ফ্রান্সকে সঙ্গী করে ব্রাজিলে পর্তুগাল

বল চলে গেল বার উঁচিয়ে। হতাশা লুকাতে পারলেন না ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। গ্যালারিতে তখন ‘মেসি, মেসি’ জয়ধ্বনি। রোনালদোর অহমে এটা হুল ফোটাবে জানাই ছিল। কিন্তু তা যে এভাবে, তা কে জানত? পরে ‘অতিমানবীয়’ এক হ্যাটট্রিক করে রোনালদো পর্তুগালকে নিয়ে গেছেন বিশ্বকাপে। আর ২ গোল করেও রোনালদোর আলোয় ঢাকা পড়ে গেছেন সুইডেনের জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ।
পরশু বিশ্বকাপ বাছাইয়ের প্লে-অফের দুর্দান্ত এক দিনে আসলে জয় হয়েছে ফুটবলেরই। রোনালদো-ইব্রার কল্যাণে সুইডেনের সঙ্গে পর্তুগালের ৩-২ গোলের জয়টাই হয়তো আগে আসে। কিন্তু ‘মিশন ইমপসিবল’কে সম্ভব করে ফ্রান্সও কেটে ফেলেছে ব্রাজিলের টিকিট। নিজেদের মাঠে ইউক্রেনকে ৩-০ গোলে হারিয়েছে ফ্রান্স। ইউরোপের বাছাইপর্বে দুই গোলে পিছিয়ে থেকে এর আগে কোনো দলই বিশ্বকাপে যায়নি। এদিন বাকি দুটি প্লে-অফ থেকে অনুমিতভাবে ব্রাজিলের টিকিট কেটে ফেলেছে ক্রোয়েশিয়া ও গ্রিস।
প্রভাত সব সময় দিনের আসল পূর্বাভাস দেয় না। সাদামাটা প্রথমার্ধের পর এমন বিস্ময় অপেক্ষা করছে সেটা কে জানত? শুরুটা করেছিলেন রোনালদোই। ৫০ মিনিটে মুতিনহোর দারুণ এক থ্রু থেকে বল পান রোনালদো। বলটা জালে জড়িয়ে দিয়েই যে উদ্যাপনটা করলেন, তাতে যেন এই হুংকারটাই ছিল, ‘আজকের রাতটা আমারই।’
কিন্তু নাটক তো তখনো শুরুই হয়নি। রোনালদো গোল করবেন আর ইব্রাহিমোভিচ সেটা অসহায় হয়ে দেখবেন, তা কি হয়? ৬৮ মিনিটে কর্নার থেকে হেড দিয়ে করা গোলে শুরু। চার মিনিট পর অসাধারণ এক ফ্রিকিকে গোল করে হঠাত্ করেই বদলে দিলেন দৃশ্যপট। দুই লেগ মিলে তখন সমতা (২-২)। আরেকটা গোল হলেই বিশ্বকাপে যাবে ইব্রারা। সোলনার ফ্রেন্ডস অ্যারেনা তখন ব্রাজিল-স্বপ্নে বিভোর।
কিন্তু সুখের সেই স্বপ্নটা টিকল মাত্র পাঁচ মিনিট। রোনালদো ৭৭ মিনিটে আলমেইদার পাস থেকে বাঁ পায়ে দুর্দান্ত গোল করে সমতা আনলেন। দুই মিনিটের মধ্যেই আবার মুতিনহোর রক্ষণচেরা পাস। এবার খেল দেখালেন ডান পায়ে। হ্যাটট্রিক গোলের পর তাঁকে দেখা গেল সতীর্থদের বাঁধভাঙা আলিঙ্গনে।
১২০০ কিলোমিটার দূরের প্যারিসে তখন চলছে রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা। ব্রাজিল থেকে তখন মাত্র একটা গোল দূরে ফ্রান্স। ৭২ মিনিটে ডিফেন্ডার মামাদু সাকোর দ্বিতীয় গোলে সেটাও পেয়ে গেল। ৭৭ হাজার দর্শকে ঠাসা স্তাদে দা ফ্রান্সের গ্যালারির রং তখন নীল।
ম্যাচের আগে অলিভিয়ের জিরু বলেছিলেন, দরকার হলে মাঠে জীবন দিয়ে দেবেন। কথাটা যে ফাঁকা বুলি ছিল না, সেটা ফ্রান্স মাঠেই দেখাল। শুরু থেকেই রিবেরি, বেনজেমারা চেপে ধরেছিল ইউক্রেনকে।
২২ মিনিটে মামাদু সাকোর গোলে উত্সবের প্রথম উপলক্ষ পায় ফ্রান্স। এরপরই অবশ্য একপশলা বিতর্কের হাওয়া। বেনজেমার গোল অফসাইড বলে বাতিল করে দেন রেফারি। ‘শোধবোধ’ করতেই কি না এই বেনজেমারই ৩৪ মিনিটে দেওয়া অফসাইড গোল জায়েজ করে নিলেন রেফারিরা। অথচ রিপ্লে দেখিয়েছে, পরিষ্কার গজ খানেক অফসাইডে ছিলেন বেনজেমা। ইউক্রেন দল অফসাইডের আবেদনও করেছিল সমস্বরে।
এমন একটা জয়ের পর ফ্রান্সের ন্যায়-অন্যায় নিয়ে ভাবার সময় কোথায়? তারা ভাসছে আনন্দে। এই স্তাদে দা ফ্রান্সের ১৯৯৮ বিশ্বকাপ জয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন দিদিয়ের দেশম। এবার কোচ হয়ে দলকে নিয়ে গেলেন বিশ্বকাপে। দেশমের কণ্ঠে তাই তৃপ্তি, ‘ক্যারিয়ারে দুর্দান্ত কিছু মুহূর্ত এসেছে আমার। ফ্রান্সকে বিশ্বকাপে নিয়ে যাওয়া অসাধারণ একটা ব্যাপার, বিশেষ করে প্রথম লেগের পর, যখন কিছুই আমাদের অনুকূলে ছিল না।’
পরশু চমক ছিল না আফ্রিকাতেও। প্রথম লেগে ৬-১ গোলে জেতার পর ঘানা বিশ্বকাপে পা একরকম দিয়েই ফেলেছিল। পরশু মিসরের কাছে ২-১ গোলে হেরেও ক্ষতি হয়নি তাদের। নিজেদের মাঠে বুরকিনা ফাসোকে ১-০ গোলে হারিয়ে অ্যাওয়ে গোলের সুবাদে ব্রাজিলে যাচ্ছে আলজেরিয়াও। ঘানা, আলজেরিয়া, নাইজেরিয়া, ক্যামেরুন, আইভরি কোস্ট—২০১০ বিশ্বকাপে যে পাঁচটা দল খেলেছিল, এবার আফ্রিকা থেকে সেই পাঁচটা দলই যাচ্ছে বিশ্বকাপে। এএফপি।

