ভাগ্যের খেলায় 'চ্যাম্পিয়ন' রংপুর

সেই চাপা উত্তেজনা নেই। স্নায়ুক্ষয়ী প্রতিদ্বন্দ্বিতা কিংবা টাকার খেলায় প্রতিপক্ষকে হারিয়ে দেওয়ার নেশাও অনুপস্থিত। কোন দল শক্তিশালী হবে, কে দুর্বল—সবই যেন ভাগ্যবিধাতার হাতে। আগের দুই বিপিএলের খেলোয়াড় নিলামের সঙ্গে এটাই বড় পার্থক্য গড়ে দিল এবারের ‘প্লেয়ারস ড্রাফটে’র।
খেলোয়াড় বাছাই প্রক্রিয়ার চালিকাশক্তি যে লটারিই হবে, তা আগে থেকে জানা ছিল। মূল কৌতূহল ছিল লটারি ভাগ্য কার কতটা ভালো তা নিয়ে। শুরু ও শেষের ডাকসহ লটারিতে সর্বোচ্চ চারবার প্রথমে খেলোয়াড় নেওয়ার সুযোগ পেয়ে তাতে ‘চ্যাম্পিয়ন’ বলা যায় রংপুর রাইডার্সকে।
হোটেল র্যা ডিসনে রংপুরের ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিক মোস্তফা রফিকুল ইসলাম শুরুটা করলেন সৌম্য সরকারকে ডেকে, শেষ বেলায় আইকন খেলোয়াড় বেছে নেওয়ার সময়ও লটারিতে ১ নম্বর হয়ে নিয়ে নিলেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে।
সাকিব, সৌম্য ছাড়া রংপুর রাইডার্সে বাংলাদেশি খেলোয়াড়দের মধ্যে উেল্লখযোগ্য আরাফাত সানি, মোহাম্মদ মিঠুন, জহুরুল ইসলাম ও সাকলাইন সজীব। প্লেয়ারস ড্রাফট থেকে নেওয়া ১২ ক্রিকেটারের মধ্যে আছেন শ্রীলঙ্কার সচিত্রা সেনানায়েকে, আফগানিস্তানের মোহাম্মদ নবী ও পাকিস্তানের ওয়াহাব রিয়াজ। এ ছাড়া সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে ড্যারেন সামি, থিসারা পেরেরা ও লেন্ডল সিমন্সকেও নিচ্ছে রংপুর।
এ তালিকায় যোগ হতে পারেন তিলকরত্নে দিলশানও। কিন্তু রংপুরের মতো চিটাগং ভাইকিংসও শ্রীলঙ্কার এই ক্রিকেটারের সঙ্গে চুক্তি করেছে বলে দাবি করায় ব্যাপারটি কাল পর্যন্ত ঝুলে ছিল। বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান জানিয়েছেন, ‘বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। কাগজপত্র দেখে তারা যে সিদ্ধান্ত দেবে, সেটিই চূড়ান্ত হবে।’
প্লেয়ারস ড্রাফটের বাইরে থেকে নেওয়া উল্লেখযোগ্য নাম কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের শোয়েব মালিক, মারলন স্যামুয়েলস, সুনীল নারাইন ও আহমেদ শেহজাদ; সিলেট সুপার স্টারসের শহীদ আফ্রিদি, চিটাগং ভাইকিংসের মোহাম্মদ আমির, কামরান আকমল ও উমর আকমল; ঢাকা ডাইনামাইটসের কুমার সাঙ্গাকারা ও নাসির জামশেদ; বরিশাল বুলসের ক্রিস গেইল ও ব্রেন্ডন টেলর এবং রংপুর রাইডার্সের ড্যারেন স্যামি। ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো আগে থেকেই এসব খেলোয়াড়ের সঙ্গে কথাবার্তা বলে ফেলায় তাদের প্লেয়ারস ড্রাফটের তালিকায় রাখেনি গভর্নিং কাউন্সিল।
