তিনি এবং ছোট্ট একটা হলুদ বই

জন উইজডেন
জন উইজডেন

১৬৬ বছর আগে আজকের এই দিনেই টেনেটুনে সাড়ে পাঁচ ফুট উচ্চতার এক ফাস্ট বোলার প্রতিপক্ষ ইনিংসের ১০টি উইকেটই নিয়ে নিয়েছিলেন। অনেক বড় কীর্তি। কিন্তু এমন তো নয় যে, তা আর কেউ করেননি।
লেখাটা ‘সে অনেক অনেক দিন আগের কথা...’ দিয়েও শুরু করা যায়।
‘অনেক অনেক দিন’-ই তো, ১৬৬ বছর কি মুখের কথা!
১৬৬ বছর আগে আজকের এই দিনেই টেনেটুনে সাড়ে পাঁচ ফুট উচ্চতার এক ফাস্ট বোলার প্রতিপক্ষ ইনিংসের ১০টি উইকেটই নিয়ে নিয়েছিলেন। অনেক বড় কীর্তি। কিন্তু এমন তো নয় যে, তা আর কেউ করেননি। জিম লেকার ও অনিল কুম্বলে তো টেস্টেই করেছেন। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এই দুজন ছাড়াও আছেন আরও ৮৫ জন। তবে ১৬৬ বছর আগের ওই কীর্তিটা একটা জায়গায় অনন্য। ওই বোলারের ১০টি উইকেটই ছিল ‘বোল্ড’।
ফিল্ডারের কোনো সাহায্য ছাড়া ইনিংসের ১০ উইকেট নিয়েছেন আরও একজন। ৭টি ছিল বোল্ড, বাকি ৩টি এলবিডব্লু। বোলারের নামটা শুনলে আপনার ডন ব্র্যাডম্যানের কথা মনে পড়ে যাবে। এরিক হলিস! টেস্ট ক্রিকেটে শেষ ইনিংসে স্যার ডনকে শূন্য রানে বোল্ড করে দেওয়া যাঁর অমরত্বের সার্টিফিকেট।
যা হোক, এরিক হলিস এই লেখার বিষয় নয়। বিষয় বোল্ডে দশে দশ করা সাড়ে পাঁচ ফুটি ওই বোলার। হলিসের নাম শুনলে চোখে ভাসেন ব্র্যাডম্যান আর ওই বোলারের নাম শুনলে আপনার চোখে ভাসবে হলুদ মলাটের ছোট্ট একটা বই। বইয়ের নাম—উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালমানাক। বোলারের নামও এতেই বলা হয়ে গেল। পুরো নামটা কি তার পরও বলে দেওয়ার দরকার আছে? জন উইজডেন।প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১৮৬টি ম্যাচ খেলেছেন। যাতে ১১০৯ উইকেট। ব্যাটের হাতও একেবারে খারাপ ছিল না। দুটি সেঞ্চুরিই এর প্রমাণ। তবে জন উইজডেনের ক্রিকেট ইতিহাসে অমর হয়ে থাকার কারণ ওসব রান-উইকেট নয়। কারণ ছোট্ট ওই বইটা। যেটিকে বলা হয় ‘ক্রিকেটের বাইবেল’। গত এপ্রিলে যেটির ১৫৩তম সংস্করণ বেরোল।

১৫৩ বছর আগে ও পরে
১৫৩ বছর আগে ও পরে

প্রথম সংস্করণটা কবে, এই হিসাব করার ঝামেলা থেকে আপনাকে মুক্তি দিয়ে দিই। ১৮৬৪ সালে, খেলা ছাড়ার পরের বছরই জন উইজডেন প্রথম বাজারে ছাড়লেন ওই ‘অ্যালমানাক’। নাম দ্য ক্রিকেটার্স অ্যালমানাক, পৃষ্ঠাসংখ্যা ১১২, দাম ১ শিলিং। সর্বশেষ সংস্করণটি ১৫৫৪ পৃষ্ঠার, দাম ৫০ পাউন্ড। এটিতে হয়তো এমন কোনো বিস্ময়ের উপাদান নেই, যা আছে উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালমানাক-এর নিরবচ্ছিন্ন প্রকাশনায়। ১৫৩ বছর ধরে একটা বই নিয়মিত বেরিয়ে যাচ্ছে, দুটি বিশ্বযুদ্ধও তাতে ছেদ টানতে পারেনি—এটা তো রূপকথাকেও হার মানানোর মতো ব্যাপার! বিশ্বযুদ্ধের সময় ক্রিকেট-ট্রিকেট সবই তো শিকেয় উঠেছিল, তার পরও ক্রিকেটের একটা বই কীভাবে প্রতিবছর ঠিকই বেরিয়ে গেল ভাবতে গেলে ভুতুড়ে মনে হয়।
জন উইজডেনের কল্পনা করতে পারারও কথা নয়, মূলত পরিসংখ্যান-নির্ভর তাঁর ওই ‘অ্যালমানাক’ সব ঝড়ঝাপটাকে তুচ্ছ করে এভাবে যুগের পর যুগ টিকে থাকবে! অ্যালমানাক প্রথম প্রকাশের ২০ বছর পর চলে গেছেন ওপারে। কর্কট রোগে মৃত্যু। জীবনের শেষ দিনগুলো বড় কষ্টে কেটেছে। তখন যদি জানতেন, তাঁর বের করা ওই বার্ষিক প্রকাশনা এমন অবিনশ্বর হয়ে থাকবে, একদিন হয়ে যাবে ক্রিকেটের সমার্থক, তাঁর রোগযন্ত্রণা একটু হলেও হয়তো কমত!