রিনার রুপালি আনন্দ

কাল সারা দিনে এসএ গেমসে বাংলাদেশের সেরা সাফল্য ছিল কুস্তিতেই। একই ফ্রেমে তিন পদকজয়ী অ্যাথলেট। দুই পাশে দুই ব্রোঞ্জজয়ী সুমা চৌধুরী (বাঁয়ে) ও নদী চাকমা। মাঝে রুপাজয়ী রিনা। কাল গুয়াহাটিতে l প্রথম আলো
কাল সারা দিনে এসএ গেমসে বাংলাদেশের সেরা সাফল্য ছিল কুস্তিতেই। একই ফ্রেমে তিন পদকজয়ী অ্যাথলেট। দুই পাশে দুই ব্রোঞ্জজয়ী সুমা চৌধুরী (বাঁয়ে) ও নদী চাকমা। মাঝে রুপাজয়ী রিনা। কাল গুয়াহাটিতে l প্রথম আলো

এক গোছা ফুলের সঙ্গে হাতে ধরা রুপার পদক। গলায় জড়ানো উত্তরীয়। সতীর্থদের কেউ একজন লাল-সবুজ রঙের জাতীয় পতাকাও গায়ে জড়িয়ে দিলেন। গুয়াহাটির স্পোর্টস কমপ্লেক্সের ইনডোর স্টেডিয়ামের উজ্জ্বল আলোয় রিনা আক্তারের চোখ দুটি চিকচিক করছিল। এত আনন্দের মাঝেও রিনার চোখে জল! প্রয়াত বাবা হেকমত বন্দের স্বপ্নটা পূরণ করতে পেরেছেন, সেই আনন্দেই সুখের কান্না।
খুলনার দৌলতপুরের মেয়ে রিনার হাত ধরেই এবারের এসএ গেমসে প্রথম রুপার পদক এসেছে কুস্তি থেকে। রিনা জিতেছেন ৬০ কেজি ওজন শ্রেণিতে। কাল ছেলেরাও কুস্তির দুটি ইভেন্টে অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু সব আলো কেড়ে নেন মেয়েরা। ছেলেদের দুটি ইভেন্টে কোনো সাফল্যই আসেনি। এসএ গেমসে প্রথমবারের মতো জায়গা পাওয়া মেয়েদের কুস্তিতে পরে আরও দুটি ব্রোঞ্জ পদক এনেছেন সুমা চৌধুরী ও নদী চাকমা। সুমা জিতেছেন ৫৫ কেজিতে, নদী ৪৮ কেজিতে। ৬০ কেজি ওজন শ্রেণিতে সোনা জিতেছেন ভারতের মনীষা, ব্রোঞ্জ পেয়েছেন শ্রীলঙ্কার প্রিয়াঙ্কা কুমারী। পুরুষ বিভাগে অংশ নেওয়া মোহাম্মদ দীপু মিয়া (৬৫ কেজি) ও বাবুল মোড়ল (৫৭ কেজি) পঞ্চম হয়ে শেষ করেন।
ক্যারিয়ারের প্রথম আন্তর্জাতিক গেমসে অংশ নেওয়ার আনন্দে ছয় মাস ধরেই রোমাঞ্চিত ছিলেন রিনা। পরশু তো টিম হোটেলে একটু আগেভাগেই ঘুমিয়ে পড়েন। স্নায়ুচাপ যাতে মোটেই আঁচড় কাটতে না পারে সেই চেষ্টা আর কি!
কুস্তিতে বরাবরই সেরা ভারত। তবুও মনের গহিনে সোনা জয়ের একটা স্বপ্ন লুকোনো ছিলই। কাল খেলা শেষে তাই রিনার কণ্ঠে একটু হলেও ছিল হতাশার সুর, ‘আমার ইচ্ছা ছিল সোনা জেতার। সেই আশাতেই ভারতে এসেছি। যদিও জানতাম কখনো ভারতকে হারাতে পারব না। তারপরও চেষ্টা করেছি। গত ছয় মাস যে কষ্ট করেছি, রুপা জেতায় তা কিছু হলেও দূর হয়েছে।’
রিনার কষ্টের জীবনের শুরু ছোটবেলা থেকেই। বাবা হেকমত বন্দ ছিলেন ক্রিসেন্ট জুট মিলের কর্মচারী। বাবার স্বল্প আয়ে সংসার চলত না। চার বছর আগে হঠাৎই স্ট্রোকে মারা যান বাবা। এরপরই সংসারের দায়িত্বও নিয়েছেন রিনা। সেটা কুস্তি খেলেই! দেশে মেয়েদের কুস্তি শুরু হয়েছে ছয় বছর আগে। অল্প দিনে খেলা শুরু করার পর এটাই আন্তর্জাতিক আসরে কুস্তির সেরা সাফল্য। এই কুস্তি খেলেই গত বছর সেনাবাহিনীতে চাকরি পেয়েছেন রিনা। খেলার পাশাপাশি বর্তমানে ঢাকা সেনানিবাসের শহীদ রমিজউদ্দিন কলেজে পড়াশোনা করছেন।
আগে জুডো খেলতেন। কিন্তু বড় বোন জাহানারাই কুস্তিতে নিয়ে আসেন রিনাকে। এর আগে ভলিবল, চাকতিনিক্ষেপ ও বর্শানিক্ষেপও খেলতেন। সব ছেড়েছুড়ে কুস্তিটাকেই এখন আপন করে নিয়েছেন।
ক্যারিয়ারের প্রথম পদক জিতে ভারত ও পাকিস্তানের কর্মকর্তাদের শুভেচ্ছায়ও সিক্ত হয়েছেন। বিজয়মঞ্চে ভারতের মনীষাকে বাদ দিয়ে রিনার ছবি তোলা নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়েন সবাই। সতীর্থ খেলোয়াড়েরা রিনাকে নিয়ে শুরু করলেন সেলফি তোলা।
মেয়েদের কুস্তির এমন সাফল্যের দিনে দারুণ খুশি কোচ আশরাফ আলী, ‘এবার মেয়েরা অনেক ভালো অনুশীলন করেছে। আমরা ওদের নিয়ে আশাবাদী ছিলাম। প্রথম দিনেই মেয়েরা সেটা প্রমাণ করেছে।’