এমন রেকর্ড চায়নি বাংলাদেশ

শুরুর এই আনন্দ ম্যাচের শেষে আর থাকেনিছবি: এএফপি

টি-টোয়েন্টিতে কোনো ফেবারিট দল নেই, নিজের দিনে সেরা খেলা দলটাই জিতে যেতে পারে।

কথাটায় কোনো নতুনত্ব নেই, বহুল ব্যবহৃত এক কথা। যেকোনো ম্যাচের আগে শোনা যায়। অনেকেই অনেকবার এ কথা বলেছেন। শক্তিতে পিছিয়ে থাকা দল হলে তো কথাই নেই। গতকাল বাংলাদেশ ম্যাচের আগে স্কটল্যান্ডের কোচ শেন বার্জারের মুখ থেকে এমন কথা শুনে তেমনটাই ঠেকছিল।

বিশ্বকাপের প্রথম পর্বে গ্রুপ- ‘বি’তেফেবারিট বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচেই কঠিন পরীক্ষা, তবু হাল ছাড়েননি বার্জার। বাংলাদেশের বিপক্ষে জয় ছাড়া কিছুই ভাবছে না তাঁর দল, এই প্রচ্ছন্ন হুমকি কাল করে দেখিয়েছে শিষ্যরা। ওমানের মাসকটে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৬ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। যে হার দিয়ে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত রেকর্ড হয়ে গেল বাংলাদেশের।

গ্রিভস-ওয়াটের জুটি স্কটল্যান্ডকে উদ্ধার করে
ছবি: এএফপি

ম্যাচের শুরুতেই সাইফউদ্দিনের ধাক্কা, মেহেদী ও সাকিবের ঘূর্ণি; ৫৩ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে খাদের কিনারে চলে গিয়েছিল স্কটল্যান্ড। নির্ধারিত ২০ ওভার শেষ করতে পারা আর টেনেটুনে ১০০ রান করাই মনে হচ্ছিল স্কটিশদের জন্য বহুদূরের কোনো লক্ষ্য। তখন দলের হাল ধরে ক্রিস গ্রিভস। মার্ক ওয়াটের সঙ্গে ৫১ রানের জুটি গড়ে প্রথমে ১০০ রান পার করে দিয়েছেন। ২৮ বলে ৪৫ রানে দলকে এনে দেন ১৪০ রানের লড়াকু স্কোর। জবাবে শুরু থেকেই ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশ ওভার ফুরিয়ে যাওয়ার আগে ১৩৪ রান করতে পেরেছিল। জয় তখনো ৭ রান দূরে।

এই অপ্রত্যাশিত হারে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথম দল হিসেবে ২০ ম্যাচে হারের স্বাদ পেয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। ২০০৭ সাল থেকে কাল পর্যন্ত মোট ২৬টি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। এই ২৬ ম্যাচে বাংলাদেশ জিতেছে পাঁচটিতে, পরিত্যক্ত হয়েছে একটি। আর বাদবাকি ২০ ম্যাচেই বাংলাদেশের ভাগ্যে হার লেখা ছিল।

বাংলাদেশি সমর্থকদের হতাশ করেছে দল
ছবি: এএফপি

জয়–পরাজয়ের অনুপাতের হিসাব নিলে বাংলাদেশের থেকে বাজে অবস্থায় আছে শুধু পাপুয়া নিউগিনি, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও হংকং। পাপুয়া নিউগিনি ও আরব আমিরাত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলা সব কটি ম্যাচেই হেরেছে। ওদিকে ছয় ম্যাচ খেলে হংকং হেরেছে পাঁচটিতেই। তাদের একমাত্র জয় ২০১৪ সালে চট্টগ্রামে বাংলাদেশের বিপক্ষে।

বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি হারের রেকর্ড বাংলাদেশেরই ছিল। ২০০৭ সালে জয় দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করে পরের চার ম্যাচেই হেরেছিল বাংলাদেশ। ২০০৯ থেকে ২০১২—এই তিন বিশ্বকাপে দুটি করে ম্যাচ খেলে সব কটিতেই হার নিয়ে মাঠ ছেড়েছে বাংলাদেশ। ২০১৪ সালে প্রথম পর্বে এক হারের পর দ্বিতীয় পর্বে চার ম্যাচেই হেরেছে বাংলাদেশ। ২০১৬ বিশ্বকাপেও দ্বিতীয় পর্বের সব ম্যাচে অর্থাৎ চার ম্যাচেই পরাজয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছেন সাকিব আল হাসানরা। এবার তো বিশ্বকাপ শুরুই হলো হার দিয়ে। আর সে হারই প্রথম দল হিসেবে ২০টি হারের রেকর্ড এনে দিল বাংলাদেশকে।

বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা কাল হতাশ করেছেন
ছবি: আইসিসি টুইটার

এদিক থেকে বাংলাদেশের ঠিক পরেই আছে ইংল্যান্ড। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মোট ৩২ ম্যাচ খেলে তারা জয় পেয়েছে ১৫টিতে, হেরেছে ১৬ ম্যাচে। বাংলাদেশ, ইংল্যান্ডের পরই আছে পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। বিশ্বকাপে পাকিস্তান হেরেছে ১৪ ম্যাচে (৩৪ ম্যাচে), ২৯ ম্যাচ খেলা অস্ট্রেলিয়ার হার ১৩ ম্যাচে। অস্ট্রেলিয়ার মতোই ১৩ ম্যাচে হারলেও নিউজিল্যান্ড ম্যাচ খেলেছে একটি বেশি।

২০০৭ সালে প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জয় দিয়ে ভালো কিছুরই ইঙ্গিত দিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত সংস্করণের বিশ্বকাপ বাংলাদেশকে শুধু হতাশাই উপহার দিয়েছে। বাংলাদেশ কি পারবে এই বিশ্বকাপে সেই হতাশা কাটিয়ে উঠতে?
সময়ই বলে দেবে।