যেদিন পুরো মাঠের দর্শক এক পায়ে দাঁড়িয়েছিল!

ডেডিভ শেফার্ড: ক্রিকেট মাঠে ‘নেলসন’কে বিখ্যাত করেছিলেন যিনি
ডেডিভ শেফার্ড: ক্রিকেট মাঠে ‘নেলসন’কে বিখ্যাত করেছিলেন যিনি

নভেম্বর ১১, ২০১১। কেপটাউন সময় তখন সকাল ১১টা ১১ মিনিট। হঠাৎই কেপটাউনের নিউল্যান্ডস মাঠের প্রায় হাজার বিশেক দর্শক আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। তাও এক পায়ে! এক পায়ে দাঁড়ানো আম্পায়ার ইয়ান গোল্ডও। তা এমন অভাবিত দৃশ্যের অবতারণা কেন? অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে জয়ের জন্য যে দক্ষিণ আফ্রিকার দরকার তখন ঠিক ১১১ রান!

সব মিলিয়ে স্কোরবোর্ডে চোখ রেখে পাওয়া গেল শুধু ‘১’-এরই খেলা। ১১:১১, ১১/১১/১১—দক্ষিণ আফ্রিকার দরকার ১১১ রান!

১১১, ২২২, ৩৩৩—স্কোরগুলোকে ক্রিকেটীয় ভাষায় বলা হয় ‘নেলসন’ স্কোর। সপ্তদশ শতকের শেষ ও অষ্টাদশ শতকের শুরুর দিকে ব্রিটিশ নৌবাহিনীর ফ্ল্যাগ অফিসার হোরাশিও নেলসনের স্মরণেই এমন নামকরণ। অপ্রথাগত কৌশল ও প্রেরণাদায়ী নেতৃত্বের জন্য খ্যাত নেলসন যুদ্ধে এক চোখ, এক হাত ও এক পা হারিয়েছিলেন (১-১-১)। ‘১১১’-কে তাই অশুভ বলে মানেন অনেকে। সেটির প্রভাব এড়াতে অনেকে ব্যতিক্রমী কিছুও করেন। প্রয়াত ব্রিটিশ আম্পায়ার ডেভিড শেফার্ড যেমন ম্যাচে কোনো দলের স্কোর ১১১ বা এর গুণিতকে পৌঁছালে এক পা উঁচিয়ে লাফাতেন।

স্মৃতিটাকে সেদিন ফিরিয়ে এনেছিল কেপটাউনের নিউল্যান্ডস স্টেডিয়াম। ১১টা ১১ মিনিটের সময় ক্রিকেট সাউথ আফ্রিকা মাঠে উপস্থিত দর্শকদের অনুরোধ করেছিল এক মিনিটের জন্য এক পায়ে দাঁড়িয়ে মুহুর্তটাকে স্মরণীয় করে রাখতে। কৌতুকপ্রবণ দর্শকেরা সাড়া দিলেন অনুরোধে, তাঁদের সঙ্গে যোগ দিলেন আম্পায়ার ইয়ান গোল্ডও। সব মিলিয়ে জন্ম হলো বেশ একটা নাটকীয় মুহূর্তেরই।

অবশ্য পুরো টেস্টটাকে ঘিরেই কী নাটকীয়তা কম ছিল! ১১ নভেম্বর ছিল টেস্টের তৃতীয় দিন। সেদিনই টেস্টটা ৮ উইকেটে জিতে নিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। কী ভাবছেন, অস্ট্রেলিয়াকে একেবারে টুঁটি চেপে ধরে তিন দিনে টেস্ট জিতে নিয়েছিল প্রোটিয়ারা? একদমই না। ‘টুঁটি চেপে ধরা’র কাজটা করেছিল দুই দলই, টেস্টের দ্বিতীয় দিনে। ওই এক দিনেই দেখা হয়ে গেছে দুই দলের চার-চারটি ইনিংসের কিছু অংশ।

প্রথম দিনে ৫৫ ওভারে ৮ উইকেটে ২১৪ রানে দিন শেষ করা অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস গুটিয়ে গিয়েছিল দ্বিতীয় দিনে ২০ ওভারের মধ্যেই। অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্কের ব্যাটে চড়ে যোগ করতে পেরেছিল মাত্র ৭০ রান। মরনে মরকেলের বলে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়ার আগে একাই লড়ে গেছেন অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক, করেছেন ১৫১। এরপরই শুরু ধ্বস। মাত্র দুই ঘন্টা ১০ মিনিটের মধ্যে শেষ দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংস। হ্যারিস-ওয়াটসনদের তোপের মুখে প্রোটিয়ারা ১০০ রানও পেরোতে পারল না। অলআউট হয়ে গেছে মাত্র ৯৬ রানেই।


তবে এই ৯৬-কেই আর ‘মাত্র’ মনে হলো না পরের দেড় ঘণ্টায়! অস্ট্রেলিয়াও যে পঞ্চাশই করতে পারল না। ১৮ ওভারে অলআউট হয়ে গেল ৪৭ রানে! ১০৯ বছরের মধ্যে তাঁদের সর্বনিম্ন স্কোর! দক্ষিণ আফ্রিকাও ওই একই দিনের মধ্যে দ্বিতীয়বার ব্যাটিংয়ে নেমে গেল ২৩৬ রানের লক্ষ্য নিয়ে।

তৃতীয় দিনে অবশ্য আমলা-স্মিথের ব্যাটে চড়ে ৩৩ ওভারের মধ্যেই জয় তুলে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। আগের দিনের চেয়ে সেদিন ক্রিকেটীয় নাটকীয়তা একটু কম হয়ে গিয়েছিল তো, ক্রিকেট দেবতা তাই হয়তো একটু নাটকীয়তা আনতেই ‘নেলসন’কে ডেকে আনলেন!

ওহ্‌, কেপটাউনের সঙ্গে ঢাকার সময়ের ব্যবধান কিন্তু চার ঘণ্টা। এই একটু আগেই সেখানে সকালে ১১টা ১১ বেজেছে। তথ্যসূত্র: ক্রিকইনফো।