'আলী, ফ্রেজিয়ার ও ফোরম্যান, আমরা সবাই একই সত্তা ছিলাম'

রাম্বল ইন দ্য জঙ্গলে ফোরম্যানের বিপক্ষে আলী-এএফপি।
রাম্বল ইন দ্য জঙ্গলে ফোরম্যানের বিপক্ষে আলী-এএফপি।

৬০ বছর আগে কেন্টাকির লুইভিলে এক সাইকেলচোরকে ধরতে গিয়ে অযতনে যাত্রা শুরু হয়েছিল বিশ্ব ক্রীড়া ইতিহাসে অন্যতম সেরা ব্যক্তিত্বের। পুলিশ কর্মকর্তার পরামর্শে সেখান থেকে বক্সিংয়ে নাম লেখানো মোহাম্মদ আলীর। এরপর তো শুধু বক্সিং নয়, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াই, নিজের আদর্শের জন্য লড়াই—সব মিলিয়ে ক্রীড়াজগৎ ও এর গণ্ডি ছাপিয়েও কিংবদন্তি হয়ে ছিলেন আলী।

গতকাল শুক্রবার ৭৪ বছর বয়সে পরলোকে চলে গেছেন তিনি। পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করার পর থেকেই টুইটার ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাবেক ও বর্তমান খেলোয়াড় ও বিখ্যাত ব্যক্তিরা শোক প্রকাশ করছেন।
খেলোয়াড়ি জীবনে তিনি ছিলেন আলীর সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী। কিন্তু বক্সিং রিং ছাড়িয়ে জর্জ ফোরম্যানের জীবনের বড় অংশই হয়ে ছিলেন আলী। বক্সিং কিংবদন্তির মৃত্যুর খবর শুনেই অলিম্পিক সোনা জয়ী ও দুবারের হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন টুইট করেছেন। আলীর সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বীর টুইটে ঝরে পড়ল ভালোবাসা, ‘আলী, ফ্রেজিয়ার ও ফোরম্যান, আমরা সবাই একই সত্তা ছিলাম। আমার একটা অংশ আজ খসে গেল। সবচেয়ে বড় অংশ!’
টুইট করেছেন মাইক টাইসনও। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন কিংবদন্তি এই বক্সার লিখেছেন, ‘ঈশ্বর আজ তাঁর চ্যাম্পিয়নকে নিয়ে যেতে এলেন। চিরবিদায় “গ্রেট ওয়ান”।’
ওয়ার্ল্ড বক্সিং অ্যাসোসিয়েশন বিবৃতিতে লিখেছে, ‘বক্সিং কিংবদন্তি, যিনি সমাজের সঙ্গেও লড়েছেন। সম্মানিত একজন ব্যক্তি। দুর্দান্ত একজন অ্যাথলেট ছিলেন, যিনি কিনা রিংয়ে সব সময় নিজের সবটুকু ঢেলে দিতেন। একজন রোল মডেল, অনেক তরুণের জন্য আদর্শ। সব সময় তাঁর আদর্শের জন্য লড়েছেন। লড়েছেন আরও ভালো সমাজ গড়ার জন্য। পুরো বিশ্ব আজ এমন একজন মানুষের মৃত্যুর জন্য শোক পালন করবে, যিনি বক্সিংয়ে রক্ষণ ও দ্রুতগতির জন্য অলংকৃত হয়ে আছেন। শান্তিতে থাকুন, মোহাম্মদ আলী।’
সাবেক হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন ইভান্ডার হোলিফিল্ড লিখেছেন, ‘আমি খুশি যে মোহাম্মদ আলীকে দেখেছি। যখন ছোট ছিলাম, আট বছর বয়স ছিল, সবাই বলত, আমি আলীর মতো হব।’ আলীর শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করেছেন এভাবে, ‘চাপটা নিজের দিকে টেনে নিয়ে বলে ফেলা “আমিই সবার সেরা”—এতে আপনি নিজেকে এমন এক জায়গায় নিয়ে আসেন, যেখানে মানুষ সহজেই আপনার দিকে আঙুল তুলতে পারে। কিন্তু মোহাম্মদ আলী এটাই করতেন। তিনবার হেভিওয়েটে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ছিলেন তিনি, কী দুর্দান্ত অর্জন! সে সময় সবাই ভাবত, “তিনবার জয়ীকে কে হারাবে?” তবে হারের পরও আবার দাঁড়িয়ে ওঠার জন্য আপনাকে শক্ত হতে হয়। আলী তেমনই ছিলেন।’
ফিলিপাইনের সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন বক্সার ম্যানি প্যাকিয়াও টুইট করেছেন, ‘আজ আমরা একজন কিংবদন্তিকে হারালাম। বক্সিং মোহাম্মদ আলীর প্রতিভা থেকে উপকৃত হয়েছে। তবে তার চেয়েও বেশি তাঁর মনুষ্যত্ববোধ থেকে উপকৃত হয়েছে মানবতা। তাঁর পরিবারের প্রতি আমাদের সহমর্মিতা ও প্রার্থনা। সৃষ্টিকর্তা তাঁকে আশীর্বাদ করুন।’
আমেরিকান রেসলার ও চলচ্চিত্র অভিনেতা জন সিনা লিখেছেন, ‘‘পুরো পৃথিবীতে ‘দ্য গ্রেটেস্টে’র প্রভাব ছিল অতুলনীয়। শান্তিতে থাকুন, মোহাম্মদ আলী!’ ’
বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ও অলিম্পিক স্বর্ণজয়ী যুক্তরাষ্ট্রের নারী ফুটবলার অ্যালেক্স মরগানের টুইট, ‘মোহাম্মদ আলীই ছিলেন প্রথম অ্যাথলেট, যাঁকে দেখে আমি অনুপ্রাণিত হয়েছি। সত্যিকারের একজন চ্যাম্পিয়ন, একজন কিংবদন্তি। শান্তিতে থাকুন মোহাম্মদ আলী।’
অস্ট্রেলিয়ার সর্বকালের সেরা অ্যাথলেট ক্যাথি ফ্রিম্যান আলীকে সম্মান জানিয়েছেন এভাবে, ‘পুরো বিশ্বেই মোহাম্মদ আলী নামটি অসাধারণ কিছুর প্রতীক হয়ে আছে। তাঁর নাম ও গল্পগাঁথা চিরকাল অমর হয়ে থাকবে। শান্তিতে থাকুন।’
সাবেক ইংলিশ ফুটবলার গ্যারি লিনেকার লিখেছেন, ‘সব সময়ের সেরা একজন অ্যাথলেট, যিনি খেলাটার সীমাকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন।’
এ ছাড়া পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ভারতীয় বক্সার ম্যারি কম, এনডিটিভিকে সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘প্রায় সব বক্সারেরই অনুপ্রেরণা হয়ে আছেন তিনি। আমারও। তাঁকে দেখেই প্রথম বক্সিংয়ে আসা, বক্সিং ক্যারিয়ারে তাঁর লড়াই আর পরিশ্রমই আমার প্রেরণা। অনেক অনেক ব্যথিত যে তিনি আর নেই। বক্সিংয়ে তাঁর অবদান আমরা সব সময়ই মনে রাখব। আমি তাঁকে সব সময়ই স্মরণ করব, ধারণ করব হৃদয়ে।’