১৭০ ইনিংস। ৬৯০৬ রান। গড় ৪৩.৪৩। শতক ১৯টি, অর্ধশতক ৩৪টি।
২৩ ইনিংস। ১১৮৫ রান। গড় ৫৬.৪২। শতক ৪টি, অর্ধশতক ৫টি।
প্রথমটি আজহার আলীর ৯২ ম্যাচে গড়ানো টেস্ট ক্যারিয়ারের পরিসংখ্যান। পরেরটি শুধু অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১২ ম্যাচের। এর আগের ১১ ম্যাচই খেলেছেন দেশের বাইরে, দেশের মাটিতে প্রথমটিতেও অস্ট্রেলিয়াকে সামনে পেয়ে আজহার আলীর ব্যাট চুপ থাকল না। রাওয়ালপিন্ডিতে আজ শেষ পর্যন্ত ১৮৫ রান করেছেন আজহার। দিন শেষে যখন পাকিস্তান ব্যাটসম্যান বলছিলেন ‘অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে রান করতে সব সময়ই ভালো লাগে আমার’— কথাটাকে মোটেও বাড়াবাড়ি মনে হয় না।
টেস্ট ক্যারিয়ারের চতুর্থ দ্বিশতকের ১৫ রান আগে আজহার থেমেছেন, এরপর আজ আর বেশিক্ষণ ব্যাটিং করেনি পাকিস্তান। তবে তাতেই বড় একটা সংগ্রহ দাঁড়িয়ে গেছে স্বাগতিকদের।
আগের দিনে টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম শতক পাওয়া ইমাম-উল-হকের দেড় শ ছাড়ানো ইনিংসের সঙ্গে আজহার দুই শ ছোঁয়া ইনিংসে দ্বিতীয় দিনে আজ ৪ উইকেটে ৪৭৬ রান নিয়ে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করেছে। আলোকস্বল্পতায় দিনের খেলা ১৫ ওভার আগে শেষ হওয়ার সময়ে অস্ট্রেলিয়ার রান ছিল বিনা উইকেটে ৫। ফলো-অন এড়াতেই এখনো ২৭২ রান দরকার অস্ট্রেলিয়ার।
দিনের ১৮ ওভার বাকি থাকার সময়েই ইনিংস ঘোষণার পেছনে পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজমের হয়তো পরিকল্পনা ছিল, দিন শেষের আগে অস্ট্রেলিয়ার দু-একটা উইকেট তুলে নেবেন। আলোকস্বল্পতা তা হতে দিল না।
যা হয়েছে, তাতেও অবশ্য তৃপ্তি কম হওয়ার কথা নয় বাবরদের। ১ উইকেটে ২৪৫ রান নিয়ে দিন শুরু করার সময়ই পাকিস্তানের ভরসা ছিল, আগের দিন শেষেই দ্বিতীয় উইকেটে ইমাম-আজহারের ১৪০ রানে অবিচ্ছিন্ন জুটি আজ আরও অনেকটা এগিয়ে দেবে তাদের। আজহার ও ইমাম হতাশ করেননি। প্রথম সেশনে কোনো উইকেটই হারায়নি পাকিস্তান, ততক্ষণে ৩০০ রান পার হয়ে গেছে। মধ্যাহ্নবিরতিতে পাকিস্তান গেছে ১ উইকেটে ৩০২ রান নিয়ে।
ততক্ষণে ইমাম ১২ টেস্টে গড়ানো ক্যারিয়ারের প্রথম শতকটিকে দেড় শ-তে পরিণত করে ফেলেছেন। ৬৪ রান নিয়ে দিন শুরু করা আজহার অবশ্য তখনো শতক থেকে ছিলেন ৫ রান দূরে। বিরতি থেকে ফেরার কিছুক্ষণ পর জুটিতে ২০০ রান হয়ে গেল। তার কিছুক্ষণ পর আজহারের শতকও।
এতে পাকিস্তানের টেস্ট ইতিহাসে একটা দারুণ অবস্থানেও পৌঁছে গেছেন আজহার। ১৯ শতক নিয়ে পাকিস্তানের টেস্ট ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি শতক হাঁকানো ব্যাটসম্যানদের তালিকায় এখন পাঁচ নম্বরে তিনি। ওপরের চারটি নাম দেখুন—ইউনিস খান, ইনজামাম-উল-হক, মোহাম্মদ ইউসুফ ও জাভেদ মিয়াঁদাদ। সবার ওপরে থাকা ইউনিসের ৩৪ শতকের রেকর্ড ছুঁতে অবশ্য ৩৭ বছর বয়সী আজহার সময়কে পাশে পাচ্ছেন না!
