অবিশ্বাস্য এক সিরিজ জয়ের রাতে
ঢাকা থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অভিনন্দনবার্তা এসেছে। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান হয়ে সেই বার্তা সেঞ্চুরিয়নে থাকা বোর্ডের ক্রিকেট পরিচালনা প্রধান জালাল ইউনুসের মাধ্যমে পৌঁছে গেছে বাংলাদেশ দলের কাছে। ততক্ষণে সুপার স্পোর্টস পার্কের ড্রেসিংরুম থেকে ভেসে আসতে শুরু করেছে কোরাস সংগীত, ‘আমরা করব জয়, আমরা করব জয় একদিন...।’
বাংলাদেশ দলের ম্যাচ মানেই এখন শুরু আর শেষে দুটি সংগীত। ম্যাচের শুরুতে তো মাঠে দাঁড়িয়ে জাতীয় সংগীতটা রীতি অনুযায়ীই গাইতে হয়। ম্যাচ শেষে বাংলাদেশ দল গায় ওই ‘আমরা করব জয়...’ গানটা। অনেক বছর ধরে অবশ্য এটাও রীতি দলটার। তবে ইদানীং সেই গান একটু বেশিই গাইতে পারছেন তামিম–সাকিব–মুশফিকরা।
বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশ দল আগেও ম্যাচ জিতেছে, জিতেছে সিরিজও। তবু সেঞ্চুরিয়নের আজকের জয়ের সঙ্গে সেগুলোর কোনো তুলনাই চলে না। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে পূর্ণ শক্তির দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে সিরিজ জয় এই সফরের আগে যে কারও কল্পনাতেও আসেনি!
পুরো ম্যাচেই দর্শকেরা যেভাবে ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ চিৎকারে ক্রিকেটারদের মনোবল বাড়িয়ে গেছেন, সেটির জন্য ম্যাচ শেষে তামিমও বলতে বাধ্য হয়েছেন, ‘মনে হচ্ছে আমরা যেন মিরপুরেই খেলছি!’
সেঞ্চুরিয়নেই সিরিজের প্রথম ম্যাচে জেতার পর পাখা মেলতে শুরু করে স্বপ্নটা। ওয়ান্ডারার্সের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে সে স্বপ্ন সাময়িক হোঁচট খেলেও আজ আবারও সেঞ্চুরিয়নের আকাশ–বাতাস প্রকম্পিত করে তুলেছে বাংলাদেশের বিজয়োল্লাস। এমন জয়ের পর বিসিবি তাৎক্ষণিকভাবে বড় পুরস্কার ঘোষণা করেছে দলের জন্য। দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ জয়ের জন্য বিসিবির পক্ষ থেকে ৩ কোটি টাকা পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে এসেছে আরেক খবর, সাকিব আজ স্থানীয় সময় রাত সোয়া নয়টায় বাংলাদেশগামী বিমানে উঠেছেন। পরিবারে এত ঝামেলার মধ্যেও সব ভুলে খেলায় আত্মনিবেদনের জন্য সাকিব প্রশংসা পেতেই পারেন।
আর বাংলাদেশের জয়ে প্রশংসা পেতে পারেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রবাসী বাংলাদেশি দর্শকরাও। সিরিজের প্রথম ম্যাচ থেকে শুরু করে আজ শেষ ম্যাচেও তাঁরা যেভাবে তামিম ইকবালের দলকে সমর্থন দিয়ে গেছেন, সেটি এককথায় অবিশ্বাস্য! বিশেষ করে কাল পুরো ম্যাচেই দর্শকেরা যেভাবে ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ চিৎকারে ক্রিকেটারদের মনোবল বাড়িয়ে গেছেন, সেটির জন্য ম্যাচ শেষে তামিমও বলতে বাধ্য হয়েছেন, ‘মনে হচ্ছে আমরা যেন মিরপুরেই খেলছি!’
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রবাসী বাংলাদেশিরাও রাতটাকে স্মরণীয় করে রাখতে নানা আয়োজনে ব্যস্ত। জয়ের উল্লাসধ্বনি দিতে দিতে ঘরে ফেরা দর্শকদের অনেকেই যে যাঁর মতো জয়ের রাতটা উদ্যাপনের আয়োজন করছেন।
স্টেডিয়ামের নিরাপত্তাকর্মীদের ফাঁকি দিয়ে দর্শকেরা তাঁদের অভিনন্দন পৌঁছে দিতে চেষ্টা করছেন ক্রিকেটারদেরও। ড্রেসিংরুমের বারান্দায় বাংলাদেশ দলের জার্সি পরা কাউকে দেখলেই ছবি তোলার চেষ্টা দেখা গেছে। ক্রিকেটাররাও এই ভালোসার প্রতিদান দিয়েছেন সমর্থকদের নিজেদের ক্যাপ–জার্সি উপহার দিয়ে। এর আগে ট্রফি নিয়ে মাঠ প্রদক্ষিণ করে দর্শকদের অভিনন্দনের জবাব দিয়েছেন তাঁরা।
মাঠে বসে বাংলাদেশ দলের প্রায় সব খেলাই দেখেন জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার আতহার আলী খান। পরশু থেকেই তাঁর মুখে একটাই কথা, ‘শেষ ম্যাচটা জিততে হবে। আমাদেরকে সিরিজ জিততে হবে। ছেলেদের মধ্যেও সেই জেদটা দেখিছ।’
আজ সত্যি সত্যি সিরিজ জয়ের পর স্বাভাবিকভাবেই আনন্দে আত্মহারা আতহার, ‘বাংলাদেশ দল আজ যেভাবে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারাল, সেটা এককথায় অবিশ্বাস্য! তবে ছেলেরা ধারাবাহিকভাবে যে রকম ভালো খেলছে, এই জয় তাদের প্রাপ্যই ছিল।’
হয়তো আতহার আলীর কথাটাই ঠিক—জয়টা এবার প্রাপ্য ছিল বাংলাদেশ দলের। খেলাটা দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে বলেই গায়ে চিমটি কেটে দেখতে হয়, অবিশ্বাস্য জয়ের এই রাতটা আসলেই সত্যি তো!