নাজমুল কিন্তু 'শান্ত' নন!

নাজমুল হোসেনের ব্যাট থেকে এসেছে ৭৩। ছবি: শামসুল হক
নাজমুল হোসেনের ব্যাট থেকে এসেছে ৭৩। ছবি: শামসুল হক

নাজমুল হোসেনের ডাক নাম শান্ত। মাঠের বাইরে যেমনই হন, ব্যাট হাতে উইকেটে নাজমুল কিন্তু বড় অশান্ত! দুর্দান্ত ফর্মে থাকা নাজমুলের ব্যাটে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের প্রথম দিনে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২৪১ রানের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। ৮২ বলে চারটি চার ও তিন ছক্কায় ৭৩ করেছেন। প্রস্তুতি ম্যাচে আগের ইনিংসেই সেঞ্চুরি করেছিলেন। সেই ফর্মটা বিশ্বকাপে টেনে এনে নাজমুল যেন আভাস দিলেন, টুর্নামেন্টে ‘অশান্ত’ হয়ে উঠবেন।

ব্যাটিংয়ে নাজমুলের দেখানো পথে বল হাতেও অশান্ত হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশের বোলাররা। পেস-স্পিন দুদিক থেকেই বাংলাদেশী যুবাদের আক্রমণের এখন পর্যন্ত জবাব দিতে পারছে না দক্ষিণ আফ্রিকা। এই প্রতিবেদন লেখার সময় ৫ উইকেট হারিয়ে ১৪৪ রান করেছে প্রোটিয়ারা। ওপেনার লিয়াম স্মিথ অপরাজিত আছেন ৭৬ রানে। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের কাজটা এখন বেশ কঠিনই, জিততে হলে ১০ ওভারে করতে হবে আরও ৯৭ রান। ওভারপ্রতি ৯.৭ করে!


এর আগে ব্যাটিংয়ে অনেকটা সময় জুড়েই ছিল নাজমুল-শো। ২০তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ব্যাট হাতে নেমেছেন। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা উইকেটে থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে পারছিলেন না। ফলে বড় জুটিও হচ্ছিল না। প্রায় ৩০ ওভার ধরে ব্যাটিং করে নাজমুল প্রায় একাই টেনে নিয়ে গেলেন বলেই ভালো পুঁজি পেল বাংলাদেশ। পিনাক ঘোষ করেছেন ৪৩, জয়রাজ শেখ ৪৬।

নাজমুলকে বলা হয় বাংলাদেশের অন্যতম সেরা যুব ক্রিকেটার। অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ের ক্রিকেটে ৫৩ ম্যাচে তাঁর আছে ১৬ শর বেশি রান। একটি সেঞ্চুরিসহ তাঁর ব্যাটিং গড়টাও কিন্তু ৪৯.৭৭। অনূর্ধ্ব ১৯ আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে ১৬শ রান করা ইতিহাসের মাত্র দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান। আর ৬২ রান করলে এই ফরম্যাটে সবচেয়ে বেশি রানের মালিকও হয়ে যাবে।

গত বছরই ভেঙে দিয়েছেন এক পঞ্জিকাবর্ষে সবচেয়ে বেশি রান তোলার আগের রেকর্ড। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে নিজের খ্যাতিকে আজ নাজমুল টেনে নিয়ে এলেন চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের সবুজ আঙিনায়। মুল্ডারের বলে স্কুপ খেলতে গিয়ে আউট হন শেষের আগের ওভারে। দলের চাহিদা অনুযায়ী কখনো রক্ষণাত্মক, কখনো আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেছেন পরিস্থিতি অনুযায়ী।

সকালে টসে জিতে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশকে মোটামুটি একটা শুরু এনে দিয়েছিলেন পিনাক ও সাইফ হাসান। টানা তিনটি মেডেন তুলে নিয়ে প্রোটিয়া যুবারা বুঝিয়ে দিয়েছিল, আগের দুই সিরিজে ১১-৩ ব্যবধানে হেরে যাওয়া থেকে ভালোমতোই শিক্ষা নিয়ে এসেছে তারা। পিনাক বোলারদের ওপর চড়াও হয়ে অবশ্য রানের চাকা ঘোরাতে শুরু করেন। ৫১ বলে ৪৩ রান করে পিনাকের ইনিংসটির ‘অপমৃত্যু’ হয় রান আউটে। সাইফ আগেই দলীয় ৩০ রানের মাথায় ফিরেছিলেন ৬ রান করে।

পিনাকের বিদায়ের পর জয়রাজ শেখের ব্যাটে দারুণ কিছু সময় কাটিয়েছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। ৫০ বলে ৬ চার আর এক ছয়ে ৪৬ রান করে আউট হন তিনি। জয়রাজের বিদায়ের পর অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ আর নাজমুল দলকে এগিয়ে নিয়ে যান আরও অনেকটা পথ। মেহেদী আউট হন ২৩ রানে। জাকির হাসানের ব্যাট থেকে আসে ১৯ রান। শেষের দিকে মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন ১৬ বলে ১৭ রান করেন। ইনিংসের শেষ ১০ ওভারে বাংলাদেশ তুলেছে ৭১ রান। তবুও স্কোরটা যেখানে যাওয়ার কথা ছিল, যায়নি। বাংলাদেশের স্পিনারদের এখন জ্বলে উঠতে হবে। তাহলেই জয় দিয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করতে পারবে যুবারা।

দক্ষিণ আফ্রিকা অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সেরা বোলার ছিলেন মুল্ডার। ৪২ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৪০/৭ (সাইফ ৬, পিনাক ৪৩, জয়রাজ ৪৬, নাজমুল ৭৩, মেহেদী মিরাজ ২৩, জাকির ১৯, সাঈদ ৪, সাইফুদ্দিন ১৭*, সঞ্জিত ২*; মুল্ডার ৩/৪২, সিপাম্লা ১/৪৭, হোয়াইটহেড ১/৪৪, ডি জর্জি ১/৩৪)
* অসমাপ্ত