টেস্টে পাকিস্তানের হয়ে সবচেয়ে বেশি শতক
এর কিছুক্ষণ পরই অবশ্য একই ওভারে দুই দলে ব্যর্থ দুই রিভিউর দ্বিতীয়টি শেষে হাসির উপলক্ষ পেল অস্ট্রেলিয়া। ১২১তম ওভারের দ্বিতীয় বলে প্রথমে আজহার আলীর বিরুদ্ধে রিভিউ নিয়েও তাঁকে ফেরাতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া, তার তিন বল পর রিভিউ নিল পাকিস্তান। এবারও রিভিউতে ব্যর্থতা, তাতে ৮৬.৫ ওভার আর ২০৮ রান পর অস্ট্রেলিয়ার অবশেষে উইকেট প্রাপ্তির আনন্দ। কামিন্সের বলে এলবিডব্লু ইমাম। ৩৫৮ বলের, ১৬ চার আর ২ ছক্কায় ১৫৭ রানের ইনিংসের সমাপ্তি।
এরপর অবশ্য আবার অস্ট্রেলিয়ার একটা উইকেটের জন্য অপেক্ষার শুরু! তৃতীয় উইকেটে বাবর আজমের সঙ্গে ১০১ রানের জুটি হলো পাকিস্তানের। বাবর ৩৬ রানেই আউট হয়ে গেছেন, তবে তার মধ্যে পাকিস্তানের ৪০০ রান পেরিয়ে গেছে। পাকিস্তান হয়তো তখন আজহারের দ্বিশতক আর দলের স্কোর ৫০০ ছোঁয়ার অপেক্ষায়, সেটি হলেই হয়তো ইনিংস ঘোষণার পরিকল্পনা ছিল তাদের। কিন্তু ১৫৬তম ওভারে আজহার আউট হয়ে গেলেন। দলের রান তখনও ৪৫০ থেকে ৮ দূরে।
আজহার আউট হওয়ার কারণেই কিনা, বেশিক্ষণ আর অপেক্ষা করেনি পাকিস্তান। দিন শেষে আলোকস্বল্পতা এসে বাধা হয়ে দাঁড়ানোয় অস্ট্রেলিয়ার উইকেট ফেলতে না পারাই হতে পারে বাবরদের একমাত্র অতৃপ্তি। অস্ট্রেলিয়ার মারনাস লাবুশেন তো প্রচ্ছন্ন হুমকিই দিয়ে রাখলেন, ‘আমরা জানি আমরা এখান থেকে ম্যাচ ঘুরিয়ে ফেলতে পারব।’
দাপুটে দুই দিন শেষে পাকিস্তানের আরেকটি অতৃপ্তি হতে পারে ইনিংসের রানরেট। আগের দিন রানরেটটা ৩-এর নিচে ছিল, আজ ইনিংস ঘোষণার সময়ও রানরেট ছিল ২.৯৩। শেষ পর্যন্ত এই টেস্টে অস্ট্রেলিয়াও ব্যাট হাতে দারুণ লড়াই করলে, টেস্টটা কোনো ফল না দেখলে পাকিস্তানের প্রথম ইনিংসের ধীরগতিই হতে পারে সেটির মূল কারণ।
অস্ট্রেলিয়া অবশ্য আজ যে বিক্ষিপ্ত মন নিয়েও খেলেছে, সেটিও কম নয়! আগের দিন রডনি মার্শের মৃত্যুর খবর শুনে দিন শুরু করেছিল, দিন শেষে এল মাত্র ৫২ বছর বয়সে অস্ট্রেলিয়ার আরেক কিংবদন্তি শেন ওয়ার্নের চলে যাওয়ার খবর। কিংবদন্তি লেগ স্পিনারের মৃত্যুর শোক স্পর্শ করেছে রাওয়ালপিন্ডি টেস্টকেও। আজ দ্বিতীয় দিনের খেলা শুরুর আগে ওয়ার্নের মৃত্যু ও পেশোয়ারে মসজিদে বোমা হামলায় নিহতের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করে দুই দল।