মেডেল কামড়ে বোঝালেন ভারতের পদকের ক্ষুধা!

মেডেলে কামড় দিয়ে ভারতের পদকের ক্ষুধাটাই যেন বুঝিয়ে দিলেন সাক্ষী! ছবি: এএফপি
মেডেলে কামড় দিয়ে ভারতের পদকের ক্ষুধাটাই যেন বুঝিয়ে দিলেন সাক্ষী! ছবি: এএফপি

১৩০ কোটি মানুষের দেশ, অথচ কোনো সাফল্য নেই অলিম্পিকে। ভারতেই কিছুদিন ধরে তুমুল আলোচনা হচ্ছিল এ নিয়ে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতেও কত আলোচনা-সমালোচনা। একের পর এক ইভেন্ট থেকে ভারতের জন্য বয়ে আসছিল হতাশার খবর। বাঙালি-কন্যা দীপা দশমিকের ব্যবধানে একটা পদক থেকে বঞ্চিত হলেন জিমন্যাস্টিকসে। অবশেষে রি​ও অলিম্পিকে শেষ প্রান্তে এসে পদকের দেখা পেল ভারত। মেয়েদের কুস্তির ৫৮ কেজি বিভাগে ব্রোঞ্জ জিতেছেন সাক্ষী মালিক।

সাক্ষী
সাক্ষী

পদক–মঞ্চে দাঁড়িয়ে মেডেলে কামড় দিলেন। এমন কামড় দিয়ে উদ্‌যাপন এখন অনেকে করে। সাক্ষীও বিশেষ কিছু ভেবে করেননি হয়তো। তবে এই ছবিটাকে ভেবে নিতে পারেন প্রতীক হিসেবে। অলিম্পিক পদকের জন্য ভারতের কী ভীষণ ক্ষুধা! বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জনবহুল দেশ, অথচ পদক তালিকায় পড়ে থাকতে হয় কত নাম না-জানা দেশের পে​ছনে। আর এবার তো ক্ষুধাটা দিনকে দিন বাড়ছিলই।
সাক্ষী হারিয়ে দিয়েছেন কিরগিজস্তানের আইসুলুন তাইনাইবেকোভাকে। আর তাতেই গড়লেন ইতিহাস। প্রথম ভারতীয় নারী হিসেবে কুস্তিতে পদক জিতলেন তিনি। সব মিলিয়ে সাক্ষী অলিম্পিকে পদক জেতা চতুর্থ ভারতীয় নারী। এর মধ্যে ম্যারি কমকে নিয়ে তো চলচ্চিত্রই বানানো হয়ে গেছে। ২৩ বছর বয়সী সাক্ষীর গল্পটাও​ কিন্তু কম রোমাঞ্চকর নয়। হরিয়ানা রাজ্যের মেয়ে, যে রাজ্যে নারীদের অবাধ চলাফেরাও কয়েক বছর আগে দেখা হতো নেতিবাচক দৃষ্টিতে। সেখানে কুস্তির মতো পুরুষ–আধিপত্যের এক খেলা বেছে নিয়েছেন। সাক্ষীর এই জয়ের গুরুত্ব তাই অনেক। অবহেলিত নারীদের জয়যাত্রাও।

সাক্ষী
সাক্ষী

আজ প্লে অফে মুখোমুখি হওয়ার আগে সাক্ষী জানতেন, এই ইভেন্টে নজর রাখবে পুরো ভারত। একের পর এক পদক-সম্ভাবনা নষ্ট হওয়ার পর আবারও আশা দেখিয়েছেন তিনি। জিতলেই ব্রোঞ্জ, কিন্তু হেরে গেলে কিছুই পাবেন না। ম্যাচটা তাই ছিল ভীষণ চাপের। সে কথাই সাক্ষী বলেছেন, ‘আমার ১২ বছরের স্বপ্ন অবশেষে পূরণ হলো। আমি খুবই খুশি। ম্যাচটা অনেক চাপের ছিল, কারণ এটা ছিল পদকনির্ধারণী ম্যাচ। ভীষণ, ভীষণ চাপের। তবে আমি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম, আমি পারব।’
৫ পয়েন্টে পিছিয়ে থাকা ম্যাচে সাক্ষী ঘুরে দাঁড়িয়েছেন দারুণভাবে। শেষ কয়েক সেকেন্ডেই জিতে গেছেন লড়াই। সাক্ষী তাই হয়ে উ​ঠতে পারেন ভারতের বাকিদের জন্য প্রেরণাও। হারের আগে হার না মানার এক অসাধারণ প্রদর্শনীর সাক্ষ্য!

সাক্ষী
সাক্ষী

অলিম্পিকের মতো আসরে ক্রিকেটপাগল ভারত কখনোই বড় শক্তি ছিল না। হকির মতো খেলার সৌজন্যে নিয়মিত পদক মিললেও সংখ্যাটি আহামরিও ছিল না। কিন্তু গত কয়েকটি আসরের তুলনায় এবার যে সাফল্য মিলছিল না কিছুতেই। যাঁদের ওপর আশার বাজি ধরা হয়েছিল, প্রত্যেকেই হতাশ করেছেন। এমনও শঙ্কা দেখা দিয়েছিল, হয়তো পদক ছাড়াই শেষ করতে হবে এবারের রিও মিশন।
গত লন্ডন অলিম্পিকে ভারত কিন্তু দুটি রুপাসহ ছয়টি পদক জিতেছিল। এর আগের বেইজিং অলিম্পিকে তিনটি পদক জিতলেও সোনা এনে দিয়েছিলেন অভিনব বিন্দ্রা। ভারত সর্বশেষ ১৯৯২ অলিম্পিকে ফিরেছিল খালি হাতে। এবারও সেই লজ্জার সাক্ষী হওয়ার হাত থেকে বাঁচিয়ে দিলেন সাক্ষী।