মধুর সেই মুহূর্তের অপেক্ষায় লেস্টারবাসী

আনন্দ-উৎসবের অপেক্ষায় লেস্টারবাসী। ছবি: এএফপি।
আনন্দ-উৎসবের অপেক্ষায় লেস্টারবাসী। ছবি: এএফপি।

হামড্রাম স্ট্রিটে একটু খেয়াল করলেই বোঝা যায় ব্যাপারটা। সবার মধ্যেই একটা চাপা উত্তেজনা। আসন্ন একটা উৎসবের চাপা প্রস্তুতি। সে উৎসবটা এমনই যার সঙ্গে পরিচয় এর আগে কখনোই ঘটেনি লেস্টার সিটির অধিবাসীদের। ইংল্যান্ডের এই শহরটি এখন উত্তেজনায় টগবগ করছে—আর তিনটি পয়েন্ট পেলেই যে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা প্রথমবারের মতো চলে আসবে এই শহরটিতে।
লেস্টার সিটিতে জন্ম নেওয়া, এই শহরে সারাটা জীবন কাটিয়ে দেওয়া মানুষজনের কাছে পুরো ব্যাপারটাই অসম্ভব আনন্দের, অসম্ভব উত্তেজনার। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে এই শহরের ক্লাবটি খেলে, কিন্তু কোনো দিনই শিরোপার ধারে-কাছে পৌঁছতে পারে না—এত দিন এটাই তাঁরা দেখে এসেছে। কিন্তু এবারের মৌসুমটি যে উল্টে-পাল্টে দিল সবকিছু। মৌসুমের শুরুতে লেস্টার সিটির অতি মারদাঙ্গা সমর্থকটিও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কথা উচ্চারণ করার সাহস দেখাননি যেখানে, সেখানে শিরোপা জয়ের প্রস্তুতি উৎসবের প্রস্তুতি নেওয়ার ব্যাপারটা কেমন যেন স্বপ্নতূল্যই। লেস্টারের ফুটবলপ্রেমীদেরও ঠিক এমনটাই মনে হচ্ছে। অনেকের কাছেই তো এটা জীবনের শ্রেষ্ঠতম আনন্দের উপলক্ষ হতে চলেছে। ফুটবল দুনিয়ার সবচেয়ে ‘আরাধ্য’ শিরোপাটি জয় করতে চলেছে তাঁদেরই পুঁচকে ক্লাব লেস্টার—স্বপ্ন হলেও এ যে অসম্ভব স্বপ্নই।
অনেকেই আবার এখনই এসব নিয়ে কথা বলতে চান না—এই গোষ্ঠী একটু সংস্কারাচ্ছন্ন। সংশয় আর শঙ্কা এদের মনের ভেতর খেলা করে সব সময়ই। আগে থেকে ‘শিরোপা জয়,শিরোপা জয়’ করে না আবার স্বপ্নভঙ্গ হয়। রোববার ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে ম্যাচটির পরই এ নিয়ে কথা বলবেন তাঁরা। লেস্টারের খেলোয়াড়দেরও এখনই প্রশংসায় ভাসিয়ে দিতে চান না তাঁরা, পাছে দলের খেলোয়াড়েরা না আবার ফর্ম হারিয়ে ফেলেন!
শিরোপা জয়ের আগাম আনন্দটা আছে। সেই আনন্দে গোটা শহরটাই যেন ঝলমল করছে। ইয়ান স্মিথ নামের এক লেস্টার ভক্তের মুখ থেকেই এটি জেনে নিতে পারেন, ‘শহরটির দিকে তাকান, তাকান এই শহরের মানুষদের দিকে। সবকিছুই অন্যরকম, আনন্দমুখর হয়ে আছে। সবাই দারুণ একটা সময়ের মধ্য দিয়েই যাচ্ছে।’
এই মুহূর্তটা যে লেস্টারবাসীর জন্য জীবনের সেরা মুহূর্ত, স্মিথের তা বলতে সংকোচ নেই এতটুকুও, ‘এমন ঘটনাকে অনেকেই জীবনের সেরা ঘটনা বলছেন। বলছেন, এমন ঘটনা জীবনে একবারই ঘটে। দ্বিতীয়বার এমন উৎসবের সঙ্গে আমাদের দেখা হবে কিনা বলতে পারছি না।’
বার্মিংহাম, শেফিল্ড, ম্যানচেস্টারের মতো শহরগুলোর তুলনায় লেস্টারকে বেশ পিছিয়েই রাখতে হয়। মাত্র ৩ লাখ জনসংখ্যার ছোট্ট এই শহরটিতে নাকি লেস্টারের জার্সির নীল রঙের ঢেউ লেগেছে—অন্তত আনা হুলেউইজের তো তা-ই মনে হয়। লেস্টার সিটির গাঢ় নীল রঙের জার্সিটি শোভা পাচ্ছে অনেকেরই শরীরে। এর পাশাপাশি লেস্টার সিটির স্কার্ফ, ক্যাপ ও অন্যান্য স্মারকে নীল রঙের আধিক্য ছড়িয়ে পড়েছে। হুলেউজের জন্ম লেস্টারেই। শহরটিকে এমন নীল রঙে ঢেকে যেতে কখনো দেখেননি।
লেস্টার সিটির তারকা স্ট্রাইকার জেমি ভার্ডির নামে শহরের বিভিন্ন পাবে পরিবেশন করা হচ্ছে ‘ভার্ডি বম্ব’ নামের বিশেষভাবে তৈরি এক পানীয়। রোববার ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে ম্যাচটি চলার সময় গোটা শহরে যে ভার্ডি বম্বের নহর বয়ে যাবে—এ কথা ভেবেই পাব মালিকেরা ভীষণ উত্তেজিত। কিন্তু পাব মালিকদের চেয়েও আনন্দিত শহরের ডেকোরেটররা। লেস্টার লিগ জিতুক আর না-ই জিতুক শুক্রবার থেকে নাকি গোটা শহরটা নীল রঙের আলোয় রাঙিয়ে দিতে বিশেষ নির্দেশ জারি হয়েছে।
আসন্ন সাফল্যের হাতছানিতে লেস্টারের নগরপিতা পিটার সোলসবি ভীষণ উত্তেজিত, ‘শহরের জন্য ব্যাপারটা দারুণই। তৃতীয় রিচার্ড এই শহরের বাসিন্দা হওয়ার পর থেকেই আমাদের ভাগ্য বদলে গেছে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে সাফল্যের কারণ এটিই!’
কে এই তৃতীয় রিচার্ড? গত বছরই প্ল্যাটাজেনেট বংশের শেষ রাজা রিচার্ডের ৫০০ বছরের পুরোনো দেহাবশেষ উদ্ধার হয় শহরের একটি পার্কের মাটি খুঁড়ে। পরে লেস্টারের সিটি ক্যাথেড্রালে আনুষ্ঠানিকতার সঙ্গে সমাহিত করা হয় তাঁকে। নগরপিতার বিশ্বাস, এই ঘটনাই ভাগ্য বদলে দিয়েছে ছোট্ট এই শহরটির।
আগের মৌসুমেই যে দলটি অবনমনের হাত থেকে বেঁচে গেছে, সে দলটিরই পরের মৌসুমে শিরোপার অপেক্ষা এমন আধ্যাত্মিক বিশ্বাস বাড়িয়ে তো দিতেই পারে! সূত্র: এএফপি।