বিশ্বকাপের ৩১ দল
এশিয়া
অস্ট্রেলিয়া, ইরান, জাপান,
দক্ষিণ কোরিয়া
ইউরোপ
স্পেন, জার্মানি, ইতালি, ইংল্যান্ড, হল্যান্ড, বেলজিয়াম, রাশিয়া, সুইজারল্যান্ড, বসনিয়া-হার্জেগোভিনা, পর্তুগাল, ফ্রান্স, ক্রোয়েশিয়া, গ্রিস
দক্ষিণ আমেরিকা
ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, চিলি, কলম্বিয়া, ইকুয়েডর
কনক্যাকাফ
যুক্তরাষ্ট্র, কোস্টারিকা, হন্ডুরাস, মেক্সিকো
আফ্রিকা
নাইজেরিয়া, আইভরি কোস্ট, ক্যামেরুন, ঘানা, আলজেরিয়া

এক নজরে
ইউরোপ
সুইডেন ২: ৩ পর্তুগাল
(সামগ্রিক ফল ২-৪)
ফ্রান্স ৩: ০ ইউক্রেন
(সামগ্রিক ফল ৩-২)
ক্রোয়েশিয়া ২: ০ আইসল্যান্ড
(সামগ্রিক ফল ২-০)
রোমানিয়া ১: ১ গ্রিস
(সামগ্রিক ফল ২-৪)

আফ্রিকা
আলজেরিয়া ১: ০ বুরকিনা ফাসো
(সামগ্রিক ফল ৩-৩, অ্যাওয়ে গোলে জয়ী আলজেরিয়া)
মিসর ২: ১ ঘানা
(সামগ্রিক ফল ৩-৭)

আন্তমহাদেশীয়
নিউজিল্যান্ড ২: ৪ মেক্সিকো
(সামগ্রিক ফল ৩-৯)