তবে কাল পর্যন্ত চুক্তির কাগজপত্র সবাই জমা দেয়নি বলে জানিয়েছেন কাউন্সিলের সদস্যসচিব ইসমাইল হায়দার মল্লিক, ‘খেলোয়াড়দের সঙ্গে যোগাযোগের কিছু ই-মেইলের কপি তারা দিয়েছে। কেউ কেউ চুক্তির কাগজপত্রও দিচ্ছে। আমরা চেষ্টা করব কালকের (আজ) মধ্যে চুক্তির কাগজগুলো নিয়ে নিতে।’ সিলেট সুপারস্টারস কাল বিকেল পর্যন্ত বিদেশি খেলোয়াড়দের কোনো কাগজপত্র জমা দেয়নি বলে জানিয়েছেন তিনি।
চুক্তির কাগজসহ চূড়ান্ত খেলোয়াড় তালিকা জমা দিতে হবে গতকাল থেকে সাত দিনের মধ্যে। বোর্ড সভাপতি অবশ্য জানিয়েছেন, প্রয়োজনে খেলোয়াড় পরিবর্তনের সুযোগ পাবে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো। এ ছাড়া প্লেয়ারস ড্রাফটের তালিকায় থাকা যেসব খেলোয়াড়কে কাল কোনো দল ডাকেনি, তাদেরও নেওয়ার সুযোগ আছে এখনো। সে ক্ষেত্রে বিসিবি নির্ধারিত মূল্যেই নিতে হবে খেলোয়াড়দের।
স্থানীয় খেলোয়াড়দের মধ্যে সর্বোচ্চ ৩৫ লাখ টাকা করে পাবেন ছয় আইকন খেলোয়াড়, সর্বনিম্ন দাম পাঁচ লাখ টাকা। বিদেশিদের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন পারিশ্রমিক ৭০ হাজার ডলার (প্রায় ৫৫ লাখ টাকা) ও ৩০ হাজার ডলার (প্রায় ২৩ লাখ টাকা)। ছয় আইকনসহ প্লেয়ারস ড্রাফটের তালিকায় দেশি খেলোয়াড় ছিলেন ১৩০ জন ও বিদেশি ১৪৭ জন। কাল দল পেয়েছেন ৬৩ জন দেশি ও ১৯ জন বিদেশি খেলোয়াড়।
এবার পারিশ্রমিকের অঙ্ক তুলনামূলকভাবে কমে যাওয়ায় চাপা অসন্তোষ ছিল স্থানীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে। কিন্তু প্লেয়ারস ড্রাফট চলাকালীন বিভিন্ন খেলোয়াড়ের ফেসবুক স্ট্যাটাস দেখে সে হতাশাটা আর আছে বলে মনে হলো না। চিটাগাং ভাইকিংস প্রথম ডাকেই এনামুল হককে নেওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ‘চিটাগং হিপ হিপ হুররে...।’ দল পাওয়ার পর ইমরুল কায়েসের স্ট্যাটাস, ‘ধন্যবাদ কুমিল্লা...।’ মুশফিকুর রহিম লিখেছেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, আমাকে দলে নেওয়ার জন্য সিলেট সুপারস্টারসকে ধন্যবাদ। ইনশা আল্লাহ আমরাই চ্যাম্পিয়ন হব। এসএসএসের অংশ হতে পেরে সত্যিই গর্বিত।’
আনন্দময় এসব স্ট্যাটাসের ভিড়ে ব্যতিক্রম হয়ে ছিল মাশরাফি বিন মুর্তজারটি। সারা দিনে এত কিছু হয়ে গেল, অথচ কাল সন্ধ্যায়ও তাঁর ফেসবুকে শোভা পাচ্ছিল আগের রাতে দেওয়া স্ট্যাটাসটাই, ‘কাল (গতকাল) সকালে নাকি আমরা সব হাটে উঠছি।’
মূল্য তালিকা ঝুলিয়ে করা প্লেয়ারস ড্রাফট তো আসলে সেটাই!