জিমিদের মাঠে ফেরার আকুতি

প্রয়াত হকি খেলোয়াড় মালেক চুন্নুর স্মরণে আরমানিটোলা স্কুল মাঠে চলমান হকি টুর্নামেন্টটি আসলে তরুণদেরই এক রঙিন উৎসব। হকিবিহীন অসহ্য সময়ের হাতে বন্দী জিমি-মিমোদের মতো জাতীয় দলের খেলোয়াড়েরাও এসে মিলেছেন এই উৎসবে l প্রথম আলো
প্রয়াত হকি খেলোয়াড় মালেক চুন্নুর স্মরণে আরমানিটোলা স্কুল মাঠে চলমান হকি টুর্নামেন্টটি আসলে তরুণদেরই এক রঙিন উৎসব। হকিবিহীন অসহ্য সময়ের হাতে বন্দী জিমি-মিমোদের মতো জাতীয় দলের খেলোয়াড়েরাও এসে মিলেছেন এই উৎসবে l প্রথম আলো

‘ওস্তাদ ফজলুর মুখের বুলি, এসো সবাই হকি খেলি’—আরমানিটোলা সরকারি হাইস্কুল মাঠে ঢুকলে সবার আগে চোখে পড়বে দেয়ালের এই স্লোগানটা। এলাকার সবাই তাঁকে ফজলু ওস্তাদ বলে চেনে। পুরো নাম ফজলুল ইসলাম। এই কোচের হাত ধরেই এলাকার তরুণেরা এখনো হকিতে আসছেন।
আরমানিটোলার হকির ঐতিহ্য পুরোনো। হকির সূতিকাগারই বলা হয় পুরান ঢাকার আরমানিটোলা স্কুলকে। জাতীয় দলের অনেক খেলোয়াড় উঠে এসেছেন এই স্কুল থেকে। আরমানিটোলা স্কুলমাঠেই পরশু শুরু হয়েছে মালেক চুন্নু স্মৃতি হকি টুর্নামেন্ট। জাতীয় দলের প্রয়াত হকি খেলোয়াড়ের নামে প্রথমবারের মতো আয়োজিত হচ্ছে এই প্রতিযোগিতা। উদ্যোক্তাদের একজন প্রয়াত চুন্নুর ছেলে হকি খেলোয়াড় সাজ্জাদ জন। ১৩ দলের টুর্নামেন্টে খেলছেন রাসেল মাহমুদ জিমি, হাসান যুবায়ের নিলয়, পুষ্কর খীসা মিমো, রোমান সরকার, তাবিব-এ-নূর, মাকসুদ আলম হাবুলদের মতো জাতীয় দলের খেলোয়াড়েরা।
মাওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়ামের নীল টার্ফে কবে নাগাদ হকি ফিরবে তা কেউই বলতে পারে না। ফেডারেশন কর্মকর্তাদের এসব নিয়ে যেন কোনো মাথাব্যথা নেই। খেলোয়াড়দের অনেকেই ঝুঁকেছেন ব্যবসায়। কেউ বা চাকরি খুঁজছেন। হঠাৎই এমন একটা টুর্নামেন্টের আয়োজন খেলোয়াড়দের কাছে যেন অক্সিজেন হয়ে এসেছে। যদিও টুর্নামেন্টটি ফাইভ-এ-সাইড হকির। তবে অসমতল বালুর মাঠেও গতকাল বর্ণক গ্রিন ও ইসলামবাগ হকি একাডেমির নবীন খেলোয়াড়দের স্টিকওয়ার্ক ছিল নজরকাড়া। মাঠে পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থাও করে রেখেছেন আয়োজকেরা। ফোম ও প্লাস্টিকের বালতি হাতে সদা প্রস্তুত স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী।
বিকেলে স্কুল ছুটি হতেই খেলা দেখতে দাঁড়িয়ে পড়ল ছাত্ররা। আশপাশের উৎসুক জনতাও মাঠে ঢুকে খেলা দেখল। সবার আকর্ষণের কেন্দ্রে জাতীয় দলের খেলোয়াড়েরা। জিমিরা কবে খেলবেন, সেটা নিয়েই বেশি কৌতূহল সবার। টুর্নামেন্টে জিমি খেলছেন গোলাম মোস্তফা লেন স্মৃতি সংসদের হয়ে। মিমো ওল্ড ঢাকা টাইগার্সে।
আন্তর্জাতিক নিয়মে তিন কোয়ার্টারে হচ্ছে খেলা। তবে প্রতিটি কোয়ার্টারের ব্যাপ্তি ১২ মিনিট। নির্ধারিত সময় ড্র থাকলে সরাসরি টাইব্রেকারের গড়াবে ম্যাচ। কাল বর্ণক গ্রিন ও ইসলামবাগের ম্যাচটি নির্ধারিত সময়ে ছিল ৪-৪। পরে টাইব্রেকারে ২-১ গোলে জিতেছে বর্ণক গ্রিন।
ছোট মাঠে উৎসবের মেজাজে খেলছেন জিমিরা। তবে এই আনন্দের মাঝে জিমিকে একটা দুঃখও ছুঁয়ে যাচ্ছে, ‘পুরান ঢাকায় এমন টুর্নামেন্ট নিয়মিতই হয়। আমরা অনেকটা শখের বশেই এসব টুর্নামেন্টে খেলি। কিন্তু এসব টুর্নামেন্টে না, টার্ফেই খেলতে চাই আমরা। কবে মাঠে ফিরব, সেটা এখনো জানি না।’
গোলাম মোস্তফা লেন স্মৃতি সংসদের ফরোয়ার্ড হাবুলের কণ্ঠেও একই সুর, ‘দলবদল খেলোয়াড়দের রুটিরুজির একমাত্র পথ। সেটা বন্ধ করে রেখেছে ফেডারেশন। এই টুর্নামেন্টটা খেলছি বড় ভাইদের অনুরোধে। কিন্তু আমরা চেয়ে আছি ফেডারেশনের দিকে। খেলতে চাই স্টেডিয়ামে।’
জিমি-হাবুলদের এই আকুতি শুনে ফেডারেশনের কর্মকর্তারা হকি লিগ আয়োজনের উদ্যোগ নেবেন?