মিরপুরে রকিবুল-ঝড়

মাত্র ২ রানের জন্য সেঞ্চুরি না হলেও রকিবুল হাসানের ব্যাটে কাল ঝড়ই দেখেছে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম  প্রথম আলো
মাত্র ২ রানের জন্য সেঞ্চুরি না হলেও রকিবুল হাসানের ব্যাটে কাল ঝড়ই দেখেছে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম প্রথম আলো

এবারের প্রিমিয়ার লিগ থেকে ‘অঘটন’ শব্দটা উঠে গেছে আরও আগেই। কাল শুরু সুপার লিগের ছয়টি দল পয়েন্ট টেবিলেও এতটাই গা ঘেঁষাঘেঁষি করে আছে যে কারও কাছেই কারও হার অঘটন নয়। পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ দল আর ষষ্ঠ দলের মধ্যে পয়েন্টের ব্যবধান মাত্র ৩! নামের ভারে এগিয়ে থাকলেও সুপার লিগের প্রথম দিনে ফতুল্লার ম্যাচে প্রাইম দোলেশ্বরের কাছে প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের ৫৬ রানের হারটাকেও তাই অঘটন বলা যাচ্ছে না।
অন্য দুই ম্যাচে বিকেএসপিতে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের কাছে মোহামেডান হেরেছে ৪ উইকেটে। আর মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে গাজী ট্যাংক ক্রিকেটার্স ১৪২ রানের বিশাল ব্যবধানে জিতেছে কলাবাগান ক্রিকেট একাডেমির বিপক্ষে।
ইমরুল কায়েস-আফতাব আহমেদের ওপেনিং জুটিতে ১১৪ রান এলেও ১৫৫ রানে ৩ উইকেট পড়ে গিয়েছিল গাজী ট্যাংকের। রকিবুল-মাহমুদউল্লাহর ৫৮ রানের চতুর্থ উইকেট জুটিতে সে ধাক্কা সামলে ওঠার পর গাজী ট্যাংককে কলাবাগান ক্রিকেট একাডেমির ধরাছোঁয়ার বাইরে নিয়ে যায় রকিবুল-টেন ডেসকাটের পঞ্চম উইকেট জুটি।
১২৪ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে এই দুই ব্যাটসম্যান রীতিমতো ছেলেখেলা করলেন প্রতিপক্ষ বোলারদের নিয়ে। তাতে ইনিংসের শেষ ৫ ওভারেই এল ১০১ রান। এক বা একাধিক ছক্কা ছিল ওই সময়ের প্রতি ওভারেই। এর মধ্যে মাকসুদুলের করা ৪৬তম ওভারে পর পর তিন ছক্কা মেরেছেন রকিবুল। জাকারিয়ার করা ৪৯তম ওভারে একই ঘটনা ঘটিয়েছেন ডেসকাটও। হ্যামিল্টন মাসাকাদজার করা শেষ ওভারে এসেছে ২৭। ওই ওভারের শেষ দুটি বলে ১২ রান নিতে পারলে সেঞ্চুরি পূর্ণ হতো রকিবুলের। পঞ্চম বলে লং অন দিয়ে বিশাল ছক্কা মারতে পারলেও পরের বলটাতে নিতে পারলেন বাউন্ডারি। ২ রানের জন্য সেঞ্চুরিবঞ্চিত হওয়ায় রকিবুলের আক্ষেপ থাকতে পারে। তবে পাঁচ ছক্কা আর ১০ বাউন্ডারিতে ৬৪ বলে অপরাজিত ৯৮ রান, শেষ ৪৮ রান করেছেন মাত্র ১৪ বলে—মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম যেন নতুন রকিবুলকেই খুঁজে পেল। কম যাননি ডেসকাটও। ২৬ বলে অপরাজিত ৫৪ রানের ইনিংসে ছক্কাই মেরেছেন সাতটি।
৩৩৭ রান তাড়া করতে গিয়ে শুরুতেই ধসে পড়ে কলাবাগান ক্রিকেট একাডেমি। ৬০ রানে পড়ে যায় ৪ উইকেট, ফিল্ডিংয়ের সময় চোট পাওয়ায় ব্যাট করতে পারেননি দেওয়ান সাব্বির। তার পরও যে দলটা শেষ পর্যন্ত ১৯৫ রান করল, তার কৃতিত্ব মিডল অর্ডারে শরীফউল্লাহ (৫৫), নুরুজ্জামান (২৬) আর সগীর হোসেনের (৭০*)।
শুভাশিস রায় আর তানভীর হায়দারের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি মোহামেডান। মাত্র ৪৮ রানে ৬ উইকেট পড়ে যাওয়া দলটা শেষ পর্যন্ত ১৬৫ রান করতে পেরেছে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার ৪৯ রানের সৌজন্যে। কিন্তু অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের অপরাজিত ৪৪ রানে শেখ জামাল জিতে গেছে ৩৪.২ ওভারেই। দুই ‘প্রাইমের’ লড়াইয়ে প্রাইম দোলেশ্বরের ২৪৪ রানের জবাবে ৩ বল বাকি থাকতে ১৮৮ রানে অলআউট হয়ে গেছে প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব। ব্যাট হাতে ৩২ বলে অপরাজিত ৪৩ রানের পর বল হাতে ৩৩ রানে ৩ উইকেট—অধিনায়ক ফরহাদ রেজার অলরাউন্ড নৈপুণ্যেই জয়টা সহজ হয়েছে দোলেশ্বরের।

