কেন বাদ পড়লেন ব্রড–অ্যান্ডারসন

জেমস অ্যান্ডারসন ও স্টুয়ার্ট ব্রডকে বাদই দিয়ে দিল ইংল্যান্ডফাইল ছবি

বড় একটা ঝাঁকুনি লেগেছে ইংলিশ ক্রিকেটে। ইংল্যান্ডের সাবেক ব্যাটসম্যান মার্ক রামপ্রকাশের ভাষায়, ‘এটি ইংলিশ ক্রিকেটে রীতিমতো ভূমিকম্প’।

অ্যাশেজে নিদারুণ ব্যর্থতার পর ইংল্যান্ড ক্রিকেটে যে ভাঙা-গড়ার খেলা চলছে, তারই শিকার ইংলিশ ক্রিকেটের সেরা দুই বোলার! ১৬৯ ম্যাচে ৬৪০ আর ১৫২ ম্যাচে ৫৩৭ উইকেট পাওয়া দুই পেসার জেমস অ্যান্ডারসন আর স্টুয়ার্ট ব্রডকে দল থেকে ছেঁটে ফেলেছে ইংল্যান্ড। এই সিদ্ধান্ত নাকি অ্যাশেজ ব্যর্থতার পর দলকে নতুন করে ঢেলে সাজানো, ভবিষ্যতের দিকে তাকানো!

সন্দেহ নেই, ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের জন্য দল ঘোষণার মুহূর্তে অ্যান্ডারসন ও ব্রডের বাদ পড়াটা অনেকের কাছেই চমক। যে অ্যাশেজে ব্যর্থতার কথা বলে ইংলিশ ক্রিকেট ‘সামনে’ তাকাচ্ছে, সেখানে এই অ্যান্ডারসন-ব্রড কি খুব খারাপ করেছিলেন? ইংল্যান্ডের হয়ে টেস্ট ক্রিকেটে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির তালিকায় দুজন এক ও দুয়ে। গত বছর ইংল্যান্ড যখন টেস্ট ক্রিকেটে ধুঁকছে, তখনো দুজনের সম্মিলিত শিকারসংখ্যা ছিল ৩৯ উইকেট। এক দশকের বেশি সময় ধরে ইংল্যান্ডের বোলিং আক্রমণকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তাঁরা। অ্যাশেজেও দুজনকে ঘুরিয়ে–ফিরিয়ে খেলানো হয়েছে। ব্রিসবেনে প্রথম টেস্টে দুজনের কাউকেই দলে না রাখার ব্যাপারে কোচ ক্রিস সিলভারউডের সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে সেই তাদেরই কিনা বাদ দিয়ে দিল ইংল্যান্ড!

টেস্টে ৫৩৭ উইকেট ব্রডের
ছবি: এএফপি

অ্যাশেজের পর ইংলিশ ক্রিকেটে বইছে পরিবর্তনের হাওয়া। কোচ সিলভারউডকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সরে গেছেন দলের ব্যাটিং কোচ গ্রাহাম থর্প। ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকেও বিদায় নিয়েছেন অ্যাশলে জাইলস। তবে এই ধাক্কাটা যে ব্রড আর অ্যান্ডারসনের গায়েও লাগবে, সেটি বোধ হয় ভাবতে পারেননি অনেকে। কেবল তাঁরাই নন, অ্যাশেজ স্কোয়াডের আরও বেশ কয়েকজন ক্রিকেটারকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের জন্য বিবেচনা করা হয়নি—জস বাটলার, ডেভিড মালান, স্যাম বিলিংস, ররি বার্নস, ডম বেস, হাসিব হামিদ।

ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব নিয়েছেন সাবেক অধিনায়ক অ্যান্ড্রু স্ট্রাউস। কোচের দায়িত্ব পেয়েছেন পল কলিংউড। দুজন একসঙ্গে বসেই কঠিন সব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সঙ্গে ছিলেন দলের হেড স্কাউট জেমস টেলর ও অধিনায়ক জো রুট।

টেস্টে সর্বাধিক উইকেট জেমস অ্যান্ডারসনের
ছবি: রয়টার্স

স্ট্রাউসের বার্তা খুব পরিষ্কার, ‘নতুন করে শুরু করতে নির্বাচকমণ্ডলীকে দলে কিছু পরিবর্তনের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। তাদের মূল লক্ষ্য বিদেশের মাটিতে ভালো করার দল তৈরি করা।’ এখনই কঠিন কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় বলে মনে করেন স্ট্রাউস, ‘আমরা মনে করি সময় এসেছে কিছু ব্যাপারে কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার। আমরা একটা সীমারেখা টানতে চাই। অ্যাশেজ পরাজয়ের পর সামনের দিকে তাকাতে চাই। নতুন কিছু ক্রিকেটারকে দলে এনে প্রক্রিয়াটাকে গতিশীল করতে চাই।’

অ্যাশেজ হারার পর ওলট–পালট চলছে ইংলিশ ক্রিকেটে
ছবি: এএফপি

ব্রড ও অ্যান্ডারসনের ক্যারিয়ার এখনই শেষ হয়ে যায়নি বলেই জানিয়েছেন স্ট্রাউস, ‘ব্রড এবং অ্যান্ডারসনকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে না নেওয়ার মানে এই নয় যে তাঁদের ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে। আমরা মনে করেছি, দলে নতুন বোলিং প্রতিভাদের ব্যবহার করাটা এ মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ। আগের কয়েকজন খেলোয়াড়ের দায়িত্বে কিছু যোগ করারও সময় এসেছে। স্থায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও হেড কোচ নিয়োগের পর তাঁরাই সিদ্ধান্ত নেবেন, তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে। পুরো প্রক্রিয়াটাই ইংল্যান্ড টেস্ট দলকে দুর্দান্ত একটা দলে পরিণত করার। কঠোর পরিশ্রমের শুরু এখন থেকেই।’

সাবেক ক্রিকেটার মার্ক রামপ্রকাশের মতে, ‘ব্রড আর অ্যান্ডারসনকে বাদ দেওয়াটা ক্রিকেটীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ভূমিকম্প হয়ে যাওয়ার মতো একটা ব্যাপার।’ তাঁর কাছে বিষয়টি অপ্রত্যাশিত, ‘আমি ভাবতেও পারিনি যে ব্রড আর অ্যান্ডারসন বাদ পড়বে। অ্যাশেজে ইংল্যান্ড বাজে করেছে ব্যাটিংয়ের কারণে। আমার মনে হয় মনোযোগটা সেদিকেই দেওয়া উচিত ছিল। আমার কাছে তো মনে হচ্ছে দুই সেরা বোলারই বলির পাঁঠা হলেন। আমি আশা করি, এই সিদ্ধান্ত তাদের ক্যারিয়ারের সমাপ্তি টানবে না।’