রোমাঞ্চের দিনগুলো

চাইলে ‘বিশ্বকাপের দিনগুলো’ শিরোনামে একটা ডায়েরি লিখতে পারেন মেহেদী হাসান মিরাজরা। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের এই কদিনে কতশত স্মৃতি যে জমা হয়েছে মনের কোণে! সময়ের স্রোতে একসময় হারিয়ে যাবে অনেক কিছুই। তবে কিছু ঘটনা, কিছু মুহূর্ত, কিছু গল্প সব সময় উজ্জ্বল হয়ে ধরা দেবে মেহেদীদের স্মৃতিতে।
বিশ্বকাপের জন্য বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল ৩ জানুয়ারি। এর পর প্রায় দেড় মাসের রোমাঞ্চকর যাত্রা। বিশ্বকাপের একেকটা দিন রোমাঞ্চের ডালি সাজিয়ে বসেছিল মেহেদীদের সামনে। টিম প্রটোকল, মানুষের বিপুল প্রত্যাশা, সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা, ১৫ হাজারের বেশি দর্শকের সামনে খেলা, স্নায়ুক্ষয়ী ম্যাচে দুর্দান্ত জয়—এমন অভিজ্ঞতা এবারই প্রথম হলো খেলোয়াড়দের।
মাঠে দারুণ পারফরম্যান্স আর অসাধারণ নেতৃত্বে সবচেয়ে আলোচিত অধিনায়ক মেহেদীই। তবে বড় টুর্নামেন্টে খেলাটা তাঁর কাছে নতুন নয়; খেলেছেন আগের বিশ্বকাপও। এবারের বিশ্বকাপের আগে সব মিলিয়ে খেলেছেন ৫০টি যুব ওয়ানডে। তবে বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে পাঁচ বছর খেলার অভিজ্ঞতায় এমন রোমাঞ্চ তাঁর এই প্রথম, ‘অনূর্ধ্ব-১৯ দল নিয়ে এমন মাতামাতি মনে হয় আগে কখনো হয়নি। এই অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতে কাজে দেবে। আমাদের ভেতর যে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছে, সেটা আমাদের সামনে এগিয়ে নেবে। তবে টুর্নামেন্টের আগে ভাবিনি, এমন মাতামাতি কিংবা এত বড় অর্জন হবে আমাদের।’
অধিনায়ক হওয়ায় মেহেদীর কাঁধে ছিল বাড়তি দায়িত্ব। চাপের মধ্যে নিজেকে তো বটেই, উদ্বুদ্ধ করতে হয়েছে সতীর্থদেরও। কঠিন কাজটা কীভাবে সামলেছেন, সেটি জানালেন মেহেদী, ‘চাপের সময় অধিনায়ক হিসেবে অন্যদের বলার চেষ্টা করেছি, নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখতে। সবাইকে বলতাম, আমরা দেশের হয়ে বিশ্বকাপ খেলছি। এ পর্যায়ে এসে আত্মবিশ্বাস যেন নড়ে না যায়। আগের ভালো পারফরম্যান্সগুলো মনে করতে বলতাম সবাইকে।’
বাঁহাতি পেসার মেহেদী হাসান রানার অভিজ্ঞতাও অভিন্ন। কঠিন ম্যাচগুলো খেলার আগে তিনি মনে করেছেন বিশ্বকাপের আগে মাশরাফি বিন মুর্তজার কথাগুলো, ‘চিন্তাও করিনি এমন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাব। মানুষ আমাদের দিকে নজর রাখছে, পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হয়েছে, সবই নতুন অভিজ্ঞতা। বিশ্বকাপের আগে মাশরাফি ভাই বলেছিলেন, চাপ না নিয়ে খেলতে। আমরাও তাই চেষ্টা করেছি।’
সালেহ আহমেদ কাল পটুয়াখালীর নিজ বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন। এই বাঁহাতি স্পিনার কখনোই ভুলবেন না এবারের বিশ্বকাপের স্মৃতি, ‘বয়সভিত্তিক ক্রিকেট তো শেষ করে ফেললাম। এমন মুহূর্ত আর পাব না। খুব মনে পড়বে এই বিশ্বকাপের কথা। এমন সাফল্য কি ভোলা যায়!’
অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের সর্বোচ্চ টুর্নামেন্ট। খেলোয়াড়দের শেখার জন্য বড় মঞ্চও। সেই ‘শিক্ষা’টা যে দারুণ হলো, বোঝা গেল দলের বোলিং অলরাউন্ডার সাইফউদ্দিনের কথায়, ‘টুর্নামেন্টে অনেক অপরিচিত দলের সঙ্গে খেলেছি। চাপে কীভাবে খেলতে হয়, শিখেছি। কীভাবে মাঠে ও মাঠের বাইরের সবকিছুর সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে, শিখেছি সেটাও।’
মেহেদী-সাইফউদ্দিনদের সামনে পড়ে আছে দীর্ঘ পথ। সে পথে নিশ্চয়ই কাজে লাগবে বিশ্বকাপের অভিজ্ঞতা, প্রেরণা হবে বিশ্বকাপের স্মৃতি।