সং ক্ষি প্ত স্কো র

n মোহামেডান: ৪৬ ওভারে ১৬৫ (মাশরাফি ৪৯, মুক্তার ২৬, সামিত ২৩, স্ট্যানিকজাই ২১; শুভাশিস ৪/৩০, তানভীর ৩/২৬, সানি ২/২৪, ক্রুক ১/৩৮)। শেখ জামাল: ৩৪.২ ওভারে ১৬৭/৬ (মুশফিক ৪৪*, জহুরুল ৩৩, জুনায়েদ ২১, মুনাবীরা ২০; রহমত ৩/৩৮, হাবিবুর ২/১৭, সামিত ১/৪০)।

ফল: শেখ জামাল ৪ উইকেটে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: শুভাশিস রায়।

n গাজী ট্যাংক: ৫০ ওভারে ৩৩৭/৪ (রকিবুল ৯৮*, ইমরুল ৬৪, টেন ডেসকাট ৫৪*, আফতাব ৫৩, মাহমুদউল্লাহ ৩৮; অভিষেক ১/২৮, সাব্বির ১/৩৬, শরীফউল্লাহ ১/৪৬, মাকসুদুল ১/৬৯)। কলাবাগান একাডেমি: ৪৫.৩ ওভারে ১৯৫/৯ (সগীর ৭০*, শরীফউল্লাহ ৫৫; আরাফাত ৩/৪৫, রুবেল ২/১৪, আফতাব ১/৯, মাহমুদউল্লাহ ১/২৪, নাঈম জু. ১/৪৩)।

ফল: গাজী ট্যাংক ১৪২ রানে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: রকিবুল হাসান।

n প্রাইম দোলেশ্বর: ৫০ ওভারে ২৪৪/৭ (মেহেদী ৪৯, ফরহাদ ৪৩*,ম্যালান ৪০, কব ৩৮; এনামুল জু. ৩/৫৩, শিহান জয়াসুরিয়া ২/৪১, ডসন ১/৪২, বোপারা ১/৪৫); প্রাইম ব্যাংক: ৪৯.৩ ওভারে ১৮৮ (শিহান জয়াসুরিয়া ৪৫, মাহমুদুল ৩৪, তাপস বৈশ্য ২৫*; ফরহাদ ৩/৩৩, সাব্বির ২/৩১, কব ১/৫, সোহাগ ১/২৬, তাইজুল ১/৩৭, শফিউল ১/৩৭)।

ফল: প্রাইম দোলেশ্বর ৫৬ রানে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: ফরহাদ রেজা।