উপস্থাপকের সঙ্গে বিরোধে লাইভ টক শো ছাড়লেন শোয়েব আখতার
পাকিস্তানিদের মনমেজাজ এখন অনেকটাই ফুরফুরে। দল জয়ের ধারায় আছে, বিশ্বকাপের সম্ভাব্য বিজয়ীদের তালিকায় অনেকেই পাকিস্তানের নাম নিচ্ছে। সব মিলিয়ে পাকিস্তানের সাবেক খেলোয়াড়েরাও বেশ হালকা মেজাজেই বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও টিভি অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ মতামত দিচ্ছেন।
শোয়েব আখতারই যেমন—উত্তরসূরিদের কল্যাণে তাঁর সময়টাও কাটছে বেশ ভালো। চিন্তাহীনভাবে নিজের মতামত প্রকাশ করে যাচ্ছেন বিভিন্ন জায়গায়—সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে।
গতকাল নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের পর পাকিস্তানি চ্যানেল পিটিভি স্পোর্টস একটি আলোচনা অনুষ্ঠানের (টক শো) আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শোয়েব আখতার, কিংবদন্তি ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যান স্যার ভিভ রিচার্ডস, সাবেক ইংলিশ ব্যাটসম্যান ডেভিড গাওয়ার, সাবেক পাকিস্তানি পেসার আকিব জাভেদ, সাবেক পাকিস্তানি অধিনায়ক রশিদ লতিফ প্রমুখ। অনুষ্ঠানটির উপস্থাপক ছিলেন নোমান নিয়াজ। উপস্থাপকের সঙ্গে বিরোধের জেরেই অনুষ্ঠান ত্যাগ করেন শোয়েব।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে গতকাল দুর্দান্ত বোলিং করেছেন পাকিস্তানি ফাস্ট বোলার হারিস রউফ। চার ওভার বোলিং করে মাত্র ২২ রানে তুলে নেন নিউজিল্যান্ডের চার-চারটি উইকেট। ম্যাচসেরার পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি। পিটিভি স্পোর্টসের লাইভ অনুষ্ঠানে যথারীতি হারিসের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন শোয়েব। হারিসের উন্নতির জন্য কৃতিত্ব দেন পাকিস্তান সুপার লিগের (পিএসএল) ফ্র্যাঞ্চাইজি লাহোর কালান্দার্সকে। লাহোর খেলোয়াড়দের পেছনে অনেক সময় ব্যয় করে বলেই হারিস রউফের এত উন্নতি হয়েছে বলে দাবি করেন শোয়েব।
কিন্তু উপস্থাপক নিয়াজ এ পর্যায়ে বেরসিকের মতো থামিয়ে দেন শোয়েবকে। আলোচনায় নিয়ে আসেন শাহিন শাহ আফ্রিদিকে। জানান, আফ্রিদি পাকিস্তানের অনূর্ধ্ব-১৯ দলে আলো ছড়িয়ে মূল দলে জায়গা করে নিয়েছেন।
শোয়েবের ব্যাপারটা ভালো লাগেনি। আলোচনায় আবারও তিনি হারিসের প্রসঙ্গ তোলার চেষ্টা করেন। জানান, তিনি আফ্রিদির কথা বলছেন না, বলছেন হারিস রউফের কথা। এই সময় নিয়াজ একটা চমকপ্রদ কাণ্ড ঘটিয়ে বসেন। শোয়েবকে লাইভ অনুষ্ঠান ছেড়ে চলে যাওয়ার উপদেশ দেন এ উপস্থাপক, ‘আপনি অতি চালাক এবং অভদ্রের মতো আচরণ করছেন। আপনার উচিত এই অনুষ্ঠান ছেড়ে চলে যাওয়া’ বলেই অনুষ্ঠানে বিজ্ঞাপন বিরতি দেন নিয়াজ।
বিরতি থেকে ফিরে শোয়েব ও নিয়াজ নানা কথা বলে পরিস্থিতি হালকা করা চেষ্টা করলেও বোঝা যাচ্ছিল, কোনো এক জায়গায় সুর কেটে গিয়েছে। শোয়েবকে অনুষ্ঠানের বাকি সময় অপ্রস্তুত দেখা যায়। অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে তাঁর সঙ্গে ওই আচরণ করার জন্য নিয়াজকে দুঃখ প্রকাশ করতে বলেন শোয়েব। কিন্তু নিয়াজ তেমনটা করেননি। শোয়েবও ব্যাপারটা আর নিতে পারেননি। সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে অনুষ্ঠান ত্যাগ করেন সাবেক এই পেস তারকা।
পরে টুইটারে নিজের এই সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা দেন শোয়েব, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ কিছু ভিডিও যেহেতু ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে, তাই আমার মনে হয় ঘটনাটি খুলে বলা উচিত। নোমান আপত্তিকরভাবে আমাকে অনুষ্ঠান ছেড়ে চলে যেতে বলেছেন। এটি ছিল আমার জন্য খুবই অপমানজনক, বিশেষ করে যখন স্যার ভিভ রিচার্ডস, ডেভিড গাওয়ার এবং আমার সমবয়সী আরও কয়েকজন আমার পাশে বসা।’
উপস্থাপক নিয়াজ যে তাঁর কাছে ক্ষমা চাননি, এই বিষয়েও টুইট করেন শোয়েব, ‘অনেক সিনিয়রসহ লাখো মানুষ এই অনুষ্ঠান দেখছিল। ফলে, আমি সবাইকে লজ্জার হাত থেকে রক্ষা করতে চেয়েছিলাম। আমি আর নোমান, আমরা দুজনে মিলেই ঠিক করেছিলাম যে তিনি অনুষ্ঠানে ভদ্রভাবে আমার কাছে ক্ষমা চাইবেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। তাই চলে যাওয়া ছাড়া আমার আর কোনো উপায় ছিল না।’
বেশ কয়েক বছর ধরেই টুইটার ও ইউটিউবে সরব শোয়েব আখতার। প্রায়ই নানা মন্তব্য করে আলোচনায় আসেন তিনি। এবার আলোচনায় এলেন এ অনুষ্ঠান ত্যাগ করে।