মুস্তাফিজের দিকে তাকিয়ে রুবেল

চোট ভোগাচ্ছে রুবেলকে। ছবি: এএফপি।
চোট ভোগাচ্ছে রুবেলকে। ছবি: এএফপি।

সকাল ১১টা-সাড়ে ১১টার দিকে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ঢোকেন। দুপুর একটা-দেড়টা পর্যন্ত জিম-রানিং করে ফিরে আসেন বাসায়। ক্রিকেটের ভরা মৌসুমে একজন পেসারের এটা কেমন জীবন!

রুবেল হোসেন নিজেও জানেন, এ তাঁর জীবন নয়। তিনি খেলোয়াড়, মাঠেই তাঁর কাজ-কারবার। তারপরও মেনে নিচ্ছেন নিয়তিকে, ‘চার সপ্তাহ হলো চোটে পড়েছি। ডাক্তারদের কথা অনুযায়ী আরও অন্তত দুই সপ্তাহ লাগবে বোলিং শুরু করতে। খেলার বাইরে থাকতে খারাপ লাগে। কিন্তু কিছু করার নেই। কাফ মাসলের টিস্যু ছিড়েছে। একটু তো সময় লাগবেই।’

হ্যাঁ, কিছুই করার নেই রুবেলের। শুধু আক্ষেপ করা ছাড়া। সবচেয়ে বড় আক্ষেপ জাতীয় লিগে খেলতে পারছেন না বলে, ‘জাতীয় দলের বেশিরভাগ খেলোয়াড় এবারের জাতীয় লিগে খেললেও আমি খেলতে পারছি না। অথচ জাতীয় লিগে খেলাটা আমার জন্য দরকার ছিল।’ সামনে জিম্বাবুয়ে সিরিজ। রুবেলের তাতেও দর্শক হয়ে থাকার সম্ভাবনাই বেশি। রুবেল অবশ্য এখনই আশা ছাড়ছেন না, ‘এখন আশি ভাগ জোর দিয়ে দৌড়াতে পারছি। সপ্তাহখানেকের মধ্যে আশা করি পুরো গতিতে দৌড়াব। এটা পারলে জিম্বাবুয়ে সিরিজে খেলার ফিফটি-ফিফটি সম্ভাবনা থাকবে।’

শেষ পর্যন্ত যদি তাঁর খেলা না-ই হয়, তিন ওয়ানডে ও দুই টি-টোয়েন্টির সিরিজে রুবেল তাকিয়ে থাকবেন মুস্তাফিজুর রহমানের দিকে। ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে গোটা ক্রিকেট বিশ্বকেই চমকে দেওয়া এই বাঁহাতি পেসারের কাছে অনেক আশা তাঁর, ‘গত দুইটা সিরিজে মুস্তাফিজ যেরকম খেলেছে, তাতে এখন ও বল হাতে নিলেই মানুষ ভাবে কিছু না কিছু হবে। আমারও সেরকমই মনে হয়। ওর কাছে সবার প্রত্যাশা অনেক বেশি।’

অগ্রজ হিসেবে মুস্তাফিজকে একটা পরামর্শও দিয়ে রাখলেন। প্রত্যাশাকে চাপ ভাবা যাবে না, নিতে হবে অনুপ্রেরণা হিসেবে, ‘মাশরাফি ভাই, তাসকিন দুজনই চোট আর অসুস্থতা থেকে ফিরে খেলবে। জিম্বাবুয়ে সিরিজে তাই মুস্তাফিজের ওপর দায়িত্ব একটু বেশি থাকবে। তবে এটাকে চাপ ভেবে খুব বেশি কিছু করতে যাওয়ার দরকার নেই। মুস্তাফিজ তার স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে পারলেই ভালো।’

বাড়তি কিছু করতে যাওয়াটা যে কখনো কখনো বিপদেরও কারণ হতে পারে, রুবেল নিজেই এর সর্বশেষ উদাহরণ। ‘এ’ দলের হয়ে খেলতে গিয়ে ব্যাঙ্গালুরুর যে ম্যাচে সর্বশেষ চোটে পড়লেন, তাঁর মুখ থেকেই শুনুন সে ম্যাচের কথা, ‘উইকেট খুব শক্ত থাকায় বোলিংয়ে বাড়তি কিছু করতে হচ্ছিল। আমি যেমন রাউন্ড দ্য উইকেটে গিয়ে প্রথম বলেই চোটটা পেলাম। তাসকিন, শফিউলের চোটের কারণও ছিল শক্ত মাটি।’

কাফ মাসলের চোট এবারই প্রথম, তবে এর আগে কখনো অ্যাঙ্কেল, কখনো কাঁধ, কখনো বা পিঠের চোটে ভুগেছেন রুবেল। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছে প্রথম বিপিএলে পাওয়া কাঁধের চোট। যেটির জন্য দক্ষিণ আফ্রিকায় অস্ত্রোপচার করাতে হয়েছিল। সেই চোটের কথা মনে করে এবারের দুঃখটা যেন ভুলেই গেলেন, ‘ওই চোটের পর এক বছরের মতো মাঠের বাইরে ছিলাম। জাতীয় দলের অনেক খেলা ছিল, কিন্তু আমি কিছুই খেলতে পারিনি। ফেরার জন্য অনেক কষ্ট করতে হয়েছিল। আমি তো খেলোয়াড়, মাঠের বাইরে কেন থাকব!’

সব খেলোয়াড়ের ক্যারিয়ারেই এই প্রশ্নটা কখনো না কখনো আসে। তবে পেসারদের সামনে একটু বেশিই আসে। চোটাঘাত যে বেশির ভাগ পেসারদের ছায়াসঙ্গীই হয়ে থাকে! রুবেল অবশ্য দাবি করলেন, ‘এখন আমরা অনেক সচেতন। চোটমুক্ত থাকার সবচেয়ে ভালো উপায় ফিট থাকা। আমার মনে হয় না, আমাদের পেসারদের কারও ফিটনেসে সমস্যা আছে। কিন্তু খেললে তো এরকম সময় আসতেই পারে।’

রুবেলের এখন একটাই অপেক্ষা—কবে শেষ হবে ‘সেই সময়’-এর এবারের পালাটা?