কেনিয়া–দুঃস্মৃতি নয়, ওয়ান্ডারার্সে ফিরুক উইন্ডিজ–সুখস্মৃতি
কেমন ছিল গতকাল বাংলাদেশের টিম মিটিংটা? ইতিহাস ডাকছে তামিম ইকবাল-সাকিব আল হাসানদের। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে তাদের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ জয়ের পর এখন প্রথমবারের মতো সিরিজ জয়ের হাতছানি বাংলাদেশ দলের সামনে। এমন একটি ম্যাচের আগে খেলোয়াড়দের মনের আকাশে রোমাঞ্চের রেণু ওড়ার কথা, বয়ে যাওয়ার কথা অন্য রকম এক শিহরণ!
গতকালের টিম মিটিংটা একটু কল্পনা করুন। জয় আমরাই পাব, শুধু মনোযোগ ধরে রেখে জায়গামতো বল করতে হবে—এই বলতে বলতে হয়তো মিটিংয়ে ঢুকেছেন তাসকিন আহমেদ-শরীফুল ইসলামরা। মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো তামিমকে অভয় দিচ্ছিলেন, ভাই, আমি আমার কাজটা করে দেব ঠিকঠাক। সাকিব হয়তো মাহমুদউল্লাহ আর মুশফিকের দিকে তাকিয়ে বলছিলেন, টেনশনের কিছু নেই!
কিন্তু ম্যাচের আগের টিম মিটিংয়ে একটা ভয়ও কি কাল ঢুকে গেছে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের মনে?
ভয়! ভয় কেন ঢুকবে?
তা বোঝার জন্য বাংলাদেশের টিম মিটিংয়ের কল্পনায় ফিরতে হবে আবার। কোচ রাসেল ডমিঙ্গো হয়তো ব্যাটসম্যান আর বোলারদের কাজ বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন ছক কষে। পেস বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ড, স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথ আর পাওয়ার হিটার কোচ অ্যালবি মরকেলও যে যাঁর মতো কথা বলেছেন, খেলোয়াড়দের বুঝিয়ে দিয়েছেন তাঁদের কার কী ভূমিকা। কিন্তু টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদের যখন কিছু বলার সময় এসেছে, কী বলেছেন তিনি?
আজকের ম্যাচের ভেন্যু জোহানেসবার্গের ওয়ান্ডারার্সে একটা দুঃস্মৃতি আছে সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাহমুদের। এই ওয়ান্ডারার্সে এর আগে মাত্র একটি ওয়ানডে খেলেছে বাংলাদেশ, ২০০৩ বিশ্বকাপে। খালেদ মাসুদের নেতৃত্বে সেই দলে খেলা খেলোয়াড়দের মধ্যে কেউ তামিম ইকবালের এই দলে নেই। কিন্তু সেই ম্যাচে ১ উইকেট পাওয়ার পর ৩ রান করা খালেদ মাহমুদ তো দলের সঙ্গেই আছেন। সে ম্যাচে বাংলাদেশকে অনায়াসে হারিয়ে দিয়েছিল বিশ্বকাপে চমক উপহার দেওয়া কেনিয়া।
এ ম্যাচের আগে খালেদ মাহমুদের মনে কেনিয়া-অঘটনের ছবি ভেসে না উঠে পারে না! বিশ্বকাপে বাংলাদেশের শেষ ম্যাচ ছিল সেটি। দেশ থেকে যাওয়ার আগে বিশ্বকাপে প্রথম ও শেষ ম্যাচ জেতার প্রায় নিশ্চয়তা দিয়ে গিয়েছিল দল। প্রথম ম্যাচে কানাডার কাছে অবিশ্বাস্য হারের কালিমা লেপনের শেষ সুযোগ ছিল ওয়ান্ডারার্সে। কিন্তু কেনিয়ার ২১৭ রান তাড়া করতে নেমে ৪৭.২ ওভারে বাংলাদেশ অলআউট হয়ে গেছে ১৮৫ রানে! সেই ছবি ভেসে উঠতেই তিনি হয়তো বলেছেন, ছেলেরা, আমাদের সাবধান থাকতে হবে!
এরপর হয়তো সাকিবের কথা বলার পালা এসেছে। সেঞ্চুরিয়নে প্রথম ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় তো আগেই বলেছেন, টেনশনের কিছু নেই, উপভোগের মন্ত্রে এগিয়ে যেতে হবে। কিন্তু খেলাটাকে উপভোগ করতে হলে মাঝেমধ্যে কিছু অনুপ্রেরণার দরকার হয়। কিছু সুখস্মৃতি থাকা চাই। ওয়ান্ডারার্সে বাংলাদেশ দলের সেই স্মৃতিও তো আছে। সাকিব হয়তো সেটি মনে করিয়ে দিয়ে বলেছেন, ‘ভয় কিসের! ২০০৭ বিশ্বকাপে আমরা তো এই মাঠেই টি-টোয়েন্টিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো দলকে হারিয়েছি।’
ক্রিস গেইল, মারলন স্যামুয়েলস, রামনরেশ সারওয়ান, ডোয়াইন ব্র্যাভো সমৃদ্ধ ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ফেবারিটদের মধ্যেই ছিল। সেই দলকে ১৬৪ রানে বেঁধে রেখে বাংলাদেশ ম্যাচ জিতেছিল ১২ বল হাতে রেখে, ৬ উইকেটে। সেই ম্যাচের একাদশে খেলা দুজন, মুশফিক আর সাকিব এই দলেও আছেন। মুশফিক সেই ম্যাচে তেমন কিছু করার সুযোগ পাননি, তাঁর যে ব্যাটিংই করতে হয়নি। কিন্তু ৪ ওভারে ৩৪ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মারদাঙ্গা ব্যাটিং লাইনআপকে বশে রেখেছিলেন সাকিবই। ২৭ বলে ৬১ রান করে অবশ্য সেই ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতেছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল।
ওয়ান্ডারার্সে এরপর আরও দুটি টি-টোয়েন্টি খেলেছে বাংলাদেশ, দুটিতেই হেরেছে। কিন্তু ইতিহাসের সামনে দাঁড়িয়ে দুঃস্মৃতি কে মনে করবে! হৃদয় খুঁড়ে কি কেউ বেদনা জাগাতে চায়! লড়াইয়ের ময়দানে গিয়ে সব যোদ্ধাই চায় বিজয় আর সুখের স্মৃতি মনে করতে। প্রেরণা খুঁজতে যে মানুষ সব সময় ইতিবাচক ঘটনার দিকে ফিরে তাকায়। বাংলাদেশ দলও নিশ্চয়ই আজ ওয়ান্ডারার্সে নামার আগে ২০০৭ সাল আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জয়ের দিকেই ফিরে তাকাচ্ছে। সমর্থকেরা চাইবেন ওয়ান্ডারার্সে ফিরুক ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্মৃতি, কেনিয়ার নয়!