অবিশ্বাস্য ম্যাচে রোহিতদের হারাল কোহলির বেঙ্গালুরু

সুপার ওভারে দলকে জিতিয়ে ফিরছেন এবি ডি ভিলিয়ার্স ও বিরাট কোহলি।ছবি: আইপিএল

আইপিএলে এসব হচ্ছে কী! কাল শারজার ছোট মাঠে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের ২২৩ রান তাড়া করে জিতল রাজস্থান রয়েলস। আজ দুবাইয়ের বড় মাঠে ২০১ রান তাড়া করতে গিয়ে ম্যাচ গেল সুপার ওভারে। যেখানে জিতেছে বিরাট কোহলির রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু।

সুপার ওভারে তরুণ বেঙ্গালুরু ফাস্ট বোলার নবদীপ সাইনি করলেন দুর্দান্ত বোলিং। খরচ করলেন মাত্র ৭ রান। সেই রান নিয়েই জিততে জিততে হেরেছে মুম্বাই। মুম্বাইকে ফাস্ট বোলার যশপ্রীত বুমরা শেষ বল পর্যন্ত জয়ের আশা দেখিয়েছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বুমরার লো ফুল টস ফ্লিক করে বাউন্ডারি পাঠিয়ে ২ পয়েন্ট নিশ্চিত করে কোহলির দল।

অথচ ২ পয়েন্টের জন্য এত কষ্ট করতে হতো না বেঙ্গালুরুর। আগে ব্যাট করে ২০১ রান করা বেঙ্গালুরু বোলিংয়ে ইনিংসের ১৫ ওভার পর্যন্ত ছিল দুর্দান্ত। একপর্যায়ে মুম্বাইয়ের জিততে ওভার প্রতি ২০ এর বেশি রান দরকার ছিল। শেষ ২৪ বলে ৮০ রান দরকার ছিল জিততে। সেখান থেকে অবিশ্বাস্য ইনিংস খেললেন কাইরন পোলার্ড ও তরুণ ঈশান কিষান।

যেই পোলার্ড প্রথম ১০ বলে ১১ রান করেছিলেন, সেই পোলার্ড ফিফটি করেন ২০ বলে! ১৭ ও ১৮তম ওভারে দুই লেগ স্পিনার অ্যাডাম জাম্পা ও যুজবেন্দ্র চাহালের ১২ বলে আসে ৪৯ রান! দুবাইয়ের শিশিরে যেন দুই স্পিনার বলই ধরতে পারছিলেন না। আর সেই সুযোগটা একদম লুফে নেয় মুম্বাইয়ের দুই ব্যাটসম্যান। দুই ওভার আগে যা মনে হচ্ছিল অনেক দূরের পথ, সেখান থেকে পোলার্ড ও ঈশানের বিধ্বংসী ব্যাটিং রানটাকে একদম হাতের নাগালে নিয়ে আসে।

৯৯ রান করেছেন মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের ইশাণ কিষান।
ছবি: আইপিএল

শেষ দুই ওভারে দরকার ছিল ৩১ রান। ভেজা বলে সমস্যা হচ্ছিল দুই পেসারেরও। ইয়র্কার লেংথটা যেন খুঁজেই পাচ্ছিলেন না কেউ। তবু সাইনি ১৯তম ওভারে ১২ রান দিলে শেষ ওভারে জয়ের আশা নিয়ে ইসুরুকে বল তুলে দেন কোহলি। কিন্তু বাঁহাতি পেসারের কোণ পেয়ে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ঈশানকে যেন ছক্কার নেশায় পেয়ে বসে।

ক্লান্ত শরীর নিয়েই শুরুর বলে পর দুই ছক্কা মেরে নিজে পৌঁছে যান ৯৯ রানে, দলকে নিয়ে যান জয়ের খুব কাছে। কিন্তু ওভারের পঞ্চম বলে এসে আউট হন বাউন্ডারিতে ক্যাচ দিয়ে। পোলার্ড তখনো ক্রিজে। মুম্বাইয়ের জয়ের জন্য শেষ বলে দরকার ছিল ৫ রান, কিন্তু ছক্কা মারার চেষ্টায় চার মেরে ম্যাচ সুপার নিতে সক্ষম হন পোলার্ড।

তবে বেঙ্গালুরুর ফিল্ডারদের পিচ্ছিল হাত ভাগ্য মুম্বাইয়ে এত দূর আসতে দিয়েছে। ১৫ রানে ক্যাচ পড়েছে পোলার্ডের। ৮৬ রানে সুযোগ দেন ঈশানও। তবু কপাল ভালো। সুপার ওভারে শেষ হাসিটা শেষ পর্যন্ত বেঙ্গালুরুই হেসেছে।

সেটাও হয়েছে তরুণ পেসার সাইনির জন্য। সুপার ওভারে হতে শুকনো বল হাতে পেয়ে ইয়র্কার লেংথটা খুঁজে পেয়েছিলেন এই তরুণ ফাস্ট বোলার। তাতেই ভাগ্য খুলে গেল। একটু আগের বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান পোলার্ড বড় ছক্কা মারতেই পারলেন না। বুমরাও প্রায় জিতিয়ে দিচ্ছিল মুম্বাইকে, সেই ইয়র্কার দিয়েই। কিন্তু কোহলি ও ডি ভিলিয়ার্সের অভিজ্ঞতা জিততে দেয়নি মুম্বাইকে।

শেষ বলে চার মেরে ম্যাচ টাই করার পর পোলার্ডকে অভিনন্দন ক্রনাল পান্ডিয়ার (ডানে)।
ছবি: আইপিএল

তবে বেঙ্গালুরুর জয়ের ভিত হয়তো দল নির্বাচন থেকেই গড়ে দেওয়া হয়। কোহলির দলের কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নিতেই হতো। ডেল স্টেইন ভালো করছিলেন না। উমেশ যাদব শুধুই নতুন বলের বোলার। ডেথ ওভারে আসলেই রান বন্যা বইয়ে দেন। দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ দুই পেসারের একজনও যদি ম্যাচের তিন অবস্থায় ধারাবাহিক থাকতে না পারেন, তাহলে অধিনায়কের কাজটা কঠিন হওয়াটাই স্বাভাবিক। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর অধিনায়ক বিরাট কোহলির অবস্থা কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের বিপক্ষে ম্যাচে ঠিক তাই হয়েছিল।

বোলিং আক্রমণের বাজে অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে পরিবর্তন দরকার ছিল কোহলির দলের। আজ মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের বিপক্ষে উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান জস ফিলিপিকে বাদ দিয়ে অ্যাডাম জাম্পাকে দলে নেয় বেঙ্গালুরু। স্টেইনের মতো বড় নাম বেঞ্চে বসিয়ে সুযোগ দেয় শ্রীলঙ্কান বাঁহাতি পেসার ইসুরু উদানাকে। সবচেয়ে বড় পরিবর্তনটা করতে হয়েছে এবি ডি ভিলিয়ার্সকে। ফিলিপি বেঞ্চে বসায় দীর্ঘদিন পর কিপিং গ্লাভস তুলে নিতে হয়েছে ডি ভিলিয়ার্সের। আর তাতেই যেন বদলে গেল দলের চেহারা।