
তাসকিন আহমেদের জন্য অপেক্ষায় ছিল বাংলাদেশের ক্রিকেট। তাসকিন নিজেও ছিলেন অপেক্ষায়—কবে গায়ে তুলবেন সাদা পোশাক? লাল বল হাতে ছুটে যাবেন আগুন ঝরাতে। ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি খেললেও হাঁটুর চোটের কারণে যে তৈরি ছিলেন না দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটের জন্য।
সেই মাহেন্দ্রক্ষণ এল গত জানুয়ারিতে নিউজিল্যান্ড সফরে। ওয়েলিংটনে টেস্ট অভিষেকের পর তাসকিন এর মধ্যে খেলে ফেলেছেন চারটি টেস্ট। কিন্তু আগুন কি ঝরাতে পারছেন?
৬ ফুট ২ ইঞ্চি লম্বা। বলে গতির ঝড় তুলতে পারেন। তাসকিনকে টেস্ট ক্রিকেটে দেখার অপেক্ষাটা বেশি ছিল এসব কারণেই। কিন্তু টেস্টে তাঁর বোলিংয়ে প্রত্যাশিত খুনে মেজাজ দেখা যায়নি। উইকেটও মাত্র ৭টি, এক ইনিংসে সর্বোচ্চ উইকেট মাত্র ২টি। অবশ্য এটাও ঠিক, মাত্র চার টেস্টের পারফরম্যান্স কোনো বোলারকে বিচারের জন্য যথেষ্ট নয়। তাসকিনের সামনে পড়ে আছে অনন্ত ভবিষ্যৎ। তিনি নিজে যেমন এখন তাকিয়ে আসন্ন অস্ট্রেলিয়া সিরিজের দিকে।
চট্টগ্রাম পর্বের প্রস্তুতিতে কালই প্রথম অনুশীলন করলেন ক্রিকেটাররা। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে দাঁড়িয়েই তাসকিন জানালেন অস্ট্রেলিয়া সিরিজের জন্য তাঁর মুখিয়ে থাকার কথাটা। ঢাকা ও চট্টগ্রামের দুটি টেস্ট সামনে রেখে আলাদা প্রস্তুতিও নিচ্ছেন ২২ বছর বয়সী পেসার, ‘বিশেষভাবে কাজ করছি নিশানা নিখুঁত করা নিয়ে। বল মুভ করানো শেখারও চেষ্টা করছি। আর গতির সঙ্গে তো কোনো আপসই নেই। জোরে বল আমাকে করতেই হবে। আমার বিশ্বাস, এই সবই একদিন আমার হবে।’
নিজের সামর্থ্যের ওপর আস্থার অভাব নেই। মাত্র চার টেস্টের অভিজ্ঞতা নিয়েও তাই বলতে পারছেন, ‘যারা পারে, তারা সব কন্ডিশনেই পারে। আমাকেই জানতে হবে কোন কন্ডিশনে কীভাবে বল করতে হয়, কীভাবে সফল হতে হয়।’
জিনিসটা তাসকিন ঠেকেই শিখেছেন বলা যায়। এখন পর্যন্ত যে চারটি টেস্ট খেলেছেন, কোনোটিতেই আগের টেস্টের কন্ডিশনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারেননি। প্রথম দুটি টেস্ট নিউজিল্যান্ডের ওয়েলিংটন আর ক্রাইস্টচার্চে, পরের দুটি ভারত ও শ্রীলঙ্কায়। এবার খেলবেন ঘরের মাঠে। সে জন্য তাসকিনরা নিচ্ছেন ভিন্ন প্রস্তুতি, ‘আমার ধারণা, এই কন্ডিশনে রিভার্স সুইং একটা অস্ত্র হতে পারে। আমরা সেটা নিয়ে কাজ করছি। শিখতে চেষ্টা করছি, কীভাবে বল রিভার্স করানো যায়। এখানে উইকেট পেসসহায়ক কম থাকবে। পেসারদের অনেক ধৈর্য ধরতে হবে। পুরোনো বলে কারুকাজ বাড়াতে হবে।’
এই প্রস্তুতিতে তাসকিনের সবচেয়ে বড় সাহসের নাম কোর্টনি ওয়ালশ। এত কাছে পাওয়ার পরও তাঁর মতো কিংবদন্তির কাছ থেকে কিছু নিতে না পারাটাকে ব্যর্থতাই মনে করেন তাসকিন। ওয়ালশের সঙ্গটা তাই কাজে লাগাতে চেষ্টা করেন পুরোপুরি, ‘সুযোগ পেলেই আমি গিয়ে তাঁর সঙ্গে গল্প করি। কীভাবে এত উইকেট পেয়েছেন, কীভাবে নিজেকে সামলেছেন...সেসব জানতে চাই।’
অস্ট্রেলিয়া সিরিজ দিয়ে শুরু আন্তর্জাতিক মৌসুমে দেশের বাইরেও অনেক টেস্ট খেলবে বাংলাদেশ। ভিন্ন কন্ডিশনে পেস বোলিংয়ের মন্ত্রটাও তাই যতটা সম্ভব আয়ত্তে আনতে চান তাসকিন, ‘একটা সময় ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা পেস বোলারদের স্বর্গ ছিল। এখন নেই। পিচগুলো ব্যাটসম্যানদের পক্ষে। পেসারদের কাজ অনেক কঠিন হয়ে গেছে। আগের মতো প্র্যাকটিস করলে এখন আর হবে না। আলাদা কিছু করতে হলে আলাদা অনুশীলনও করতে হবে।’
টেস্টের বোলিংয়ের জন্য তাসকিনের কাছে দেশের কন্ডিশনটাও ‘নতুন’-ই হওয়ার কথা। ‘ভিন্ন’ কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চ্যালেঞ্জটা তাই শুরু হবে অস্ট্রেলিয়া সিরিজ থেকেই। টেস্টের বোলার হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার চ্যালেঞ্জ তো আছেই।