সাকিব আল হাসানের কথা ধরুন। টেস্ট খেলেছেন ৪৪টি, ওয়ানডে ১৬৩টি। যত টেস্ট খেলেছেন, তার চেয়ে প্রায় চার গুণ বেশি খেলেছেন ওয়ানডে। সেই অর্থে মুমিনুল নিজেকে ভাগ্যবান ভাবতে পারেন। তাঁর ওয়ানডে আর টেস্ট ম্যাচের সংখ্যা প্রায় কাছাকাছি। এমনকি তিনি যতগুলো টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন, তার তিন গুণেরও বেশি খেলেছেন টেস্ট!
মুমিনুলের এটি আসলে সৌভাগ্য নয়; দুর্ভাগ্য। পুরো ২০১৬ সালের ১২টি মাসে তাঁর খেলা আন্তর্জাতিক ম্যাচের সংখ্যা মাত্র দুটি। সতীর্থরা যখন ওয়ানডেতে দুর্দান্ত সব সাফল্য উদযাপন করেন, মুমিনুল সেই উৎসব থেকে অনেক দূরে। তিনি যে কেবলই টেস্ট ব্যাটসম্যান!
এ নিয়ে কম কথা, বা কম লেখা হয়নি। জাতীয় দলে মুমিনুলের জায়গা পাওয়াও এখন বেশ কঠিন। কিন্তু এসব মাথায় না রেখে তিনি নিজে যা করতে পারেন, সেটাই করে চলেছেন—সুযোগ পেলেই নিজের রঙিন ব্যাটিংয়ের ঝলকটা দেখিয়ে দেওয়া। যেমন দেখাচ্ছেন এবার। আজ পেলেন টানা দ্বিতীয় ফিফটি। এবারের বিপিএলে মুমিনুলের মোট ফিফটি তিনটি। টুর্নামেন্টে যা যৌথ সর্বোচ্চ। টুর্নামেন্টে মেরেছেন ২৭টি চার। আজকের প্রথম ম্যাচের পর সেটি আসরের সর্বোচ্চ। ৬ ইনিংসে ২১৬ রান, আসরের চতুর্থ সর্বোচ্চ। এমনকি দলে সাব্বির রহমান থাকার পরও রাজশাহী কিংসের সর্বোচ্চ রান তাঁর ব্যাটেই। স্ট্রাইক রেট ১২২.০৩।
এবারের বিপিএলে খেলছেন ওপেনারের ভূমিকায়। টেস্ট ব্যাটসম্যানের তকমা এঁটে যাওয়া একজন ব্যাটসম্যান টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ওপেনার, মুমিনুল এই বৈপরীত্য মিলিয়ে যাচ্ছেন দুর্দান্তভাবে। এই প্রমাণের তাগিদে—আমি কেবলই টেস্টের নই।
এবারের বিপিএলে শাহরিয়ার নাফীসের পর দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে পেলেন তিন ফিফটি। গত ম্যাচে খুলনা টাইটানসের বিপক্ষে করেছিলেন। এর আগে ফিফটি করেছেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের বিপক্ষে। ৬৪, ৫৩ ও ৫৬ রানের তিনটি ইনিংসে মুমিনুল কখনোই তেড়েফুঁড়ে মারেননি। ধুমধাড়াক্কা ক্রিকেট খেলেই যে রান তুলতে হবে, সে-ই বা কে বলেছে।
ওয়ানডেতেই তাঁকে অচল ভাবা হয়, টি-টোয়েন্টিতে তো নৈব চঃ! সেই তিনি বিপিএলের মতো আসরে রানের শীর্ষ পাঁচে থাকেন, মুমিনুলকে নিয়ে সেই টেস্ট-তত্ত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হবেই। মাত্র ২টি ছক্কা? সেটার জবাব হয়ে আছে ২৬টি চার। এর সঙ্গে আছে স্ট্রাইক সচল রাখতে একের পর এক সিঙ্গেল।
বেশ অনেক দিন হলো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সীমিত ওভারের সংস্করণে ব্রাত্য হয়ে আছেন মুমিনুল। টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে—দুই সংস্করণের ক্রিকেটেই তাঁর সর্বশেষ স্মৃতি দুটি বিশ্বকাপ। শেষ আন্তর্জাতিক ওয়ানডেটি খেলেছেন গত বছর অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপে। টি-টোয়েন্টি খেলেছেন তারও এক বছর আগে। ঘরের মাঠে ২০১৪-এর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে।
১৯ টেস্টের ক্যারিয়ারের পাশে ওয়ানডে ২৬টি, টি-টোয়েন্টি মাত্র ৬টি! কিছুদিন আগেই বলেছেন, সীমিত ওভারের ক্রিকেট নিয়ে আলাদা করেই পরিশ্রম করছেন, করছেন কষ্ট। বিপিএলে তাঁর ব্যাটিং দেখে মনে হচ্ছে কষ্টের ফল পেতে শুরু করেছেন। এবার জাতীয় দলের রঙিন পোশাকটাও নিয়মিত গায়ে ওঠার স্বপ্নও তিনি দেখতেই পারেন।