বাংলাদেশে সংসারও পেতেছেন কিংসলে

এলিটা কিংসলে: চট্টগ্রাম আবাহনীর শিরোপা জয়ে বড় ভূমিকা তাঁর
এলিটা কিংসলে: চট্টগ্রাম আবাহনীর শিরোপা জয়ে বড় ভূমিকা তাঁর

ফাইনাল শেষ হতেই কারও একজনের হাত থেকে টেনে নিলেন লাল সবুজ পতাকা। সেটি জড়িয়ে নিলেন গলায়। একের পর এক পুরস্কার হাতে নেওয়ার সময় সেই পতাকা তাঁর কোমরে বাঁধা। দেখে মনে হচ্ছিল, এ বুঝি বাংলাদেশেরই কোনো খেলোয়াড়! কিন্তু এলিটা কিংসলে তো নাইজেরিয়ান! তাতে কী? গতকাল রাতে দেশের সীমানার প্রাচীর ভেঙে পড়েছিল তাঁর বাঁধভাঙা আনন্দের কাছে। এলিটা কিংসলে হয়ে গেলেন বাংলাদেশেরই একজন!


এক অর্থে তো তিনি এখন ‘বাংলাদেশি’ই! চার বছর আগে ফুটবল তাঁকে নিয়ে এসেছে এ দেশে। বছরখানেকের মধ্যেই বিয়ে করেছেন বাংলাদেশের এক মেয়েকে। নরসিংদীর মেয়ে লিজা বেগমের সঙ্গে সুখের সংসার। তাঁদের ঘরে দুই বছরের একটা শিশু কন্যাও আছে, নাম সাফিরা এলিটা। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় থাকেন পরিবার নিয়ে। চট্টগ্রাম আবাহনী শেখ কামাল টুর্নামেন্টের ফাইনালে ওঠার পর স্ত্রী-সন্তানকে চট্টগ্রামে নিয়ে এসেছেন। ফাইনালে এলিটা কিংসলের নায়ক হয়ে যাওয়াটা তাই মাঠে বসেই দেখার সুযোগ মিলল তাদের।

শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপে স্বাগতিক চট্টগ্রাম আবাহনীর ​শিরোপা জয়ে এই স্ট্রাইকারের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি। সেমিফাইনাল ও ফাইনালে দুটি করে গোল। সব মিলিয়ে পাঁচ করে সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কারের সঙ্গে ফাইনাল ও টুর্নামেন্ট-সেরার স্বীকৃতিও। ট্রফি ও টাকা আলাদা করে দেওয়ায় ছয়বার মঞ্চে ওঠা নামা করতে হয়েছে। দলীয় আর ব্যক্তিগত অর্জনের স্মারকগুলো নিয়ে ম্যাচশেষে ঘুরে বেড়ালেন স্টেডিয়ামে। লাল-সবুজ পতাকাটা তখনো তাঁর সঙ্গী।

তাহলে কি আপনাকে এখন বাংলাদেশিই বলা যায়? ফাইনালের পরের সকালে ঘুম থেকে উঠেই প্রশ্নটা শুনে কিংসলে হেসে বলেন, ‘বাংলাদেশে বিয়ে করেছি, নিজেকে তো মন থেকে এ দেশেরই একজন ভাবি। বাংলাদেশের নাগরিকত্ব না পাওয়া পর্যন্ত অবশ্য আমি নাইজেরিয়ান পরিচয়েই চলব। বাংলাদেশের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করব আরও কিছুদিন পর। তবে হ্যাঁ, এটা বলতে পারেন, আমি এখন অর্ধেক নাইজেরিয়ান, অর্ধেক বাংলাদেশি....হা-হা!’

হাতে ট্রফি, বুকে লাল-সবুজ পতাকা—বাংলাদেশ এখন কিংসলের ‘দ্বিতীয় দেশ’
হাতে ট্রফি, বুকে লাল-সবুজ পতাকা—বাংলাদেশ এখন কিংসলের ‘দ্বিতীয় দেশ’

নাইজেরিয়ানরা সাধারণত একটু রাগী হয়। তবে কিংসলে সম্পর্কে চট্টগ্রাম আবাহনীর কোচ শফিকুল ইসলাম মানিক মজা করে বলেন, ‘ও একটু শান্ত রাগী। প্রতিশ্রুতি রক্ষা করলে সব ঠিক আছে। একটু অনুশীলন কম করতে চায়। মাঠেও বেশি দৌড়াদৌড়ি করে না। তবে গোল করার খিদেটা আছে।’

অন্য নাইজেরিয়ানদের মতো শারীরিক শক্তিটা কাজে লাগান কিংসলেও। বাঁ পায়ে প্রচণ্ড শক্তি, ডান পা তুলনামূলক কমজোরি। দলের জন্য আবেগ আছে। আছে নেতা হওয়ার গুণও। দেখা গেল, চার-পাঁচজন নাইজেরিয়ানদের মধ্যে তিনিই নেতা। পড়াশোনা জানেন, সেটা বোঝা যায় তাঁর লেখা-টেখা দেখে। অনেক নাইজেরিয়ান সাদামাটা এবং অগোছালো, কিন্তু কিংসলে গোছানো। পোশাকের দিক থেকেও বেশ পরিপাটি।

রাত জেগে ইউরোপিয়ান লিগের খেলা দেখেন। তাই সকালে অনুশীলন দিলে একটু সমস্যায় পড়ে যান। তবে দলীয় শৃঙ্খলা মেনে চলেন। নাইজেরিয়ান খাবারের পাশাপাশি বাংলাদেশি খাবারও এখন খান। তবে অন্য নাইজেরিয়ানদের মতো ঢাকার বাইরে সস্তায় দেদার খেপ খেলেন না। ‘দামি’ খেপই তাঁর পছন্দ। সাঁতার জানেন না। তবে এখন সাঁতার শিখছেন। স্টিমার বা লঞ্চে উঠতে একটু নাকি ভয় লাগে। গত লিগের আগের লিগে মুক্তিযোদ্ধায় খেলার সময় ফেরিতে গোপালগঞ্জ যেতে হয়েছিল লিগ ম্যাচ খেলতে, তখন কোচ মানিককে বলেছিলেন, ‘কোচ, হোয়াই নট বাস?’

ছোট ভাই এলিটা বেঞ্জামিনও ফুটবলার, তাঁকেও বাংলাদেশে নিয়ে এসেছিলেন। ২০১৩-১৪ মৌসুম দুজনই মুক্তিযোদ্ধায় কাটিয়েছেন। গত লিগে বেঞ্জামিন ঢাকা মোহামেডানে খেলে ফিরে গেছেন দেশে। এলিটা রয়ে গেছেন। আস্তে আস্তে হয়ে উঠছেন পুরোদস্তুর ‘বাংলাদেশি’!