চট্টগ্রাম আবাহনী এক নতুন আলোড়ন

পেশাদার লিগে চট্টগ্রাম আবাহনী সাড়া ফেলতে পারেনি কখনোই। সেই ক্লাব রীতিমতো ‘ভূমিকম্প’ ঘটিয়ে দিল গত কয়েক দিনে। শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ আয়োজনই শুধু নয়, ফাইনালে উঠে চট্টগ্রামের ফুটবলে ফিরিয়ে এনেছে নতুন প্রাণ।
ঘরের টুর্নামেন্টে স্বাগতিক দল ফাইনালে না থাকলে আয়োজনটা হয়তো অপূর্ণই থাকত। স্বাগতিকদের মাঠের পারফরম্যান্স অন্তত সেই আক্ষেপটা জাগতে দিল না। আফগানিস্তানের ডি স্পিন গর বাজানকে পরশু ৩-১ গোলে হারিয়ে ফাইনালে পা রাখা দলটিকে ঘিরে প্রত্যাশাও তাই বেড়ে গেছে বহু গুণ।
ফাইনাল জিততে দলের সবাই যেন আত্মবিশ্বাসী। তবে কাল সকালে টিম হোটেলে গিয়ে দেখা গেল, ফুটবলারদের সবার চোখেই ঘুম ঘুম ভাব। ডিফেন্ডার রেজাউল, গোলরক্ষক লিটন, জাহিদ, এমিলিরাও বললেন, ফ্লাড লাইটে খেললে ওই রাতে খেলোয়াড়দের আর ঘুম হয় না। কল্পনার চোখে নাকি বারবারই আলো এসে পড়ে।
সেমিফাইনালের নানা দিকের তবু ব্যবচ্ছেদ চলছে। আগামীকালই ফাইনাল, ট্রফিটা যাতে ঘরেই রেখে দেওয়া যায় সে জন্য চলছে নানা আয়োজন। খেলোয়াড়দের উজ্জীবিত করতে বড় অঙ্কের পুরস্কারের প্রণোদনা আছে। এরই মধ্যে কিছু দেওয়াও হয়েছে। খানাপিনা, মেজবান...এসব তো মামুলি। চট্টগ্রাম আবাহনীর ফুটবল চেয়ারম্যান তরফদার রুহুল আমিনই এ নিয়ে বেশি উদ্যমী, ‘ফাইনালে তো আমরা উঠলাম। চ্যাম্পিয়ন হয়ে সব পরিশ্রম সার্থক করতে চাই। আমরা একটা চমক দেব।’
মাঠে যাঁদের দিকে দল তাকিয়ে সেই এমিলি ও জাহিদরাও চট্টগ্রাম আবাহনীর ‘ঘরের ছেলে’ এখন। হোটেল লবিতে বসে অধিনায়ক এমিলি পেছনে তাকান, ‘মানিক ভাই দলটা করার সময় বলেছিলাম, ফাইনালে নিয়ে যাব আপনার দলকে। আমরা তা পেরেছি।’ পাশে বসে এই টুর্নামেন্টে আলো কাড়া ফরোয়ার্ড জাহিদ চোখ রাখেন চূড়ান্ত লড়াইয়ে, ‘ইস্টবেঙ্গলকে ফাইনালে পেলে গ্রুপপর্বে হারের প্রতিশোধটা নিতে পারব।’
১৩ নভেম্বর বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে তাজিকিস্তান ম্যাচের জাতীয় দলে এমিলি-জাহিদকে কোচ লোপেজ কেন নেননি সেই প্রসঙ্গটাও আসে। এ নিয়ে দুই ফুটবলার মুখে তালা মারলেও ক্ষোভটা বোঝা যায়। তাঁদের সান্ত্বনা দিয়ে কোচ শফিকুল ইসলাম মানিক ব্যক্ত করেন জয়ের প্রত্যয়, ‘আমরা অনেক গুছিয়ে উঠেছি। ফাইনালটা জিতে চট্টগ্রামবাসীকে একটা উপহার দিতে চাই।’
চট্টগ্রাম আবাহনীতে খেলছেন শেখ রাসেলের ১২ জন খেলোয়াড়। গত প্রিমিয়ার লিগে খেলা চট্টগ্রামের দলটির নিজস্ব খেলোয়াড় মাত্র চারজন—গোলরক্ষক লালু, ডিফেন্ডার মনসুর, অধিনায়ক রাজু ও ফরোয়ার্ড সুমন। এঁদের কারোরই মাঠে নামার সুযোগ হয়নি, তবু খুশিই দেখাচ্ছে মনসুরকে, ‘আমরা খেলতে পারছি না বলে কোনো দুঃখ নেই। দল ভালো করছে এতেই খুশি।’
চট্টগ্রাম আবাহনীর এই রূপান্তর দীর্ঘস্থায়ী হবে বলেই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন কর্তারা। আগামী মৌসুমের জন্য মানিককে কোচ করা হয়েছে বেশ আগেই। বড় বাজেটের দলও গড়ে ফেলেছে চট্টগ্রাম আবাহনী। অন্য বড় দলগুলোর মধ্যে একটা আতঙ্কও তাতে তৈরি হয়েছে। চট্টগ্রাম আবাহনীর কর্মকর্তাদের ভাষ্য, ‘মানি ইজ নো প্রবলেম!’
ক্লাবের মহাসচিব পটিয়ার সাংসদ শামসুল হক চৌধুরীর চোখে অনেক স্বপ্ন, ‘হালিশহরে আমাদের ক্লাবের ১২ বিঘা জমির ওপর মাঠ, শেখ কামাল কমপ্লেক্স, একাডেমি ইত্যাদি হবে। সারা দেশের প্রতিভা খুঁজে অনূর্ধ্ব-১৬ বছরের ৬০ জনকে একাডেমিতে তুলে ওদের পড়াশোনার দায়িত্ব নেব। চট্টগ্রাম আবাহনী ও বন্দর স্কুল ও কলেজের মধ্যে একটা চুক্তি সই হবে শিগগিরই।’
শেখ কামাল টুর্নামেন্টটাও প্রতিবছর অক্টোবরে বাফুফের বর্ষপঞ্জিতে রাখার উদ্যোগ চলছে। আগামী বছর আরও বড় পরিসরে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, হংকংসহ আরব দেশের ক্লাব আনার চিন্তা আছে। এবারের চ্যাম্পিয়ন-রানার্সআপসহ দেশের চারটির সঙ্গে আটটি বিদেশি দল থাকতে পারে। আবাহনীর প্রতিষ্ঠাতা শেখ কামালের নামটা গোটা এশিয়ায় ছড়িয়ে দিতেই এই উদ্যোগ।
শুনতে ভালোই লাগে। ঢাকার বড় দলগুলো পারেনি। চট্টগ্রাম আবাহনী নিজেরা একটা সফল আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট করে দেখাল। অভিনন্দন তাদের প্রাপ্যই।