শেষ তিনের লড়াইয়ে। প্রশ্ন উঠেছে, ভোটের লড়াইয়ে নেইমার কি পারফরম্যান্সে পিছিয়ে পড়লেন, নাকি জনপ্রিয়তায়? লিভারপুলে তিন মৌসুম খেলার সুবাদে ইউরোপের সাংবাদিকদের কাছে সুয়ারেজের জনপ্রিয়তা আগে থেকেই ছিল।
উয়েফার ৫৪ সদস্য দেশের নির্বাচিত সাংবাদিকেরা প্রথম দফায় তাঁদের পছন্দের সেরা পাঁচ খেলোয়াড়কে ভোট দেন। সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া ১০ খেলোয়াড়ের সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রকাশ করে উয়েফা। দ্বিতীয় দফা ভোটে এই ১০ জন থেকে বেছে নেওয়া হয় সেরা তিন। এই তিনজনের মধ্যে বর্ষসেরা কে হবেন, সেটি জানা যাবে ২৭ আগস্ট। এ দিন চ্যাম্পিয়নস লিগের ড্রয়ের পাশাপাশি ঘোষণা করা হবে ইউরোপের সেরা খেলোয়াড়ের নামও।
মেসি-রোনালদো যুগ শেষে হয়তো নেইমার একাই শাসন করবেন ফুটবল বিশ্ব। সেই পথে এগিয়ে যেতে এই ২৩ বছর বয়সী বাড়তি প্রেরণা পেতেন শেষ তিনে থাকতে পারলে। না থাকাটাকে জেদ হিসেবে নিতে পারেন নেইমার। নতুন মৌসুমে ঝলসে উঠতে পারেন আরও বেশি!