তিন পাহাড়ের চূড়ায় সাকিব

সাকিব আল হাসানের প্রথম আন্তর্জাতিক উইকেটটা মাঠে থেকেই দেখেছিলেন আবদুর রাজ্জাক। তাঁকে টপকে যাওয়ার রেকর্ডটা অবশ্য দেখতে হলো দূর থেকেই। জাতীয় লিগ খেলতে রাজ্জাক এখন খুলনায়। কাল সাকিবের কীর্তি দেখেছেন হোটেলে বসে।

সাকিব
সাকিব

সাকিবের যেদিন ওয়ানডে অভিষেক, তত দিনে রাজ্জাক খেলে ফেলেছেন ১৮ ওয়ানডে, নামের পাশে ২২ উইকেট। তবে রাজ্জাককে টপকে যাওয়া খুব একটা সহজ হয়নি সাকিবের। রাজ্জাক সর্বশেষ ওয়ানডে খেলেছেন ২০১৪ সালের আগস্টে। জাতীয় দলের দুয়ার বন্ধ হওয়ার আগে এই বাঁহাতি স্পিনারের উইকেট ছিল ২০৭টি। তখন সাকিবের উইকেটসংখ্যা ১৭১। ৩৬ উইকেটের এই দূরত্ব ঘোচাতে সাকিবের লেগেছে ২১ ওয়ানডে।
কাল নিজের প্রথম আর ইনিংসের অষ্টম ওভারে সাবির নূরিকে ফিরিয়ে রাজ্জাকের রেকর্ডটা ছুঁলেন। রেকর্ডটা ভাঙতে অপেক্ষা করতে হলো ইনিংসের ৪১তম ওভার পর্যন্ত। ততক্ষণে আফগানিস্তানও ১৪৪ রানের কী এক দুঃসহ জুটি গড়েছিল বাংলাদেশের জন্য। সাকিবই ভাঙলেন। জুটিটা, রেকর্ডটাও।
এটিই আরেকটি শীর্ষে নিয়ে গিয়ে বসাল তাঁকে। তামিম ইকবালের সঙ্গে সাকিবের এখানেও দারুণ মিল। তামিম ক্রিকেটের তিন সংস্করণেই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক। সাকিবও তিন ধরনের ক্রিকেটেই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। রেকর্ড বইয়ে অনন্য এক অধ্যায়ে জায়গা করে নিলেন সাকিব।
টেস্ট ও ওয়ানডেতে নিজ দেশের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারির তালিকায় আছেন অনেকে। ইংল্যান্ডের জেমস অ্যান্ডারসন, ভারতের অনিল কুম্বলে, পাকিস্তানের ওয়াসিম আকরাম, দক্ষিণ আফ্রিকার শন পলক, শ্রীলঙ্কার মুত্তিয়া মুরালিধরন ও জিম্বাবুয়ের হিথ স্ট্রিক। সাকিবের ক্ষেত্রে যোগ হয়েছে টি-টোয়েন্টিও। দেশের হয়ে তিন সংস্করণে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি হওয়ার প্রথম উদাহরণ তিনি।
আকরাম-কুম্বলেরা অবশ্য টি-টোয়েন্টির আগের যুগের মানুষ। তবে টি-টোয়েন্টি যুগেও তো আর কোনো বোলার নিজ দেশের হয়ে এই কীর্তি গড়তে পারেনি। যাঁর রেকর্ডটা ভাঙলেন, সেই রাজ্জাকই যেন আপ্লুত সবচেয়ে বেশি, ‘আমার রেকর্ডটা তেমন বড় কিছু নয়। হয়তো আমাদের প্রেক্ষাপটে বড়। কিন্তু বিশ্ব ক্রিকেটে তেমন কিছু নয়। সাকিব এটা ভাঙবে আগে থেকেই বোঝা যাচ্ছিল। অবশেষে সে পেরেছে। ও এই রেকর্ডটা যেখানে রেখে যাবে সেটা পরের বোলারদের ভাঙা অনেক কঠিনই হবে।’
সাকিব যখন অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট খেলেছেন তখন থেকেই তাঁকে চেনা রাজ্জাকের। প্রথম কাছ থেকে দেখা ২০০৬ সালে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে। একই বছর আগস্টে হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সাকিবের আন্তর্জাতিক অভিষেক। বাঁহাতি অলরাউন্ডার যে এগিয়ে চলবেন একেকটি সাফল্যের পতাকা ছুঁয়ে, তা রাজ্জাক বুঝেছেন বহু আগেই, ‘ও যখন জাতীয় দলে এল, আমি-মাশরাফি প্রায়ই বলাবলি করতাম, এই ছেলেটা বাংলাদেশের হয়ে অনেক কিছুই করবে। কেন মনে হতো, জানি না। সাকিব কত দূর এগিয়েছে, সেটা এখন দেখতেই পারছেন।’
সাকিবের এমন একটা অর্জনের দিনে দল হেরে গেলে আনন্দটা পরিপূর্ণ হতো না। তা হয়নি, বরং শ্বাসরুদ্ধকর এক জয়ে পূর্ণতা পেয়েছে তাঁর কীর্তি।
২০৮
বাংলাদেশের পক্ষে ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি উইকেট সাকিবের। টেস্ট ও টি–টোয়েন্টিতেও এই রেকর্ড তাঁর